somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একি আধুনিক শিক্ষা!

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সৃষ্টির ঊষা লগ্ন থেকেই মানুষ প্রতিনিয়ত শিখছে। আদিম যুগের মানুষের অবস্থা ইতিহাসে পড়েছি, তাদের না ছিল ঘর বাড়ি, না ছিল শিক্ষা, না ছিল চিকিৎসা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও তখন থেকেই শুরু হয় শিক্ষার হাতেখড়ি তাদের দৈনন্দিন কর্ম কান্ডের মাধ্যমে। আদিম অবস্থা থেকেই আজ একাবিংশ শতাব্দিতে মানুষ বিজ্ঞানের চরম উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে, এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে শিক্ষার কারণে। মনিষীগণ শিক্ষা সম্পর্কে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তন্মধ্যে একটি- 'কাঙ্খিত আচরণিক ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের নামই শিক্ষা।‘ তাই মানুষ যখন যা শিখে সেই শেখার মাঝে ফাঁক থাকলে তাকে আর শেখা শিখণ বলা যায় না। দাদুর মুখে শুনেছিলাম, তাদের আমলে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির চরিত্রে অসততার ছাপ ছিল না। শিক্ষার্থী যতটুকু শিখেছে অকপটে শিখেছে। শিক্ষক যতটুকু শিখিয়েছেন হৃদয় উজাড় করে, অন্তর নিংড়িয়ে, নির্মল, প্রাণবন্ত প্রাণে শিখিয়েছেন; তাতে ছিল না কোন কপটতা, ছিল না কোন অপকৌশল ও শঠতা। দাদু আরো বলেছিলেন, সেকালে নাকি কোন প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন ছিল না, কোচিং সেন্টার ছিল না, এমন কি নোট বই, গাইড বইয়েরও প্রচলন ছিল না। দিন দিন শিক্ষার যতই উন্নতি ঘটেছে ততই প্রতিযোগিতা মূলক প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থাপনা, কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থাপনা, নোট বই, গাইড বই ছাপানো ও বিক্রয়ের ব্যবস্থাপনা দূর্বার গতিতে বেড়ে চলেছে। উদ্দেশ্য শুধু টুপাইস ( অর্থ ) কামানো, অর্থাৎ বিত্তবান হওয়ার ধান্দা। তাকালেই চারপাশে দেখতে পাই প্রায় সকলেই যেন অর্থের নেশায় মাতাল হয়ে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে শুধু ব্যবসা করে অর্থবান হয়ে গগণচুম্বী অট্টালিকা গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। এতে মানুষের কল্যাণ হোক আর অকল্যাণই হোক, জাতির উন্নতি হোক অথবা জাতির বিপর্যয় হোক সেদিকে কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। তাই প্রায় সকলেই স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে রকেটের গতিতে ছুটছেন ডিজিটাল সুখ পাখিটির পেছনে। বিগত কয়েক বছর ধরেই পত্রিকার পাতা চোখের সামনে তুলে ধরলেই দেখতে পাই, প্রশ্ন ফাঁস! প্রশ্ন ফাঁস!

দেখা যাচ্ছে, পি.এস.সি. থেকে বি.সি.এস. পরীক্ষা পর্যন্ত প্রত্যেক পরীক্ষায়ই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। সকল শ্রেণীতে এত নোট বই, গাইড বই, প্রাইভেট সেন্টার, কোচিং সেন্টার এর ছড়া ছড়ি থাকা সত্তেও আবার প্রশ্ন ফাঁসের প্রয়োজন হয় কেন তা মগজেই ঢুকছে না। ভাবতে অবাক লাগে যে, সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য প্রতিটি শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের কাঁধে দেশের ভবিষ্যত দায়িত্বভার তুলে দেওয়া। কিন্তু যেভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে তাতে কি সরকার মহোদয়ের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে না? জাতি কি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে না? এই কি আমাদের ডিজিটাল শিক্ষা? শিক্ষার উদ্দেশ্য কি আত্বকেন্দ্রিকতা ও অসততা? তাহলে এই শিক্ষা মানুষ কে কখনোই মানুষ করতে পারেনা, দেশ কে কখনো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনা।

দাদু বলেছিলেন, শিক্ষা মানুষ কে বিনয়ী , নম্র ও ভদ্র মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। শিক্ষা মানুষের মনের অন্ধকার ও কু-সংস্কার দূর করে মানুষ কে সত্যিকারের জ্ঞান গরিমায় আলোকিত করে একজন খাঁটি মানুষে পরিণত করে। আর সেই মানুষের দ্বারা দেশ ও দেশের মানুষের তথা সকল সৃষ্টির কল্যাণ সাধিত হয়। কেবল এরূপ মানুষই পারে সকল দ্বিধা-দ্বন্ধ ভুলে সকল মানুষ তথা সকল সৃষ্টি কে ভালবাসতে এবং পর কে আপন করে নিতে। আর এরূপ মানুষের অন্তর নিহিত শিক্ষা-ই আদর্শ শিক্ষা-সফল শিক্ষা।

'প্রশ্ন ফাঁস' এর ঘটনা দূরীকরণে সততার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ অর্থাৎ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষগণ সকল কে সবিনয়ে অনুরোধ করছি,- আসুন সবাই মিলে সততার পতাকা তলে সমবেত হই। শিক্ষাঙ্গনকে কলুষতা মুক্ত করি। সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করে সুনাগরিক গড়ে তোলার সংগ্রাম চালিয়ে যাই। দেশ ও জাতিকে বিশ্বের দরবারে গর্বিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করি। আর যদি আমরা তা না পারি, বর্তমান চলমান অবস্থা চলতেই থাকে তাহলে কোন দিন আমরা সত্যিকারের শিক্ষিত ও সত্যিকারের মানুষ হতে পারব না। এমন কি আমাদের দেশ মাতাকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পারব না। তাই কবি বলেছেন,-

"সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধা জননী
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি"
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১৯
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×