somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিশরের গণভোট ও গণতন্ত্রের সংকট

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিশরে নতুন সংবিধানের জন্য গণভোট অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সরকারীভাবে ইতিমধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে- শতকরা ৬৩.৮ ভাগ হ্যাঁ ভোট পড়েছে আর শতকরা ৩৬.২ ভাগ পড়েছে নতুন সংবিধানের বিপক্ষে। মিশরের সরকার-বিরোধীরা গণভোটের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এ ফলাফলকে তারা আদালতে চ্যালেঞ্জ করবে।ফলাফল যাইহোক আমার কাছে সেটা মুখ্য নয় মূখ্য হল গণতন্ত্র। মিশরের গণভোট নিয়ে যা ঘটে গেল এবং যা ঘটতেছে বা যা ঘটবে তাতে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের গণতন্ত্রদাবীনামার মুখোশটা সজোরেই খুলে দিয়েছে। বিগত কয়েকদিন ধরে মিশরের গণভোট সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যমসহ, ব্লগ, ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল বা আছে।
মিশরবাসীও এই প্রস্তাবিত সংবিধানের পক্ষে ও বিপক্ষ নামে দুইভাগ হয়ে পড়েছে। সমাজের সেক্যুলার শ্রেণীর দাবি প্রস্তাবিত সংবিধান সংখ্যালঘু ও নরীদের সমান অধিকার সুনিশ্চিৎ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি তা সত্যিই করে থাকে তা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং বর্জনীয় ।এতে কোন দ্বিমত থাকার কথা না কিন্তু আমি কোন সোর্স থেকে পাইলাম না সেই প্রস্তাবিত সংবিধানের কোন আইনটি নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার হরন করে। কারো জানা থাকলে অবশ্যই জানানোর অনুরোধ থাকলো।

আমি যেটুকু পেলাম আর্টিকেল ২ ইসলাম রাস্ট্রধর্ম, প্রিন্সিপাল অফ ইসলামিক শরীয় হল আইনের অন্যতম উৎস কিন্তু কোন কোন আইন এখানে উল্লেখ করা আছে তা জানা দরকার। শুধু শরীয়া আইনের উৎস বললেই তো এখানে শেষ হয় না । আর্টিকেল ৪ এ আল আজহার বিশ্বদ্যিালয়কে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয়েছে।
এখন আসি শরীআ আইনের কথায়। আমি যতটুকু জানি শরীয়া আইনে সবচেয়ে বাজে আইন হল ব্যভিচারের দায়ে পাথরছুড়ে হত্যা আর হিজাব সবার জন্য বাধ্যতামুলক করা।আমার জ্ঞাতনুসারে এই দুইটির একটিও প্রস্তাবিত সংবিধানে নেই আর শরীয়া আইনে সংখ্যালঘুদের বিচার করা কোন ইসলামিক আইনের মধ্যে পড়ে না ।

ইসলাম রাস্ট্রধর্ম এটা আমাদের দেশেও আছে পছন্দ করি আর না করি কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল প্রস্তাবিত সংবিধানটি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত বা অনুমোদিত হবে না কিন্তু আমাদের দেশে তো গণভোট ছাড়াই সংবিধানে ইসলামকে রাস্ট্রধর্ম যুক্ত করা হয়েছে যা আপনি আমি পছন্দ না করলেও আমাদের করার কিছু ছিল না বা নেই কিন্তু মিশরীয়দের তো সবচেয়ে বড় সুযোগ আছে ”না “ ভোট দেওয়ার অধিকার । তাহলে কেন তারা ”না” ভোট প্রয়োগ করে প্রস্তাবিত সংবিধান বাতিল না করে রাস্তায় নামল ? এতে কাদের স্বার্থ আছে ? এভাবে রাস্তায় আন্দোলন হতে থাকলে নিশ্চয় তা মিশরীদের স্বার্থ রক্ষা করবে না ।

গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদন এর চেয়ে উত্তম কোন পদ্ধতি আছে কি ? আমার জানা নেই । তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এ পর্যন্ত কয়টি সংবিধান ও কোন সংশোধনী গণভোটের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছে ? গুটি কয়েক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে যদি সংবিধান অনুমোদন হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে গণতন্ত্র বলে না, বলে পরোক্ষ স্বৈরতন্ত্র। গণভোটই হল তথাকথিত কুশীলবদের বড় ভয়।

তাছাড়া প্রস্তাবিত সংবিধানের জন্য যে গণভোট সেখানে তো হ্যাঁ আর না দুইটা অপশন আছে । যদি কেউ প্রস্তাবিত সংবিধানকে উপযোগী মনে না করেন তাহলে না ভোট দিয়ে আসুন । সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতই তো গণতন্ত্র । না ভোট জয়যুক্ত হলে প্রস্তাবিত সংবিধান বাতিল হবে এ তো ধ্রুব সত্য আর হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে মেনে নিতে সমস্যা কোথায় যদি আপনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হন ?

না, আমি কোন শরীয়া বা ইসলামিক আইনের পক্ষে কথা বলতেছি না বা বিপক্ষেও বলতেছি না যদি সেটা মিশরীয়রা পছন্দ করে । শরীয়া আইনের ক্ষেত্রে আমার নিজের বেলায় যেমন না ভোট দিতাম তেমনি হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে সেটাও মেনে নিতাম কারন আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমার পছন্দের প্রার্থী জয়ী না হলে সেই ফলাফল আমি মানব না তা গণতন্ত্র হতে পারে না।

সমস্যাটা অন্য জায়গায় এবং সেটা মিশরেও ততোধিক নয় । সমস্যাটা হল যুক্তরাস্ট্রের, ইসরায়েলের, সমস্যাটা হল পশ্চিমাদের এবং সমস্যাটা হল দেশের সেই কুশীলবদের যারা পশ্চিমাদের চাটুকারী করে জীবীকা নির্বাহ করে। যারা মোবারক আমলের প্রধান সুবিধাভোগী।আর কয়েকদিনের মধ্যে জানতে পারবেন মিশরে প্রস্তাবিত সংবিধান বিরোধী আন্দোলনের জন্য কত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে।পশ্চিমাদের সেবাদাস এক মোবারক গেছে তাইতো মিশরে এখন আর একজন সেবাদাসের দরকার হয়েছে না হলে যে পশ্চিমাদের প্রিয় জারজ সন্তান ইসরায়েলের অস্তিত্ব সংকট। ইসরায়েলের প্রতিবেশী মিশর, সিরিয়ারমত দেশেগুলি যতদিন অস্থিতীশীল থাকবে ততদিনতো ইসরায়েলেরই লাভ আর পশ্চিমাদের লাভ তেলসমৃদ্ধদেশগুলিকে নিয়ন্ত্রন করা আর লুটপাট করা।বলা হয়ে থাকে মোবারকের পতন ইসরায়েলের জন্য ভূকম্পন।

আসলে মিশরে যা চলছে তা ক্ষমতার লড়াই কিন্তু জনমতকে উপেক্ষা করে যদি সেই লড়াই হয়ে থাকে তাহলে এর পরিণতি যে কখনোই যে শুভ হয় না তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।তাহলে শেষ পর্যন্ত কি বিপ্লব তথা মোবারক উৎখাতের ফলাফল ভোগ করবে পশ্চিমারা ও ইসরায়েল ?

অবশ্য প্রেসিডেন্ট মুরসিরও বিচক্ষনতার পরিচয় দিতে পারেননি। তিনি আগে ভাগেই তার ক্ষমতা বাড়াতে ডিক্রী জারী করে একটা মহাগ্যামজ্যাম বাধিয়ে দিয়েছিলেন যা ডিক্রী বাতিল করেও তার মাশুল দিতে পারেননি এবং এর মাশুল তাকে আরো দিতে হবে। হয়তো সেদিকেই এগুচ্ছে মিশর।স্যালভেশন পার্টির নেতা তো ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন যে ব্যাটল কেবল শুরু । এরপর তারা এখন ফলাফল নিয়ে যাবে কোর্টে । আর কোর্ট তো মোবারক পন্থিরাই নিয়ন্ত্রন করে । এই কোর্টেই কয়েকমাস আগে নির্বাচিত সংসদকে অবৈধ ঘোষনা করেছে। যদি আবার তাই হয় তাহলে মিশর কোন দিকে যাবে বলা মুশকিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:০৫
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×