বেশীর ভাগ মানুষের মতে ইন্টারনেটে প্রেম আসলে virtual একটা জিনিস,বেশীর ভাগই সফলতা পায় না।আমার নিজেরও এমন ধারনা। কিন্তু আমার নিজে দেখা কিছু জুটি এখনো আল্লার রহমতে আর দশটা সামনাসামনি প্রেম করা জুটিদের চেয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। তেমনই একটা জুটির গল্প বলবো।অনেক দিন ধরে লিখবো বলে লিখা হচ্ছে না।
কাহিনী বলার আগে একটু সাবধান কইরা নেই..।এই কাহিনী পড়ে যদি কোন ব্লগার ভাই-বোন অতি উৎসাহিত হয়ে অনলাইনে প্রেম কইরা ধরা খান তার জন্য লেখিকা দায়ী নহে..।
অনেক আজাইরা পেচাল পারলাম এইবার মূল কাহিনীতে আসি...সে অনেক অনেক দিন আগের কাহিনী..In the year of 2001,University’ র 3rd অথবা 4th semester এর কথা (এই যুগের ফাঁসবুকের সাথে তুলনা করলে পুরাই Back dated যামানা....।) তখন ছিলো বিডি চ্যাট,বাংলাক্যাফে,ইয়াহু মেসেন্জা আর এমএসএন মেসেন্জা। তখন ঘরে ঘরে আর হাতে হাতে ইন্টারনেট ছিলোনা,ইন্টারনেট ইউস করতে মিনিটে পয়সা গুনতে হতো..
ধুমাইয়া বিডি চ্যাট,বাংলাক্যাফেতে চ্যাট করতাম, তয় বুইজা শুইনা
আমার যে ফ্রেন্ডটার কাহিনী বলতে যাচ্ছি সে ছিলো নারায়নগন্জের পোলা। সে তখন জার্মানে পি এইচ ডি করছিলো ।প্রথম প্রথম ওর সাথে কথা বলে মেজা খারাপ হতো, লোকাল ভাষা লিখে চ্যাট করতো.।লাইক আপনে পোলা না মাইয়া, চ্যাট করতে ইচছা হইলে আসেন চ্যাটাই আর নাইলে রাস্তা মাপেন....।হা হা হা..।এই টাইপ কথা।কিভাবে কিভাবে জানি ওর সাথে আমাদের খুব ভাব হয়ে গেল। যদিও সে আমাদের চাইতে বয়সে বড় ছিলো বাট আমাদের ৪ ফ্রেন্ডের সাথে তুইতুকারী রিলেশন ছিলো।
অনেক দুষ্টামী করে চ্যাট করতাম, সেইসব দিনগুলো এখনো মিস করি।
একদিন ও আমাদেরকে জানালো সে একটা মেয়ে সাথে অনেক দিন ধরে চ্যাট করে, মেয়েটার সাথে চ্যাট করতে তার ভালো লাগে আর অন্য রকম একটা ফিলিংস হয় লাইক গার্লফ্রেন্ড। আমরা তখন ওকে বললাম তোর মনে যদি রিয়েলী কিছু থাকে দেন মেয়েটার একটা ছবি পাঠাতে বল আর ডিটেলস ইনফরমেশন জানার চেষ্ঠা কর মেয়েটা কেমন।
মেয়েটা ডিটেলস ইনফরমেশন দিলো ঠিকই বাট কিছুতেই ছবি পাঠাতে রাজি হলো না।আমিতো দুষ্টু বালিকা ছিলাম তাই আমার ফ্রেন্ডকে ক্ষেপাতাম এই বলে দেখ গিয়া কোন ২/৩ বাচ্চার মা তোর সাথে মজা মারতেছে। আমার ফ্রেন্ডটা একদিন খুব ক্ষেপে যেয়ে ঐ মেয়েকে বললো তুমি যদি ছবি না পাঠাও দেন বাংলাদেশে আমার কয়েকটা পিচ্চি ফ্রেন্ড আছে তাদের সাথে দেখা করো। আমি ওদের কাছ থেকেই সব জেনে নিবো।মেয়েও রাজি হয়ে গেলো।আমার ফ্রেন্ডটা মেয়েটার মোবাইল নাম্বার আমাদেরকে দিয়ে দিলো যোগাযোগ করে দেখা করার জন্য।আমরা মেয়েটার সাথে কথা বলে একটা ডেট ঠিক করলাম এবং ঐ ডেটে ধানমন্ডির Grill hurt এ দেখা করতে গেলাম। মাইরে দেখেতো আমরা থ মেরে গেলাম ,ব্যাপক সুন্দরী মেয়ে, হাঁটুর নিচ অবদি চুল,লম্বায় ৫ফিট ৭ ই, গায়ের রঙ ফর্সা আর চেহার সুরুতও মাসাল্লাহ
ঐদিকে আমরা ফ্রেন্ডটার অবস্হা খারাপ ও একবার আমাদেরকে ফোন দেয় আর একবার মেয়েটাকে ফোন দেয় বাট আমরা কেউই ফোন ধরিনি,ওকে একটু টেনশনে ফেলে মজা করার জন্য।
রাতের বেলা অনলাইনে যেয়ে শুনি বেচারা সারাদিন ধরে ওয়েট করছিলো আমাদের সাথে কথা বলে আপডেট নেয়ার জন্য। আমি কোন কথা না বলে খালি হাসির সাইন পাঠাতে লাগলাম, আমার ফ্রেন্ডটা রেগে গিয়ে আমাকে গালাগালি শুরু করলো। বললো ঐ বস্তির মেয়েদের মত এতো হাসাহাসি শুরু করছিস কেন এক থাবড়া দিয়া কানা পট্টি লাল কইরা ফালামু, আপডেট দিলে দে নাইলে রাস্তা মাপ( ওর কথার ধরনই এমন ছিলো ফ্রেন্ডদের সাথে, কোন মানুষ হঠাৎ করে শুনলে বুঝবে না যে ও এতো ওয়েল এডুকেটেড আর গুড রেজাল্ট করা একটা ছেলে, সামনাসামনি অবশ্য সে খুব স্বল্পভাষী)।
আমাদের ঐ দিনের কথোপকপন...।
আমি: তুই রাস্তা মাপ, যে মেয়ের সাথে দেখা করে আসলাম ঐ মেয়ে তোর মত চানাচুরওয়ালার জন্য না।
ফ্রেন্ড:মানে কি মাইয়া কি বেশী বুড়ি?
আমি: আরে না.।মাইয়া ব্যাপক সুন্দরী তোর মত কাইল্লারে তার পাশে মানাবে না
ফ্রেন্ড:পিডাইয়া আমি তর হাড্ডি ভাংগমু খালি একবার দেশে আইসা লই, এখন ঝাইড়া কাশ সব খুইল্লা ক..
এরপর আর দুষ্টামি না করে সব জানালা।তারপরে ওরা ২ জন একজন আরেকজনের সাথে আরো ক্লোজলী কথা বলা শুরু করলো।তারপরের দিন গুলো ভালোই কাটছিলো, মেয়েটা আমাদের সাথে Occasionally পহেলা ফাগুন,পহেলা বৈশাখ,ঈদ,ফ্রেন্ডের ভায়ের বিয়ে..সব Program গুলোতে Attain করা শুরু করলো, ও আমাদের group এর একজন হয়ে গেল।
হঠাৎ একদিন মেয়েটা আমাদের জানালো ওর বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করছে, আমরা তখন ওকে Advice করলাম আমাদের ফ্রেন্ডটার কথা বাসায় জানাতে। এতে হিতে বিপরীত হলো, মেয়েটার ভাই ওকে আমার ফ্রেন্ডটার সাথে যোগাযোগ করতে মানা করে দিলো এই বলে যে এ সব অনলাইন প্রেমের কোন ভিত্তি নাই সব বোগাস।বাইরে থাকা ছেলেরা ঐখানে একটা বিয়ে করে আবার দেশে এসে একটা বিয়ে করে।
ভাইটা মেয়েটার Mobile আর অনলাইনে কথা বলা Restricted করে দিলো।
আমার ফ্রেন্ডটা একদিন মেয়েটার ভাইয়ের সাথে কথা বলে ওর family কে বিয়ের Proposal দিয়ে পাঠাতে চাইলো বাট ভাইয়া কিছুতেই রাজী হলো না, উল্টা মেয়েটার অফিস যাওয়া অফ করে দিলো।পুরাই সিনেমা...
এরপর আমার ফ্রেন্ডটা তার Family সাথে কথা বলে ঠিক করলো ও দেশে এসে, কাছের ২/৩ জনকে নিয়ে সরাসরি মেয়েটার বাসায় যেয়ে মুখোমুখি কথা বলে সব ঠিক করবে।দরকার হলে কিছু প্রিপারেশন নিয়ে যাবে যাতে সেদিনই বিয়ে করতে পারে।
সে সময় আমাদের সেমিস্টার ফইনাল চলছিলো, তাই কারো কোন খোজ নিতে পারতেছিলাম না। একদিন ভোর ৫ টার দিকে একটা Unknown Number থেকে ফোন আসলো, ধরবো না ধরবো না করেও ফোনটা ধরলাম ওপাশ থেকে কান্না কান্না গলায় একটা মেয়ে বললো দোস্ত আমি মৌ, আমি ধরমর করে উঠে বসলাম, বললাম তুই এতো ভোরে। ও বললো আমি আমার কাজিনের ফোন থেকে কল দিসি, তোর পাগলা ফ্রেন্ড তো গতকালকে দেশে চলে আসছে।ভাইয়ার সাথে অনেকবার কথা বলছে ফোনে শেষে বাসায় আসার অনুমতি দিছে বাট আমাকে বলে দিছে নেগেটিভ ধরে রাখতে।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো তোর ফ্রেন্ড আবার আমাকে দুপুরে দেখা করতে বলছে,তাই কি করবে বুঝতেছে না। আমি বললাম Think positive and be positive, আজকে আমাদের পরীক্ষা আছে তাই কিছু করতে পারবো ন। মেয়েটাকে যে ভাবেই হোক বের হয়ে ফ্রেন্ডটার সাথে দেখা করতে বলি আর রাতে আমাদের সব কিছু জানাতে বলি। পরীক্ষা দিতে গেলাম ঠিকই বাট মাথায় ওদের কথা ঘুরতে লাগলো।রাত ১০টার পরেও যখন কোন খবর পাচ্ছিলাম না সাহস করে মেয়েটার মোবাইলে কল দিলাম ভয়ে ভয়ে, যদি ভাইয়া ধরে। ঐ পাশের পুরুষ কন্ঠে হ্যালো শুনে আমি চিৎকার করে উঠলাম, শয়তান এই ফোন তোর কাছে কেন। আমার ফ্রেন্ডটা বললো আমার বউয়ের ফোন আমি ধরবো না তো কে ধরবে? বুঝে গেলাম ফাজিলটা সত্যই সত্যই বিয়ে করে ফেলছে। এতো ভালো লেগেছিলো সেদিন।
পরে কথা বলে জানলাম আমার ফ্রেন্ডটা মামা, চাচা, মা আর ভাবীকে নিয়ে মেয়েটার বাসায় হাজির হয়।সামনাসামনি কথা বলে Educational background আর family background দেখে ভাইয়া আর অমত করতে পারেনি তাই ১ সপ্তাহের টাইম চেয়ে ছিলো বিয়ের আয়োজনের জন্য কিন্তু আমার ফ্রেন্ড নাছোর বান্দা সে সেদিনই বিয়ে করবে এবং বউ সাথে করে নিয়ে যাবে।পরে বহু তর্কবিতর্কের পরে বিয়ে করে, বউ সাথে নিয়ে নারায়নগন্জে ফেরে। পরের দিন রাতে নারায়নগন্জের একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ রিসিপশন করে তাড়াহুরো করে। আমরা যেতে পারিনি, একেতো নারায়নগন্জে তাও আবার রাতে আর পরের দিন একটা পরীক্ষাও ছিলো।
৪/৫ দিন পরে আমরা সবাই ধানমন্ডীর ডমিনাস পিজায় দেখা করি,সেদিন রাতেই ওরা দার্জিলিং যাচ্ছিলো কারণ ফ্রেন্ডটা ওর থিসিসের কাজ ফেলে চলে এসেছিলো আর ওকে তাড়াতাড়ি ফেরত যেতে হবে।
বিয়ের ২২ দিন পরে আমরা ফ্রেন্ডটা জার্মানিতে চলে যায়।এর ৮ মাস পরে ওর বউকে নিয়ে যায়।বিয়ের পরেও মেয়েটা একটু ভয়ে ভয়ে থাকতো যদি আমার ফ্রেন্ডটা ওকে তার কাছে না নিয়ে যায় আর মেয়েটার কাজিন গুলো ওকে আরো ভয় দেখাতো , তোর জামাই ইচ্ছে করে নিচ্ছে না এই সব হাবিজাবি বলে। সবাইর ধারনা ভুল করে দিয়ে আমার ফ্রেন্ডটা ৮ মাস পরে ঠিকই ওর বউকে ওর কাছে নিয়ে গেলো। ১ বছর পরে ওদের ১টা ছেলে হয়। ছেলেটার বয়স যখন ১১ মাস তখন ওরা একবার দেশে আসছিলো।বাবুর জন্মদিনে দাওয়াত করেছিলো আমাদের সবাইকে।অনেক দিন পরে সবাই খুব আড্ডা দিয়েছিলাম।আল্লার রহমতে ভালোই আছে ওরা।ছেলেটা এখন স্কুলে পড়ে।এখন আগের মত এত যোগাযোগ করতে পারিনা সবাই বিজি বাট অনেক দিন পরে পরে হলেও খোজ খবর রাখি।
আমার ৪ ফ্রেন্ডের একজন এখন লন্ডনে থাকে সেখানে লাসট মে মাসে বিয়ে করছে।Last week ফোন করে জানালো সে জানুয়ারীতে আসবে ওর জামাইকে নিয়ে যার সাথে আমাদের এখনো দেখা হয়নি, আর একটা খুশির খবর হলো উপরের কাহিনি ওয়ালা ফ্রেন্ডটাও একই সময় আসবে।অনেকদিন পরে আবার সবার দেখা হবে। একটা দুঃখের কাহিনিও আছে, আমাদের ৪ ফ্রেন্ডের একজন আবার তার অনলাইন প্রেমিককে বিয়ে করার জন্য আমাদের সাথে যোগযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।ঐ কাহিনি অন্যদিন বলবো।
ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে আমার কাহিনী পড়ার জন্য।
সবাই দোয়া করেন যাতে জানুয়ারীতে ঠিকঠাক মতো সবাই মিট করতে পারি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


