এখন থেকে হাজার বছর আগে স্পেন ছিল একটি মুসলিম সাম্রাজ্য। উত্তর আফ্রিকার মুসলমান শাসকরা ছিল স্পেনের ভাগ্যবিধাতা। একসময় মুসলিম রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে স্থানীয় খ্রিস্টানরা তাদের কাছ থেকে সাম্রাজ্য কেড়ে নেয়। অনেক রক্ত ঝরার মধ্য দিয়ে মুর মুসলমানরা বিতাড়িত হয় স্পেন বা ‘হিস্পানিয়া’ থেকে। ৭শ’ বছর ধরে মুসলিমশাসিত স্পেন এখন ইউরোপের স্বাধীন-সার্বভৌম খ্রিস্টান রাষ্ট্র।
তবে রাজনৈতিকভাবে স্পেন থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন ঘটলেও মুসলিম সংস্কৃতিও যে তার সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তা বলা যাবে না। মুসলিম কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক, চিকিত্সক ও বিজ্ঞানীদের প্রভাব রয়ে গেছে স্পেনের ইতিহাসের পরতে পরতে। আর রাজরাজড়ারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও সাধারণ মুসলমানদের উত্তরপুরুষরা স্পেনের মাটিতে বাস করছেন পুরুষানুক্রমিকভাবে। তারা বাস করছেন মূলত আন্দালুসিয়ায়।
আপনি যদি আবদুল হেদি বেনাত্তিয়ার চায়ের দোকানে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটান, তাহলে ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাবেন আসলে আপনি কোথায় আছেন। মনে হবে দেশটি স্পেন নয়, উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত কোনো জনপদ। চায়ের কাপে চামচের টিংটিং শব্দ, আরবি ভাষার আলাপচারিতা, কর্নেস ডি গাজেলা নামের বাদামের শাঁস। সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন খদ্দেররা। সবাই হয় মরক্কোর বাসিন্দা অথবা তিউনিসিয়ান। কিন্তু আবদুল হেদির দোকান থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হাঁটুন, দেখবেন আপনি আবার স্পেনে, গ্রানাডার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
এই টিটেরিয়া বা চায়ের দোকানটি ওই এলাকার প্রায় এক ডজন চায়ের দোকানের মধ্যে একটি। ওখানকার মুসলিম সংস্কৃতির একটি বিশেষ স্মারক হিসেবে ধরা যায় এগুলোকে। এ যেন গ্রানাডায় উত্তর আফ্রিকার মুসলিম সংস্কৃতির রেনেসাঁ। আবদুল হেদি বেন্নাতিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আমরা এখানে দোকান দেয়ার আগে এ রাস্তায় মানুষের খুব বেশি চলাচল ছিল না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর।’
জায়গাটায় ছিল দুনিয়ার সব বাজে আর বখাটের আড্ডা। বারাঙ্গনাদের উপদ্রবে ভরা। কিন্তু হেদির দাবি, তারা ওখানে যাওয়ার পর থেকে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। জায়গাটাকে তারা ভদ্রলোকের পদচারণার উপযোগী করে তুলেছেন। এখন এখানে আছে ঝকঝকে সব দোকানপাট; সন্ধ্যা হলেই জ্বলে ওঠে নানা রঙের আলো। মরক্কো আর তিউনিসিয়ায় তৈরি নানারকম হস্তশিল্পজাত দ্রব্যে দোকান ভর্তি। ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজে আরবি সঙ্গীত। কেবল প্রার্থনার সময়টায় বন্ধ থাকে।
১৯৮০ সালে কালদেরিয়া নুয়েভায় প্রথম এসেছিল আবদুল হেদি বেনাত্তিয়ার মতো লোকেরা। তখন ওখানে জায়গার দাম ছিল প্রায় পানির দামেই। সে থেকেই শুরু অখ্যাত, অবজ্ঞাত ওই জায়গায় ইসলামিক আন্দালুসিয়ান সংস্কৃতির আধুনিকায়ন। বেনাত্তিয়া এমনিতেই তিউনিসিয়ান ইতিহাসবিদ, ওখানে ব্যবসা করছেন রেস্টুরেন্টের। ইতিহাসের আলোকেই তিনি বললেন, ‘গ্রানাডায় ইসলামী অনুশাসন অনুসৃত হচ্ছে। এটা সে ইসলাম, যা ৭ম থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকায় প্রচলিত ছিল। ইসলামের সহিষ্ণুতা ও উদারতাই এই চর্চার মূল বিষয়।’
বিবিসি অবলম্বনে(আমার দেশ)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




