খুব মিস করছি তোদের। বাসা থেকে বের করে দিতে চাচ্ছিল অনেক আগে থেকেই তবুও তোরা বুঝলি না, তোরা যদি বুঝে ভালভাবে থাকতি তাহলে আজ এমন দিন দেখতে হত না। আজ তোদেরও কষ্ট করতে হত না আর আমাদেরও কষ্ট পেতে হত না। এত ভালোমত আগলে রাখতাম তোদের তোরা বুঝলিই না। কে জানে কোথায় আছিস, কি খাচ্ছিস, নাকি খেতে পাচ্ছিস না। না খেয়ে তো আর বাঁচা সম্ভব না। হয়তো কদিন পর মরে যাবি। আমরা যেভাবে তোদের খাওয়াতাম এমন করে কেউ খাওয়াবে না। বাঁচার জন্য যতটুকু খাবার দরকার অতটুকুও তোদের দিবে না সেটা জানি। মায়া লাগে তাই তোদের দেয়া সব যন্ত্রণা, কষ্ট সয্য করেছি। সয্য করতে করতে আর পারলাম না। যদিও আমি রাখতে চাচ্ছিলাম কিন্তু মা-বাবা তোদের থাকতে দিল না। তোদের দূরে পাঠিয়ে যে আমি একাই কষ্ট পাচ্ছি তা না, বাসার সবারই মন খারাপ; সবাই কষ্ট পাচ্ছে।
একবার এক বিড়ালের বাচ্চা এসেছিল আমাদের বাসায়। সেই বিড়ালের বাচ্চা বড় হয়ে দুটি বাচ্চার জন্ম দেয়। সেই ছোট বাচ্চা দুটো বড় হতে থাকে আমাদের বাসায়। যখন বাচ্চা দুটো বড় হয়ে যায় তখন বাচ্চার মা বাসা থেকে অন্য কোথায় যেন চলে গেল। তারপর থেকে ঐ দুটো বিড়াল আমাদের বাসায় থাকত। বিড়াল কে আমরা কখনোই তাড়াতে পারতাম না। কেন পারতাম না তা জানিনা, অন্য মানুষের মায়া লাগে কিনা জানিনা তবে আমাদের লাগে। বিড়াল বিছানায় পায়খানা করে, কোনদিন আবার বমি করে। আর সেই বিছানার ওগুলো পরিষ্কার করা, সব কিছু ধোঁয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হত আম্মুর। একদিন দুদিন হলে আলদা কথা ছিল কিন্তু প্রতিদিন এগুলা করা কারো পক্ষেই সম্ভব না। আম্মু একদিন ঐ দুটো বিড়াল কে ব্যাগে করে বাসা থেকে ১ কিমি দূরে রেখে আসল। সন্ধ্যায় অনেক খারাপ লাগছিল আমাদের। কোথায় যাবে কি খাবে এসব ভেবে। রাত গভীর হওয়ার পথে এমন সময় কোথা থেকে যেন বিড়াল গুলো হাজির! বিড়াল কে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বাসা খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। সেদিন থেকে আবার আমাদের বাসায় থাকতে শুরু করল।
কিছুদিন পর বিড়াল দুটোর মধ্যে একটা বিড়াল ৪ টা বাচ্চার জন্ম দিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় যেদিন বাচ্চা গুলোর জন্ম হয় তারপরের দিনই মা-বিড়াল টা মারা যায়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও ছোট ছোট চারটা বাচ্চা কে বাঁচাতে পারিনি। বাচ্চা গুলোর বয়স ছিল মাত্র একদিন! চোখও ফুটেনি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম বাঁচাতে। বাজার থেকে দুধ এনে খাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তাতে কোণ লাভ হয়নি।
যে বিড়াল টি বেঁচে রইল সেটা অনেক আদর যত্নেই ছিল আমাদের বাসায়। অনেক দিন পর এই বিড়াল টিও ২ টি বাচ্চার জন্ম দিল। বাচ্চা দুটি আমাদের বাসায় বড় হতে লাগল। তারপর হঠাৎ একদিন বাচ্চা গুলোর মা মানে মা-বিড়াল টা বাসা থেকে চলে গেল অন্য কোথাও তবে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসত, এমনকি এখনও আসে। যে বাচ্চা দুটো আমাদের বাসায় রেখে গেল ওগুলো মোটামুটি বড় হয়েছিল তখন।
সেই মোটামুটি বড় বাচ্চা দুটি আজ বড় হয়েছে। দুটোর মধ্যে একটি গত ৫ দিন আগে ৪ টা ছোট ছোট ছানার জন্ম দিয়েছে। ছোট বাচ্চা গুলোর চোখ ফুটেনি এখনো। কিন্তু এত বেশি অন্যাচার করছিল আমাদের যা মুখে বলে বোঝানো সম্ভব না। তাই মা-বাবা রাগ করে সব বিড়াল বস্তায় ভরে ৩ কিমি দূরে দিয়ে এসেছে আমার ফুপুর বাসায়। ফুপুর বাসায় বিড়াল গুলোকে যে কেউ খেতে দেবেনা তা আমার ভাল করেই জানা আছে। ৫ দিন আগে জন্ম নেয়া বাচ্চারা বড় হতে পারবে কিনা কে জানে। তাদের মা খাবার পাবে কিনা কোথাও কে জানে। মনটা ভীষণ খারাপ। কষ্ট হচ্ছে খুব। বাসা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এত বেশি বিরক্ত করছিল যা মা-বাবার পক্ষে মেনে নেয়া খুব কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। প্রতিদিন বিছানার সব কিছু ধোয়া কারো পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না। মা-বাবা অনেক অসুস্থ, অসুস্থতা নিয়ে এতকাজ করতে করতে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
কথায় আছে না সুখে থাকতে ভূতে কিলায়, কথাটা আসলেই সত্যি। মায়ের মুখে গল্প শুনেছিলাম, একটা বক মাছ খেতে যেত অনেক দূরে দূরে। একদিন বকটা আল্লাহর কাছে বলল, মাছ যদি কাছে কোথাও পাওয়া যেত তাহলে আর এত কষ্ট করতে হত না। আল্লাহ বকের কথা শুনে মাছ কাছে এনে দিল। তারপর কদিন পর বক বলল, মাছ যদি আমার বাসার গাছের নিচে এতে দেও তাহলে, আমার আর কষ্ট করে দূরে গিয়ে খেয়ে হয় না। আল্লাহ বকের কথা শুনে তাই করল। তার কদিন পর বক আবার আল্লাহ কে বলল, মাছ গুলো যদি আমার বাসায় উঠিয়ে দাও তাহলে আর আমাকে কষ্ট করে বাসা থেকে নামতে হত না। আমি খাইতাম আর সুইতাম, সুইতাম আর খাইতাম। আল্লাহ এবার বলল, এত কষ্ট থেকে রেহাই দিলাম তাও আরো সুখ চাস, এবার বুঝাচ্ছি মজা। আল্লাহ সেই অনেক দূরে মাছ নিয়ে গেল। এখন বককে সেই আগের মত অনেক দূরে গিয়ে মাছ খেতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৭