somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মার্কিন-তালেবান চুক্তি এবং আফগানিস্তানের ভবিষ্যত

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ আলোচনার পর আফগানিস্তানের তালেবানদের সাথে আমেরিকার চুক্তি এবং সৈন্য প্রত্যাহার ঘোষণাকে অনেকেই আমেরিকার পরাজয় হিসাবে দেখছেন। টুইন টাওয়ারে হামলার পর যে তালেবানকে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎখাতের জন্য আমেরিকা আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছিল দীর্ঘ ১৯ বছর পর কয়েক লাখ মানুষের প্রাণ এবং ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয় ক্ষতির পর সেই তালেবানের সাথে চুক্তি করেই আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে এই অর্থে আমেরিকার এটা অবশ্যই পরাজয়! কিন্তু আমেরিকা কি সত্যি আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি বিদায় নিবে যেমনটা নিয়েছে ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে? নাকি তালেবানের সাথে চুক্তি আমেরিকার নতুন কোন কৌশল?

সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য আমেরিকা হাতে ১৪ মাস সময় নিয়েছে। প্রথম চারমাসে কয়েক হাজার এবং বাকি সময়ে বাদবাকি সৈন্য প্রত্যাহারের কথা বলা আছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই ১৪ মাসের মধ্যে কি ঘটবে? এই ১৪ মাস সময়ের মধ্যে আমেরিকা কি সত্যি আফগানিস্তান থেকে শেষ সৈন্যটি প্রত্যাহার করবে? আমেরিকার শেষ সামরিক বিমানটি কি আফগানিস্তানের মাটি ত্যাগ করে অগস্ত যাত্রা করবে? নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর আমেরিকা এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে? চুক্তি যথাযথভাবে মেনে চলার ইতিহাস আমেরিকার নাই। আমেরিকা কি সত্যি তালেবানদের উপর আর কোন আক্রমণ চালাবে না? তালেবানরা কি এই চুক্তি মেনে চলতে পারবে? তালেবানরা কি তাদের জঙ্গী নীতি ও আদর্শ পরিত্যাগ করেছে? তালেবানরা কি নারীদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করেছে নাকি করবে? তালেবানরা ইসলামি শরীয়া ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিত্যাগ করবে? তালেবানরা কি স্বাভাবিক রাজনৈতিক দলের মত আচরণ করবে? আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে পাশ কাটিয়ে আমেরিকা তালেবানের সাথে চুক্তি কেন করলো? চুক্তি বা আলোচনা সরকার এবং তালেবানের মধ্যে হল না কেন? যে তালেবান মার্কিনের সাথে আলোচনা তালেবানের উপস্থিতি মেনে নেয়নি সেই তালেবান পরবর্তীতে সরকারের সাথে আলোচনা করে শান্তি চুক্তি করবে? আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কি দেশের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম? এখন আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের ভূমিকা কি হবে? আফগান সরকার ইতোমধ্যেই এই চুক্তি প্রত্যাখান করেছে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশি পাকিস্তান ও ইরানের ভূমিকা কি হবে? এই চুক্তিকে ইরান সন্দেহের চোখে দেখতেছে। আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকা কি হবে? তালেবানদের ক্ষমতায়ন নিশ্চয় ভারতের জন্য ভাল নয়। এইসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে নিহিত আছে আফগানিস্তানের ভবিষ্যত।

এইখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভাল। সোভিয়েত ইউনিয়নকে উৎখাতের পর পাকিস্তান ও সৌদির সহায়তায় তালেবানকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছিল আমেরিকাই। পৃথিবীর মাত্র তিনটি দেশ আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল-পাকিস্তান, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। সেই সময় তালেবানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল উত্তরাঞ্চলীয় জোট ও তার নেতা আহমেদ শাহ মাসুদ। আহমেদ শাহ মাসুদ পানসিরের সিংহ নামে পরিচিত। টুইন টাওয়ারে হামলার মাত্র দুইদিন আগে তালেবানরা আহমেদ শাহ মাসদকে গুপ্ত হত্যা করে। সেই আহমেদ শাহ মাসুদের ডান হাত ছিলেন আফগান সরকারের বর্তমান নির্বাহী প্রধান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন এবং পরাজিত হয়েছিলেন। কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আবারও যুদ্ধের মাঠে ফিরে যাওয়ার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে সরকারের নির্বাহী প্রধানের পদ দিয়ে সমঝোতা করেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটেছে। আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন এবং তিনি আবারও যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। এবার তাঁর সাথে যোগ দিয়েছেন আর এক লড়াকু যোদ্ধা রশিদ দোস্তম!

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই ছিল বিদেশের মাটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার। তালেবানের সাথে চুক্তি করে কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করে সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প হয়তো কিছু সুবিধা অর্জন করতে চাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে লোক দেখানো হলেও ট্রাম্পের কিছু রাজনৈতিক সফলতা দরকার। ইরান বা উত্তর কোরিয়ার সাথে চুক্তি যখন হওয়ার সম্ভবনা আপাতত নেই তখন তালেবানের সাথে চুক্তি ট্রাম্পের শেষ ভরসা। ট্রাম্প সেটাই গিলেছেন মাত্র।

আমাদের মনে রাখা দরকার আমেরিকা বিদেশের মাটিতে সামরিক ব্যয়ের বোঝা বহন করতে চাচ্ছে না। তাই কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করে অল্প কিছু সৈন্য রেখে দেওয়া আমেরিকার এখন স্ট্রেটেজি। ইরাক থেকে আমেরিকা প্রত্যাহার করে আইএস সৃষ্টি করে আমেরিকা আবার ফিরে এসেছে। এখন ইরাকে মোটে পাঁচ হাজারের মত মার্কিন সৈন্য আছে। ইরাক সরকার ও সংসদ চাইলেও আমেরিকা তা প্রত্যাহার করছে না। উল্টো হুমকি ধামকি দিচ্ছে! সিরিয়ায় জোর জবরদস্তি করে আমেরিকা রয়েছে। তাই আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে এটা ভাবা বোকামি হবে।

আফগানিস্তানের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারকে পাশ কাটিয়ে তালেবানের সাথে আমেরিকার চুক্তি আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মত অবস্থা। এখন আফগান সরকার ও তালেবান মুখোমুখি অবস্থানে। আফগানিস্তানে নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলোও প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। হয়তো আমেরিকার এখন এটাই কৌশল হতে পারে। স্বল্প সংখ্যক সৈন্যের উপস্থিতি নিয়ে আমেরিকা সে দৃশ্য শুধু উপভোগ করবে। মাঝে মাঝে সাপ হয়ে দংশন করবে ওঝা হয়ে ঝাড়বে। তবে আফগান সরকার, তালেবান এবং বিভিন্ন গোত্র, দল-উপদল বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে নিজেদের মধ্যে শান্তি আলোচনা করে ঐক্যমত্যে পৌঁছিয়ে আমেরিকাকে চিরদিনের জন্য আফগানিস্তানের মাটি থেকে বিদায় করতে পারলে আমরা নতুন এক গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান দেখতে পারব।তাহলে প্রকৃত অর্থেই হবে আমেরিকার পরাজয়।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×