আমাদের পাশের বাসার এক ভাইয়ের বিয়ে তো আমাকে যেতে হবে বরযাত্রী হিসেবে। আমি যেতে চাই না কিন্তু তাদের কথা আমাকে যেতেই হবে। আসলে আমাকে নিয়ে এত টানাটানি করার কারণ হচ্ছে, আমি মোটামুটি ভাল ভিডিও করতে পারি। তাই তারা আমাকে ভিডিও করার কাজ দিল। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল বিয়ে আগামি ৩ দিন পরে। দেখতে দেখতে সময় পার হতে থাকলো।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এসে হাজির হলো। সকাল থেকে লোকজন আসতে শুরু করলো। দুপুরের মধ্যে বাসায় লোকে ভর্তি হয়ে গেল। সব আত্মীয় স্বজনেরা এসেছে। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা সবাই অনেক মজা করছে। আমার তো দায়িত্ব মোটামুটি ঝামেলার তবুও শুরু করে দিলাম আমার কাজ। ভিডিও করা শুরু করে দিলাম। বরকে হলুদ দেয়া থেকে শুরু করে গোসল করানো পর্যন্ত ভিডিও করা শেষ হলো। বাসায় অনেক মানুষ যারা এসেছেন তাদেরও ভিডিও করছি। মোটামুটি ভালোই লাগছে আমার।
সব থেকে মজার কিছু বিষয় হলো। আগামীকাল আমার জন্মদিন আর তারপরের দিন ঈদুল ফিতর। এতো কিছুর ভিরে কাজ করতেও আমার সমস্যা হচ্ছে না। বাসায় থাকলে হয়তো শুয়ে বসেই থাকা হত। বরকে সাজানো হলো। সবাই সেজেছে আমার আর তৈরি হওয়ার সময় কোথায়। যে টি-শার্ট পড়ে ছিলাম ওটা পড়েই বরের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম। রাত মোটামুটি অনেক হয়েছে, কেবল বর যাচ্ছে। কত রাতে যে বিয়ে শেষ হবে কে জানে। বরের গাড়িতে বসে আছি। রাত বারটা বাজতেই ফোনে ম্যাসেজ আসা শুরু হয়ে গেল। ম্যাসেজ এর উত্তর দিতে লাগলাম। তারপর অনেক হই হুল্লোড় করে কনের বাড়িয়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম। আবার আমার কাজ শুরু। বাড়ির চারপাশ ভিডিও করা শুরু করে দিলাম। কনের রুমে গিয়ে সুন্দর করে ভিডিও করলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি কেন জানি আন্দাজি লজ্জা পাচ্ছিলাম।
আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল। ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক। একটা ফাঁকা রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে চোখ আটকে গেল। একটা অল্প বয়সি মেয়ে কাপড় চেঞ্জ করছে। এমন একটা সময়ে ঢুকেছি যে বেরও হতে পারছিনা দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছি না। মেয়েটাও আমায় দেখেনি। কাপড় পড়া প্রায় শেষের দিকে। সেলোয়ারের ফিতা বাধছে হঠাৎ আমাকে দেখতে পেয়েছে। চিৎকার করবে এমন সময় দৌড়ে গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলাম। এ ছাড়া আর কিছু করার ছিল না আমার। কেউ দেখে ফেললে অনেক সমস্যা হবে এটা জানা কথা। ওর মুখ ছাড়িনি ও আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে আর আমিও। মেয়েটা দেখতে অনেক কিউট, অনেক মায়া লুকিয়ে আছে তার চাহনিতে। কখনো কোন মেয়ের এত কাছে আসা হয়নি। খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। আমি জানি মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে ওর সারা শরীর কাঁপছে। ওর মাথা কাজ করছে না বোধহয়। ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিলাম, কিন্তু ও আবার চিৎকার করবে এমন সময় আবার ওর মুখে হাত দিয়ে কিছু না ভেবেই গলায় একটা চুমু দিয়ে বললাম। প্লিজ চিৎকার করবে না। সরি, আমি সত্যি ইচ্ছে করে কিছু দেখিনি আর আমি জানতামও না যে এই ঘরে কেউ আছে। কান্নার সুরে বললাম প্লিজ সরি। ও আমার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে এসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো আচ্ছা যাও কাউকে বলবো না।
তারপর আর কিসের ভিডিও করা আর কিসের কি। জানতে পারলাম ওর নাম মায়া। দুজন সারারাত বাহিরে বসে গল্প করলাম। বিয়ের কাজ শেষে একসাথে খেলামও। সবার আড়ালে ও আমাকে একবার খাইয়ে দিয়েছিল আর আমিও একবার। বিয়ে শেষে সবাই গাড়িতে গিয়ে বসছে বাসায় চলে আসবো। আমিও চলে আসবো কিন্তু কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছে। কোনকিছু থেকে দূরে চলে যাচ্ছি, ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন জানি। বিদ্যুৎ নেই অন্ধকার। গাড়িতে উঠবো এমন সময় মায়া দৌড়ে এসে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিছু বলার সুযোগই দিল না। চলে এলাম আমরা।
আজ কনের বাড়ি থেকে লোক আসবে কনে কে নিতে। আমার যদিও ভিডিও করার দায়িত্ব আছে তবুও ঘুম থেকে উঠছি না। ঘুমাতে ভীষণ ভালো লাগছে। হঠাৎ করে আমার রুমে কে যেন এসে আমার নাম ধরে ডাকলো। চোখ খুলে দেখি মায়া। ধুপ করে উঠে পড়লাম। তুমি এখানে কি করে? মায়া বললো, বোনকে নিতে এসেছি। কে তোমার বোন? ঐ বাড়িতে যার বিয়ে হয়েছে সে আমার মামাতো বোন। আচ্ছা ওখানে এসেছ ভালো কথা কিন্তু আমার কাছে এলে কি করে? বাসা চিনলে কি করে? আর কেউ দেখেনি তো? আচ্ছা তুমি এত টেনশন করছো কেন হৃদয়? আমি এসে তোমার খোঁজ করেছিলাম ওমন সময় তোমার আপুর সাথে পরিচয় হলো আপুই বললো যে, তুমি এই রুমে আছ। আচ্ছা বেশ তুমি বাহিরে ওবাড়িতে গিয়ে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মায়া চলে যাবার পর আপুকে দিলাম ঝাড়ি। আমি ঘুমাচ্ছি ও জানার পরেও আমার রুম কেন ওকে দেখিয়ে দিয়েছে। আপু বলে, মেয়েটা কিন্তু অনেক মায়াবী তোর সাথে অনেক মানাবে। আমি বললাম, হু ভালো। হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে গেলাম মায়ার কাছে। মায়া নীল শাড়ি পড়েছে কানে দুল পড়েছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। আমি ওকে দেখে লুকিয়ে চোখ মেরেছি আর মায়া দেখেই হাসি তো আর কি বলবো হাসি যেন থামেই না। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কনে কে নিয়ে সবাই চলে যাবে। মায়াও চলে যাবে তাই মন খারাপ লাগছে। আমি বাসার এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় মায়া এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমি চমকে গেলাম। কান্না করছ কেন মায়া? আমার তোমাকে ছাড়া থাকতে সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে। কবে আমায় নিয়ে আসবে তোমার কাছে? মায়ার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললাম, চিন্তা করো না খুব শিঘ্রই তোমায় নিয়ে আসবো। এবার মেয়েটা হেসে দিল। সত্যি তো নিয়ে আসবে হৃদয়? হুম মায়া সত্যি। সবার গাড়িতে ওঠা শেষে মায়াকেও গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম। ও চলে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ আমায় দেখা যায় দেখেই গেল। দূর থেকে লক্ষ্য করলাম ওর চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি মাটিতে গড়িয়ে পড়লো। কাছাকাছি নেই বলে মুছিয়ে দিতেও পারলাম না। মায়ার মায়ায় পড়ে যেন আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২১