বহুল আলোচিত জিএসপি সুবিধা অবশেষে স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র।মন খারপ করেছেন?দুঃখ পেয়েছেন?গার্মেনটস শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়েছেন?হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। দেশের সবচেয়ে বিকশিত শিল্প,বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় উৎস এই খাত।তার উপর এমন খড়গ নেমে আসাটা দুঃসংবদই বটে।
তবে আমি কিন্তু একটু আলাদাভাবে চিন্তা করি।গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ কি?আর কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা সময় বলে দেবে,তবে মন খারাপ কিন্তু আমি একেবারেই করিনি দুঃখ পাওয়া তো বহু দুরের কথা।
পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরী পোষাকের চাহিদা আকাশচুম্বী।কিন্তু কেন? চিন্তা করেছেন কখনো?আমেরিকা জার্মানির মত দেশে ভাল মানের কাপড় তৈরী হয় না?অবশ্যই হয়।কিন্তু সেটা করতে যে খরচ হয় তাতে তার মূল্য হয় অনেক বেশী।হবে না?এত সস্তা মূল্যের শ্রম কি অন্য কোন দেশে পাওয়া যায়?আর এই সস্তা শ্রমকে পুজি করে দেশের গার্মেনটস শিল্পের মালিকরা কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। বহুজাতিক কম্পানী গুলো যে তার কয়েকগুন মুনাফা করছে তা তো বলাই বাহুল্য।ধনী আরো ধনী হচ্ছে।কেবল ধনী না, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।শুধু পরিবর্তন হচ্ছে না ঐ হতভাগ্য শ্রমিকদের ভাগ্য।
অবশ্য কিছুই হচ্ছে না তা আমি বলব না।কয়েক বছর আগেও বেকার সমস্যা ছিল বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা।গার্মেনটস শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান হওয়ায় কিছুটা হলেও তা কমেছে।অসহায় নারীদের একটা বড় অংশ নিজের পায়ে দাড়িয়েছে।তাছাড়া রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ব্যাপারটাও অস্বীকার করার উপায় নাই।
এমন ভাল আর মন্দ নিয়েই চলছিল এতদিন।কিন্তু এখন?অগ্নিকান্ড, ভবনধস একের পর এক দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অসহায় সেই শ্রমিকদের উপর কি অবিচার করা হচ্ছে।নামমাত্র বেতন নিয়ে,গায়ের রক্ত পানি করে,দিনরাত পরিশ্রম করে যে শ্রমিকগুলে দেশের এত বড় একটা শিল্প টিকিয়ে রেখেছে তাদের জীবনের এতটুকু নিরাপত্তা নেই।এক একটি দুর্ঘটনায় ওরা পোকামাকড়ের মত মরে।শত শত নয়,হাজার হাজার।আর তারপর কি হয় জানেন? লোক দেখানো মামলা,জাতীয় শোক,পত্রিকায় লেখালেখি আর নামমাত্র ক্ষতিপূরণ, কখনো বা তাও না।
কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না।জিএসপি স্থগিত হয়েছে,আমরা দুঃখ পাইনি।বরং আশায় বুক বাধছি যে এবার হয়ত কর্তাদের টনক নড়বে।হতভাগ্য শ্রমিকগুলোর জন্য না, হয়ত নিজেদের স্বার্থেই কিছু একটা ব্যবস্থা নেবে এটুকুতো আশা করতেই পারি কি বলেন?