somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেই আমার দিন কেটে যায়। আমার মত যারা পথশিশু তাদেরও একইভাবে দিন কাটে। আমাদের জন্য কারোর কোন মায়া দয়া নেই। সারাদিন অনেক রকমের মানুষের মুখোমুখি হই আমরা। তবে হ্যা সব মানুষ আবার এক না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সত্যিই অনেক ভালো। যারা ভাল মানুষ তাদের জন্য অনেক দোয়া করি সব সময় তারা যেন দীর্ঘজীবি হয়।

সাধারণ মানুষ সারাদিন অনেক বাজে খরচ করে কিন্তু পথশিশুদের একটি পয়সা দিতে চায় না। একটি পয়সার জন্য কতই না মিনতি করতে হয় সেটা কেবল পথশিশুরাই জানে। আমাদেরও তো একটু ভালভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে। আমাদেরও তো একবেলা ভাল খাবার খেতে ইচ্ছে করে। তবে আমাদের এই ইচ্ছে গুলো পূর্ণতা পায় না। অপূর্ণই রয়ে যায়। আমাদের দোষ একটাই, আমরা পথশিশু। পথশিশুদের জন্য কার কি আসে যায়। পথশিশুরা না খেয়ে মারা গেলে, শীতবস্ত্রের অভাবে মারা গেলে দেশের টিভি চ্যানেলে নিউজ হয়। বড় বড় পত্রিকায় নিউজ হয় কিন্তু তবুও কিছুতে কিছু হয়না। পথশিশুরা পথশিশুই থেকে যায়। তবে হ্যা কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সত্যিই ভাল মনের মানুষ। তাদের অন্তরে মায়া জিনিস টা আছে। তাদের কাছে একটি পয়সা চাইলে তারা ১০ টি পয়সা বের করে দেয়। তেমনি একজন হলেন নাদিম ভাইয়া।

আমাদের রেল লাইনের চালা ঘরের পাশেই নাদিম ভাইয়ার বাসা। সে অসাধারণ একজন মানুষ। নাদিম ভাইয়া প্রতিদিন সকালে আমাদের চা বিস্কুট কিনে দিয়ে অফিসে যায়। আবার অফিস থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন আমাদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসবেই। মাঝে মাঝে ভাত ও মাংস নিয়ে আসে। নাদিম ভাইয়া ও তার স্ত্রী টিয়া ভাবি আমাদের অনেক ভালবাসে। এত ভালবাসা মা বাবা ছাড়া আর কারো কাছেই পাইনি।

আমরা ৩ জন একত্রে রেল লাইনের পাশে একটি চালা ঘরে থাকি। আমাদের কারোরই মা বাবা ভাই বোন নেই। মা বাবাও আমাদের মতই ফুটপাতের মানুষ ছিল। এক এক করে সবাই মারা যায়। গত বছর অনেক বেশি শীত পরেছিল। তখন শীতের কাপড় ছিল না আমাদের। অনেক জায়গায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে কিন্তু আমাদের কেউ শীতবস্ত্র দেয়নি। শীত বস্ত্রের অভাবে মা বাবা কে হারাতে হবে সেটা কখনো কেউ ভাবিনী। যা শীতের কাপড় ছিল তা দিয়ে আমাদের ঢেকে রেখেছিল। নিজেরা ঠান্ডায় অনেক কষ্ট করেছে কিন্তু আমাদের ঠান্ডায় কষ্ট পেতে দেয়নি। কে জানত যে ঠান্ডায় জমে তারা দূর অজানায় হারিয়ে যাবে।

আমরাও অন্যদের মত লেখাপড়া করতে চাই। কিন্তু এই স্বপ্ন পুরণ হবে কিনা সেটা একমাত্র বিধাতাই জানে। তবে হঠাৎই আমাদের জীবন বদলে যাবে সেটা কখনো কল্পনাও করিনি। নাদিম ভাইয়া আমাদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছে। স্বপ্ন দেখতাম, ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাব। সেই স্বপ্ন বাস্তব করার সময় এসেছে। নাদিম ভাইয়া মাঝে মাঝেই বলত, তোদের জন্য বড় সারপ্রাইজ আছে। সেই সারপ্রাইজ যে এমনকিছু হবে সেটা কেউ কখনো ভাবিনী। নাদিম ভাইয়া এবার ভালবাসা দিবসে আমাদের মত পথশিশুদের নিয়ে পিকনিকের আয়োজন করেছে। নাদিম ভাইয়া আর টিয়া ভাবি তাদের সব খুশি গুলো পথশিশুদের মাঝে ভাগ করে দিতে চায় তাই এমন আয়োজন করেছে।

আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে নাদিম ভাইয়ার বাসার স্টর রুমে। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করতে হবে আমাদের। আমরা সত্যি অনেক অবাক হয়েছি এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে। নাদিম ভাইয়ার মত মানুষ যদি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত তাহলে আর কোন পথশিশুকে না খেয়ে দিন কাটাতে হত না। কোন পথশিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হত না। নাদিম ভাইয়ের মত মানুষ ঘরে ঘরে জন্ম নিয়ে দেশকে পথশিশু মুক্ত করুক। বিধাতার কাছে এটাই আমাদের পথশিশুদের চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×