আজ ভালোবাসা দিবস। আমার ভালোবাসা দিবস আমার মা কে ঘিরেই। পৃথিবীতে যদি কেউ আমাকে বেশি ভালোবাসে সে হচ্ছে আমার মা। সেই ছোট থেকেই মা আমার যত্নের কোন ত্রুটি রাখেনি। একজন মা তার সন্তান কে যতটা আগলে রাখে, আমার মা ঠিক ততটাই আমাকে আগলে রেখেছে। মা কে আমি এত কষ্ট দেই, তবুও সে আমাকে দূরে ঠেলে দেয় না, দিবেই বা কেন; সন্তান যতই দোষ করুক, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কখনো কমে না। তেমনি আমার প্রতি মায়ের ভালোবাসা কমেনি। মায়ের কাছ থেকে আমার প্রথম শিক্ষাজীবনের শুরু হয়, এখন পর্যন্ত শিখেই যাচ্ছি তার কাছ থেকে। আমি মনেকরি, আমার মা পৃথিবীর সেরা মা।
আজ মা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন। তারপর আমাকে ঘুম থেকে ডেকে পড়তে বসিয়েছেন। পড়তে আমার ভাল লাগে না, তবুও মায়ের জন্য পড়তে বসতে হয়। আমাকে পড়তে বসিয়ে তিনি নাস্তা বানাতে গেছেন। মা আবার আমার খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব ভাবেন, সময় মত খাবার খাইয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে, এটা তার মাথা থেকে কখনো যায় না। আমার সব থেকে বেশি খেয়াল রাখেন আমার মা। বাবা যদিও খেয়াল রাখেন তবে মায়ের মত পারেন না। আমিও কম বেশি তাদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।
আমার বই পড়া শেষ হতে না হতেই টেবিলে নাস্তা হাজির! আজ একটু ভিন্ন রকম নাস্তা দেখে অবাক হলাম। আমি যখন খিচুড়ি খেতে চাইতাম তখন খাওয়াতেন না, আজ হঠাৎ মা আমার জন্য খিচুড়ি রান্না করেছেন। পরক্ষণে বুঝতে পারলাম, আজ তো ভালোবাসা দিবস তাই মা আমার জন্য খিচুড়ি রান্না করেছেন। গরম গরম খিচুড়ি খেয়ে স্কুলে চলে গেলাম।
স্কুলে এসে দেখছি সবার হাতে হাতে নানা রকম ফুল। ভালোবাসা দিবসে সবার হাতে ফুল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমার আবার ফুল খুব ভাল লাগে, তাই বাসায় ফুলের বাগানও করেছি। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে অনেক বন্ধু-বান্ধব ফুল দিল আমাকে, আমি তাদের কাছ থেকে ফুল পেয়ে অনেক খুশি হলাম। সারাদিন বন্ধু বান্ধবের সাথে সময়টা অনেক ভালই কাটলো। বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। বাসায় ফিরে দেখলাম, মা অনেক প্রকার রান্না করেছেন। ভালোবাসা দিবসে আমাদের বাসায় অনেক আইটেম রান্না করা হয়, এবারও হচ্ছে।
বাবা ইদানীং ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকালে বেড়িয়ে যান আর আসেন সেই রাতে। কিছুদিন থেকে বাবার সাথে ভাল মত কথাও বলতে পারছি না। সারাদিন অফিসে কাজ করেন, যখন রাতে বাসায় ফিরেন তখন আমি ঘুমিয়ে যাই। তবে ছুটির দিন গুলোতে বাবা আমাকে আর মা কে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান। আমার আবার ঘুরতে ভীষণ পছন্দ তাই অনেক মজা হয় তখন।
আমাদের ফুল বাগানে আজ অনেক ফুল ফুটেছে। গোলাপ গাছে অনেক লাল গোলাপ ফুটেছে। ফুলের সোন্দর্য আমায় মুগ্ধ করে, যতবার তাকাই ততবারই মুগ্ধ হই। আচ্ছা ফুলেরা কি জানে যে, আজ ভালোবাসা দিবস? এতদিন গাছে দু একটা ফুল দেখতে পেতাম, আজ দেখি ফুলে ফুলে গাছ ভরে গেছে। হয়তো ভালোবাসা দিবস বলেই ফুল গাছের এই সুন্দর আয়োজন। হয়তো গাছ ফুলের কলি কে বলে দিয়েছে, 'ভালোবাসা দিবসের দিন তোরা ফুটবি।‘ গাছ থেকে সুন্দর সুন্দর দুটো লাল গোলাপ ছিঁড়লাম। যে দুটো ফুল ছিঁড়েছি সে দুটো বাগানের সব থেকে সুন্দর ফুল। আমার গোলাপ ফুল খুব পছন্দ তাই আমাদের বাগানে গোলাপ ফুলের গাছই বেশি। বাগান থেকে বেড়িয়ে এসে ফুল গুলো আমার রুমে রেখে দিলাম।
বাবা আজ সন্ধ্যায়ই বাসায় ফিরেছেন। মা রান্না শেষ করে বসে টিভি দেখছেন আর বাবার সাথে গল্প করছেন। আমিও তাদের সাথে গল্পে যোগ দিলাম। আজ অনেক দিন পরে সবাই এক সাথে গল্প করছি। অনেক মজার মজার কথা; অনেক মজার মজার গল্প করতে করতে রাত প্রায় অনেক হয়ে গেল। শুধু গল্প দিয়ে কি আর চলে! রাতের খাবার তো খেতে হবে। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য মা আমাকে আর বাবা কে ডাকলেন। মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না সবাই তৃপ্তি করে খেলাম। খাওয়া শেষে আবার সবাই টিভি দেখতে বসে গেলাম।
আজ ভালোবাসা দিবস, তাই মা যে লাল শাড়ি পড়েছেন সেটা কেবল আমার চোখে পড়লো। লাল শাড়িটা বাবা গত বছর ভালোবাসা দিবসে মা কে উপহার দিয়েছেন । লাল শাড়িতে মা কে দারুণ লাগছে। টিভি দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেল। তাই মা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি আর দেরি না করে বাগান থেকে ছেঁড়া লাল গোলাপ এনে মায়ের হাতে তুলে দিলাম, আর বললাম, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা।‘ মা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে, তারপর বললেন, ‘দোয়া করি বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হও।‘
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:৩৯