রিয়াজের চোখে ঘুম নেই। সারাক্ষণ শুধু ভাবে কিভাবে চাঁদের বুড়ির কাছে যাওয়া যায়। রিয়াজের ভাই বলেছে, চাঁদের বুড়ির কাছে গেলে যা চাইবি তাই পাবি। রিয়াজ এ কথা শুনে চাঁদের বুড়ির কাছে যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে। রিয়াজ একা বসে ভাবে, আমাকে যে করেই হোক চাঁদের বুড়ির কাছে যেতে হবে। আমাকে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পেতেই হবে। রিয়াজের গেম খেলার নেশাটা মারাত্বক। মোবাইলে গেম না খেললে যেন তার পেটের ভাত হজমই হতে চায় না। বাসার মোবাইল সব সময় হাতে নিতে দেয় না তাই সে চাঁদের বুড়ির কাছে যাবে একটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল আনতে। মনে মনে সে ভাবে, মোবাইল টা পেলে সে সারাক্ষণ গেম খেলবে। রিয়াজ তার বাসার সবার কাছে জানতে চায় চাঁদের বুড়ির কাছে কি করে যেতে হয়। সবাই যখন জানতে চায় চাঁদের বুড়ির কাছে গিয়ে কি করবি? তখন সে বলে, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল আনতে যাবো। বাসার সবাই রিয়াজের কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে।
আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছে রিয়াজ। সকালে উঠেই বড় ভাইয়ের কাছে জানতে গেছে কি করে চাঁদের বুড়ির কাছে যাওয়া যায়। রিয়াজের ভাই বলে, চাঁদের বুড়ির কাছে তো আর এমনি এমনি যাওয়া যায় না। আর সেখানে গেলেও এমনি এমনি কিছু দেয় না। রিয়াজ বলে তাহলে কি করতে হবে আমাকে? রিয়াজের ভাই রিয়াজ সে সবকিছু বুঝিয়ে বলে যে, চাঁদের বুড়ির কাছে যেতে হলে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে হয়। আর যে বার্ষিক পরীক্ষায় ফলাফল ভাল করতে পারে সেই চাঁদের বুড়ির কাছে যেতে পারে। সে চাঁদের বুড়ির কাছে গিয়ে যা চায় চাঁদের বুড়ি তাকে তাই দেয়। রিয়াজের আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু।
রিয়াজ এখন মনোযোগ দিয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারলেই চাঁদের বুড়ির কাছে যেতে পারবে। চাঁদের বুড়ির কাছে গিয়ে মোবাইল টা আনার জন্য তাকে যে করেই হোক ভাল ফলাফল করতেই হবে। এখন রিয়াজের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা সেটা হচ্ছে, কি করে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা যায়।
দেখতে দেখতে রিয়াজের বার্ষিক পরীক্ষা চলে এলো। প্রস্তুতি ভাল ছিল জন্যে পরীক্ষা গুলোও খুব ভাল দিচ্ছে। রিয়াজ সব পরীক্ষাই খুব ভাল দিলো। এখন শুধু ফলাফলের অপেক্ষা। আস্তে আস্তে ফলাফলের দিন এসে উপস্থিত হলো। আজ রিয়াজের পরীক্ষার ফলাফল দেবে। সবাই স্কুলে এসেছে ফলাফল নিতে। রিয়াজও এসেছে তার বড় ভাইয়ের সাথে। যখন ফলাফল ঘোষণা করলো তখন রিয়াজ জানতে পারলো, সে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে! রিয়াজ খুশিতে নেচে উঠলো। রিয়াজ তার ভাইয়ের সাথে স্কুল থেকে দেয়া ফলাফল কার্ড হাতে বাসায় প্রবেশ করলো। রিয়াজ আজ খুব খুশি সে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে শুধু ভাল নয় রীতিমত সে প্রথম হয়েছে। এবার চাঁদের বুড়ির কাছে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।
রাতে ঘুমানোর আগে তার ভাইয়া কে বললো, ভাইয়া আমি তো পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি, এবার আমাকে চাঁদের বুড়ির কাছে নিয়ে চলো আমি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে এসে গেম খেলবো। তার ভাই বলে, তুই বিছানায় গিয়ে ঘুমা আর মনে মনে চাঁদের বুড়ির কাছে তোর মোবাইলের কথা বলিস। রিয়াজ মনে মনে চাঁদের বুড়ির কাছে তার মোবাইলের কথা বলে ঘুমিয়ে গেল। পরদিন সকালে চোখ খুলেই দেখতে পেল, টেবিলের উপর একটা সুন্দর অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল রাখা আছে। রিয়াজ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মোবাইলের দিকে, তারপর কাছে গিয়ে মোবাইল টা ভাল করে দেখলো। অতঃপর সে আর দেরি না করে মোবাইল টা অন করেই গেম খেলতে শুরু করে দিলো। আর ভাবতে লাগলো হয়ত রাতে চাঁদের বুড়ি তার মনের কথা শুনতে পেয়েছে তাই সকাল সকাল তার জন্যে মোবাইল পাঠিয়ে দিয়েছে ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখাটি দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৬