সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এমন অবস্থায় কত ভালো ঘুম হয় সেটা সবারই জানা। আমারও খুব ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ঘুমাতে পারছি না। কেন পারছি না সেটা ভাবার চেষ্টা করছি অনেক্ষণ থেকে কিছুই বের করতে পারলাম না। নীলাকে একটা ম্যাসেজ করলাম, 'কোথায় তুমি? কি করছ?' নীলার উত্তর পেয়ে একটু কেমন যেন লাগছিল। উত্তর টা ছিল, 'আমি কোথায় আছি, কি করছি শুনে হয়তো রাগে ফেটে পড়বা।' আমি জানতে পারলাম আমার অসুস্থতার কথা শুনে নীলা একাই সাহস করে বাসা থেকে বেড়িয়েছে আমাকে দেখতে আসবে বলে। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কিছু না বলে ভালোমত আসতে বললাম। আমি গোসল করে রেডি হতে বেড়িয়ে পড়লাম। বাস স্ট্যান্ডের কাছে যাবো। ঈদ চলে গেছে ৫ দিন হয়ে গেল তাও রিক্সা ভাড়া ১০ টাকা বেশি। কেন বেশি জানতে চাইলে কোন উত্তর পেলাম না।
অনেক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছি নীলার জন্য। মেয়েটা রাস্তা ঘাট তেমন চিনে না তাই ওকে একা কোথাও বের হতে দেইনা। আজ না করবো, আবার ভাবলাম মন খারাপ করবে, তাই না করতে পারিনি। কদিন আগে নীলা বলেছিল স্পঞ্জের মিষ্টি আর দই খেতে ইচ্ছে হয়েছে। আমি ভাবছি আজ দেখা হলে ওকে খাওয়াবো। অনেক রোদ উঠেছে, গরমও ভীষণ। নীলা বাস থেকে নেমে আমার হাত টা ধরে সুন্দর সবুজে ঘেরা এক বাগানের ধারে পুকুর পাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে দুজন বসলাম। অনেক কথা বলছিল, আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে কথা শুনছিলাম। গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে গেল। আমার ক্ষুধা পায়নি, নীলার পেয়েছে। ওকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে তেলাপিয়া মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ালাম। নীলাকে নিয়ে খেতে গেলে আমার ওকে রোজ রোজ বকা লাগে। ভাত খায় মনে হয় ৩ টাকার, মাছ, মাংস, সবজি ৫ টাকার। এই ৮ টাকায় খাওয়া শেষ। বুঝতে পারলেন না তো?? মানে একদম অল্প খায়। এত এত এত কম খায় যা বলারও বাহিরে। মাঝে মাঝে তো বকাবকি করি যে, বাসায় কিছু খাওয়ায় নাই কখনো? আমার কথা শুনেই হেসে দেয়। আরেক কথা বলতেই ভুলে গেছি। নীলা অনেক হাসে! কারণে অকারণে হাসে। হাসলে ওকে ভালোই লাগে। গোমরা মুখে থাকলে আমার ভালো লাগে না। ওকে হাসি খুশিতেই ভালো লাগে।
নীলা বসে আছে আমার পাশে। আমি নীলাকে বললাম, একটা নাটক দেখবে? সে হ্যা সম্মতি জানালো। ফোন টা পকেট থেকে বের করে নাদিয়া আর জোভানের 'আলো আধারের কাব্য' নাটক টা প্লে করে দিলাম। দুজন পাশাপাশি কাছাকাছি পুকুর পাড়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে নাটক দেখছি। এমন সুন্দর মুহুর্তের কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। নীলাকে বললাম চলো কিছু হালকা খাবার খাই। নীলা কিছুতেই যেতে রাজী হচ্ছিল না তাও এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম। হালিম ওর্ডার দিলাম। অনেক দিন থেকে খাওয়া হয়নি। আমার মোটামুটি খেতে ভালোই লাগে। হালিম খাওয়া শেষ করে দই অর্ডার দিলাম। দই শেষ করে দুজনে একটা ঠান্ডা খেলাম। নীলার সাথে একসাথে খেতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। ও হ্যা, ওর হাতের রান্না আমার খুব ভালো লাগে। তবুও মেয়েটাকে খেক্ষাই মাঝে মাঝে। এটা কম হইছে, এভাবে রান্না করবা, এটা দিবা এটা দিওনা। যখন আমি এগুলো বলি হয়তো মনে মনে বলে তুমি ছেলে মানুষ তুমি এগুলোর কি বুঝবা।
নীলা বাসায় চলে যাবে। আমার অসুস্থতার কথা শুনে পাগলের মত ছুটে এসেছে। আমার একটু কিছু হলে ও পাগল হয়ে যায়। এমন মায়া, ভালোবাসা, মহব্বত কজনেরই বা আছে। আমি অনেক ভাগ্যবান ওর মত মেয়েকে পেয়ে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা হাজার বছর অটুট থাকুক আমাদের ভালোবাসা। নীলাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম যতক্ষণ না বাস ছাড়ে। দাঁড়িয়ে থেকে ওর চলে যাওয়া দেখলাম। নীলাও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ পর্যন্ত আমায় দেখা যাচ্ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৩