আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। আশে পাশের সব মানুষ এই নদীতে গোসল করে, মাছ ধরে, এই নদীর পানি দিয়ে ফসল ফলায়। এক কথায় বলতে গেলে এই নদীর উপর আমাদের গ্রামের মানুষ অনেকখানি নির্ভরশীল। একবার নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে গেল সেইবার অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায় পানির অভাবে। এখানে বিদ্যুৎ নেই যে পানি সেচ দিয়ে ফসল কে বাঁচানো যাবে। গ্রামের চেয়ারম্যান কথা দিয়েছিল, যে করেই হোক বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেবেন; যাতে গ্রামের মানুষ ভালমত ফসল ফলাতে পারে। ১ বছর পার হয়ে গেল এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। এখন ফসল ফলানোর জন্য এই নদীই একমাত্র অবলম্বন। দক্ষিণ পাড়ায় প্রাইমারি স্কুল আছে সেখানে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পড়তে যায়। প্রাইমারি স্কুলে এখন বিভিন্ন রকমের কৌশল শেখানো হচ্ছে যাতে প্রতিকূল পরিবেশে বিপদের মুখে পড়তে না হয়।
শীতকাল তাই নদীর পানি কমে গেছে অনেকখানি তাই আশে পাশের অনেক ক্ষেতে পানি নেই। পানির অভাবে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই কৃষকেরা খুব দুঃচিন্তায় আছে। কিছুদিন আগে আমাদের গ্রামে বৃক্ষ মেলা হয়েছে সেখানে বলেছে, আমাদের দেশে বন ভূমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে তাই গাছ লাগাতে হবে বেশি বেশি। বন ভূমির পরিমান কমে গেলে অসময়ে বৃষ্টি হয় আবার খরায় জমি খা হয়ে যায়। এবার চাষ ভাল হবেনা বলে ধারণা করেছে কৃষি অফিসার। কিন্তু এই গ্রামের মানুষ স্বপ্ন দেখে তাদের গ্রাম সোনালি ফসলে ভোরে উঠবে। তারা নতুন ফসল হাটে বিক্রি করে ছেলে মেয়েকে নতুন কাপড় কিনে দেবে। গ্রামের মানুষ গুলোর সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তাদের ক্ষেতের সোনালি ফসল।
আমি এবার এইচ এস সি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার চোখের সামনে গ্রামের মানুষ গুলোর এমন সর্বনাশ হবে তা আমি মেনে নিতে পারবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমিই তাদের সাহায্য করবো, যে করেই হোক। আমার ধারণা এই সোনার মাটিতে সোনালি ফসল ফলবেই। তাই যে করেই হোক কৃষি অফিসারের ধারণা কে পাল্টে দিতেই হবে। আমি কৃষি শিক্ষা বইতে পড়েছি কি করে প্রতিকুল পরিবেশে চাষ করতে হয়। এই শিক্ষা কে কাজে লাগাতে হবে তাই গ্রামের মানুষ কে একত্রিত করে নানান পরামর্শ দিলাম। সেই সাথে এটাও বুঝিয়ে দিলাম, শীতকালে পানির সমস্যা; তাই যে ফসল চাষ করতে পানি কম লাগে সেই ফসল চাষ করতে। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পানি কম লাগে এমন কিছু ফসলের বীজের নাম বলে দিয়েছি। কি করে সেসব ফসলের চাষ করতে হবে তাও বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে একটা কথা আদায় করে নিয়েছি সেটা হলো যদি ফসল ভালো হয় সেই টাকা থেকে চারা গাছ কিনে তাদের বাড়ির আশে পাশে ফাঁকা জায়গায় তা রোপণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল আমি সফল হবো। আমাদের গ্রাম ভরে উঠবে সোনালি ফসলে। সেইসাথে একটা স্বপ্ন বাস্তব হবে, সেটা হলো আমাদের গ্রাম ভরে উঠবে বৃক্ষ দিয়ে। বন ভূমির পরিমান বাড়াতেই হবে তাই আমার গ্রাম দিয়েই শুরু করেছি এই বৃক্ষ রোপণ অভিযান।
কেটে গেল কিছু মাস। গ্রামের প্রতিটা ক্ষেতে সোনালি ফসল এবং সাথে সাথে কৃষকের মুখে হাসি। ফসল ভালো হয়েছে তাই আমার কথাটা রেখেছে সবাই। সবাই বাড়ির আশে পাশে ফাঁকা জায়গায় হরেক রকম বৃক্ষের চারা রোপণ করেছে। কল্পনা করি একদিন এই চারা বৃক্ষ অনেক বড় হয়ে সবুজ করে তুলবে পুরো গ্রামকে। সেদিন বন ভুমির পরিমান আর কমবে না সেদিন শুধু বাড়বে। স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে; হবেই হবে।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৯