somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিনে ৩২জন রোগীর মৃত্যু..সর্বনাশ..(প্রসঙ্গ : চিকিৎসকের অবহেলা)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৩ সালের কথা।
রাজশাহী-ময়মনসিংহ যাত্রাপথে কোন এক হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে যাত্রাবিরতিতে ছিলাম। এক সফরসঙ্গী (যিনি ছিলেন বিনার একজন সিনিয়র সাইন্টিস্ট) খবরের কাগজে একটা খবরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
"ভুল চকিৎসায় দৃষ্টি হারালেন ১৪ জন" এই ছিল খবরের শিরোনাম। খুব দুঃখের খবর। সবাই আহা উহু করা শুরু করল। আহারে ১৪ জন মানুষের চোখ নষ্ট করে ফেলল..
কি নিষ্ঠুর..কি নিষ্ঠুর !

স্বজাতির নিষ্ঠুরতার এমন খবরে যথেষ্ট অভ্যস্ত কিনা তাই খবরের ভিতরটা পড়তে শুরু করলাম।

কি বের হল জানেন?
কয়েকজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বিশেষ এক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বৃদ্ধদের চোখের অপারেশন বিনামূল্যে করে বেড়াচ্ছেন। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার অপারেশন করেছেন এর মধ্যে ১৪ টি অপারেশন সফল হয়নি।
এবার আমার পালা। সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম এখানে সাকসেস রেট প্রায় ৯৯.৪৬% এর মত। সবচেয়ে বড় কথা এরকম চমৎকার একটা কাজেরও এইরকম নিন্দা করে পত্রিকায় খবর আসে। অথচ কি প্রশংসনীয় উদ্যোগটাই না তিনি নিয়েছেন চিন্তা করা যায়?

আসুন বর্তমান পরিস্থিতিতে..
প্রতিদিন একটা সরকারী হসপাতালে কতজন মারা যাবে তা কখনোই পরিসংখ্যান দিয়ে পূর্বানুমান করা যাবে না। আমার পেডিয়াট্রিকের এক নাইটে(১১ ঘন্টা) ৫ বাচ্চার ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে হয়েছে। তাহলে তিনটা ইউনিটে চব্বিশ ঘন্টায় যদি হিসাব করা হয় তাহলে শুধু এক শিশু বিভাগেই একদিনে ১৫ টা বাচ্চা মারা যেতে পারে। কার্ডিওলজি, নিউরোমেডিসিন, ক্যাজুয়ালটি, গাইনি, সার্জারী ওয়ার্ডগুলোর কথা তো বলিইনি।

সবচেয়ে বড় কথা হরতাল অবরোধে যখন রোগী হাসপাতালে আসছে হার্ট এটাকের ২ দিন পর..কিংবা পেট্রল বোমায় প্রতিদিন কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। সেখানে মৃত্যুর হার একটু বেশী হওয়া টাই তো স্বাভাবিক, তাইনা?

"ডাক্তারের অবহলায় রোগীর মৃত্যু" খুব জনপ্রিয় একটা বাক্য। খবরের কগজের কাটতি বাড়াতে এরকম মুখরোচক খবরের বড়ই চাহিদা।

সরকারী মেডকেল নিয়ে নাক সিটকানো লোকের অভাব নাই। আজ এই বিষয় নিয়ে একটু বলব। শুধু ডাক্তারদের পক্ষে সাফাই গাইতে নয়। পাঠকরা যেন প্রতারিত না হন সেটাও আমার একটা উদ্দ্যেশ্য।

প্রাইভেট ক্লিনিকের চকচকে বিছানা বালিশ..ঝকঝকে দেয়াল, মেঝে, বাথরুম..চাইলেই ডাক্তার নার্স আয়া। বিভ্রান্ত আপনি হবেনই। এরপরেও আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি সঠিক চিকিৎসা যদি হয় তা ওই সরকারী মেডিকেলেই।

এখানে থাকে একঝাক ইন্টার্ণ ডক্টর, বিশ্বাস করেন আর নাই করেন আপনার বাবার মৃত্যুতে আপনার পর যে মানুষটা বেশী কষ্ট পায় সে হল এই জুনিয়র ডাক্তার। নিশ্চিত থাকতে পারেন সম্ভাব্য সবকিছু সে করবে একটা রোগীকে বাচানোর জন্য।

তাহলে কেন মনে হয় যে সে অবহেলা করছে?
কারণ স্যালাইন বন্ধ হয়ে গেলে সাথে সাথে নতুন একটা লাগিয়ে দেয়ার জন্য ছুটে যাওয়ার সময় সে পায় না..একটু ধৈর্য ধরুন না..এই কাজে ১৫/২০ মিনিট দেরী হলে রোগীর কোন ক্ষতি হবে না।
আপনাকে চিকিৎসার সকল ধাপ সে ব্যাখ্যা করতে পারবে না সময়র অভাবে। কিন্তু মনে রাখবেন খারাপ রোগীগুলোর লিস্ট মনে মনে সে ঠিকই তৈরী করে রেখেছে। প্রয়োজনে প্রফেসর বা সিনিয়রদের পরামর্শ নিচ্ছে যে কি করা যায়?

ইমার্জেন্সি এডমিশন ওয়ার্ডগুলোতে সবসময় একজন সিনিয়র ডাক্তার থাকে যেটা তথাকথিত ক্লিনিকগুলোতে থাকার প্রশ্নই আসে না। আপনার রোগী হয়ত উনি দেখতে আসছেন না তাই আপনার মন হচ্ছে আপনি অবহেলার শিকার। কিন্তু যে রোগীর প্রয়োজন তার কাছে তাকে সেই ইন্টার্ণ ডাক্তারই নিয়ে যাচ্ছেন। আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু আপনার রোগী অবশ্যই সেখানে একটা অবজার্ভেশনের মধ্যে আছেন যেটা প্রাইভেট মেডিকেলে কোনদিন সম্ভব না।

তাহলে কি ১০০% ভাল চিকিৎসা হচ্ছে সরকারী মেডকেলে?
না হচ্ছে না..হসপিটালে আউটডোর ট্রিটমেন্ট ব্যাবস্থা এখনও খুব ভাল নয়। এর কারণ রোগীর সংখ্যা। এত বেশী রোগী একজন ডাক্তারকে দেখতে হয় যে যথেষ্ট সময় নিয়ে দেখার সময় পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বাইরে দেখালে হয়ত সেবা একটু ভাল পাবেন।

অপারেশনের দীর্ঘসূত্রিতা সবচেয়ে বড় সমস্যা। ওটি এবং এনেস্থেশিয়ার চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে অপরেশনের লম্বা সিরিয়াল আপনার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবে এমনকি এটা ১৫ দিন থেকে এক মাস বা তার বেশীও হতে পারে। কাজেই আপনি দ্রুত ব্যবস্থা পেতে চাইলে প্রাইভেটের দ্বারস্থ হতেই হবে।

যন্ত্রপাতির সমস্যা সরকারী হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সমস্যা। চক্ষু/নাক কান গলার মাইক্রোস্কোপ কিংবা এক্সরে মেশিন সরকারী হাসপাতালে হয়ত সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলের। যেখানে ছোটখাটো ক্লিনিকেও ডিজিটাল এক্সরের ব্যবস্থা থাকে।

সমস্যার আসলে শেষ নেই। একটু চিন্তা করে দেখুন সরকারী "সোনালী ব্যাংক" আর বেসরকারী "ডাচ বাংলা ব্যাংক" এর সেবার মধ্যে কি আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেখানে সরকারী হাসপাতাল অনেক সেবাই আপনাকে দিচ্ছে অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালভাবে এবং প্রায় বিনামূল্যে।

তবে যেকোন ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে স্ট্রোক, হার্ট এটাকের মত সমস্যা বা হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা, এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি আপনার রোগী নিয়ে যাবেন সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাইরের চাকচিক্য দেখে বিভ্রান্ত হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে আপনি অর্থের সাথে হারাবেন মূল্যবান কিছু সময়ও যেটুকু হয়ত আপনার রোগীকে বাঁচাতে সহায়ক হতে পারত।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×