somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছদ্মবেশি ( পর্ব------১)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্পর্শটা গভীর রাতে অনুভব করি। ঘড়ির কাটাটি যখন ২ টায় যায়, তখনি মনে হয় কেউ একজন আমাকে স্পর্শ করছে, চাদরের নীচ থেকে আলতো করে আমার পা টাকে ধরে রাখে। মাঝেমাঝে খুব চিৎকার করতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারিনা, ভীষন কষ্ট হয়। ইদানিং যাবত এ ঘটনাটি আমার সাথে হচ্ছে। সাঈফকে অনেকবার ব্যাপারটি বলেছি,কিন্তু ও বিশ্বাস করলোনা ।

আমি মাইশা পেশায় একজন উকিল আর আমার স্বামী সাঈফ যিনি একজন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসায়ের সুবাধে ১ সপ্তাহ আগে আমরা নীলাস্বরীর এই ৩২ নং বাড়িতে চলে আসি। বাড়িটি আমার দাদা শ্বশুরের আমলের, আমার শ্বশুর ইন্তেকালের পর আমার শাশুড়ি তার ছেলে - মেয়েদের নিয়ে তার ভাইয়ের বাড়িতে অবস্থান করেন। আর সেখানেই থাকতে শুরু করেন। সাঈফের সাথে আমার বিবাহ ও হয় তার মামার বাড়িতে। বেশ ভালোই আমাদের সকলের দিন কাটছিলো, কিন্তু কয়েকদিন আগে আমার শাশুড়ি মা একটু অসুস্থ হয়ে যায়, তখন তিনি তার শেষ ইচ্ছেটা প্রকাশ করে। তার নাকি শেষ ইচ্ছে ----- তার শেষ নিশ্বাসটা তার স্বামীর বিটে ত্যাগ করবে, আর তাই তিনি তার ভাইয়ের বাড়িতে আর থাকতে চাননা। তাছাড়া সাঈফের ব্যবসায় বানিজ্য সব এখানে হওয়াই আমি ও চেয়েছি চলে আসতে। আর বিয়ের পর লোকের মুখে অনেক শুনেছি যে ---আমার শ্বশুরঘর নাকি রাজপ্রাসাদের মতো। আমার আবার ছোটবেলা থেকেই রাজপ্রাসাদ দেখার খুব শখ ছিলো আর এখন যদি তা আমার শ্বশুরকুলেই হয় তাহলে তো কোনো কথাই নাই। তাই স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের সাথে দিব্যি খুশীতে নিজের শ্বশুর বাড়ি চলে আসি।

বাইরে থেকে বাড়িটিকে দেখেই আমি প্রথম দিনেই মুগ্ধা, ঠিক যেনো রুপকথার দেশের রাজার বাড়ির মতো। না জানি ভিতরে কতটা সুন্দর, এ চিন্তাধারা করতে- করতে বাড়ির ভিতরে পা রাখা মাএই খুব বেশি বিস্মিত হলাম। কেননা বাড়িটির ভিতরটা এতটাই সুন্দর যে একটা কথা না বলে পারলাম না --- আমার দাদা শ্বশুরের চয়েজ আছে, এতো সুন্দর বাড়ি ছেড়ে কেন যে আমার শাশুড়ি তার ভাইয়ের বিটে পড়েছিলেন আল্লাই জানে।
পরক্ষণে আমি আমার প্রশ্নটার উওর পেয়ে যাই । আসলে আমার শ্বশুররা ছিলেন ২ ভাই, আমার শ্বশুর হচ্ছে ছোট ভাই, আর আমার শ্বশুরের বড় ভাই বিনদেশি অথ্যাৎ অন্য দেশের মেয়েকে প্রেম করে বিয়ে করায় আমার দাদা শ্বশুর তাকে তেজ্যপুএ করে, আর আমার শ্বশুরকে পুরো বাড়ি দিয়ে দেয়। খুব অল্পবয়সে আমার শ্বশুর কোনো এক বড় রোগে ইন্তেকাল করেন, আর এই পুরো বাড়িতে আমার শাশুড়ি তখন একা থাকতে পারবেননা বিধায় তার ভাইয়ের বাড়িতে চলে যান। অবশ্য একা থাকতে তো ভয় লাগারেই কথা, কেননা বাড়িটির আশেপাশে আর কোনো বাড়িঘর নেই, ২-৩ মাইল হেটে গেলে পরশেষে কোনো ঘর - বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়, আর তাছাড়া আর ও একটা অবাক করার বিষয় হচ্ছে বাড়িটির দক্ষিন পাশের ২ বিঘা জমির উপরে গড়ে উঠা কবরস্থানটি।

যাইহোক বাড়িটির সৌন্দর্য অবলোকনে ব্যাস্ত ছিলাম অনেকক্ষণ, হঠ্যাৎ একজন বয়স্ক লোক আমার লাকেজটা টেনে উপরের ঘরের দিকে চলে গেলো। লোকটার পোশাকআশাক,আর চালচলন দেখে আমি বাড়ির সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করে লোকটিকে নিয়ে ভাবতে থাকলাম। কেননা লোকটির পরনের ছেড়া পান্জাবী, আর পায়জামায় তাকে এতটাই কুৎসিত লাগছিলো যে মনে হলে --- এনি জিবনে কখনো গোসল করেনি, আর তার থেকে ও বেশি অদ্ভুত লেগেছে লোকটির মুখের একপাশ গামছা দিয়ে ঢাকা থাকায়। লোকটার এরুপ চালচলন আমাকে বেশ অবাক করেছে। হঠ্যাৎ আমার শাশুড়ি মা আমার কাছে এসে আমাকে বলে উঠলো -- কি হলো বউ মা, তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?
---- না, মা আসলে এই লোকটি কে?
----- ও এনি,রহিম ভাই,আমাদের বেশ পুরোন ও বিশস্ত চাকর। তোমার শ্বশুর মারা যাওয়ার পর আমি যখন আমার ভাইয়ের বাড়ি চলে যাই, সেই থেকে এনিয়ে আমার এই বিশাল বাড়ি দেখছে।
--- ও। কিন্তু মা এনির বেশভূষা এবং চেহারার এই অবস্থা কেন?
---- সেটা তো আমি ও ভাবছি মা, আগে তো এরকম ছিলো না, বেশ হাসি খুশী ও ছিলো,হয়তো দিন- দিন শরীর অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে তাই এই অবস্থা। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা না করে উপরে যাও একটু বিশ্রাম নেও, অনেকদূরের পথ থেকে এসেছো।
শাশুড়ি কথায় আমি নিজের এসব আজগুবি চিন্তা থেকে একটু অবসর নিলাম, আর নিজেকে এই বলে শান্তনা দিলাম --- পেশার খাতিরে মানুষকে জেরা করতে -- করতে আজকাল এটাকে অভ্যাস নামক স্হানে ও তালিকা দিয়ে ফেলেছি।

আমার শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে মাঝেমাঝে ভাবি --- ভাগ্য করে তবে এমন শাশুড়ি পাওয়া যায়। আমি সত্যিই সবদিকে লাকি, কেননা আমি এমন একটা পরিবারের বউ হয়ে এসেছি যে আমার মনে হয় আমি একজন শাশুড়ি নয় একজন মা পেয়েছি, একজন ননদ নয় বরং একজন বোন পেয়েছি। যাইহোক শাশুড়ি মায়ের কথা মতো আমি আর সাঈফ উপরে গেলাম। উপরে গিয়ে দেখি উওর পাশের একটা রুমে আমার লাকেজটা রাখা। সাঈফ আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বললো --- মাইশা আজ থেকে আমরা এই ঘরে থাকবো।
কিন্ত কেন জানি ঘরটা আমার পছন্দ হলো না, তাই সাঈফের কথায় কোনো উওর না দিয়ে মনমরা হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই এবংআনমনা হয়ে হাটতে -- হাটতে দক্ষিন দিকে চলে যাই। হঠ্যাৎ ধ্যান থেকে বাসস্তবতায় ফিরে খুব অবাক হলাম এই ভেবে যে ---- আমি এখানে কখন আসলাম, সাঈফ হয়তো আমাকে খুজছে। এই ভাবনা করতে-- করতে যখন হাটতে থাকলাম হঠ্যাৎ শিতল এক বাতাসের স্পর্শ খুজতে গিয়ে আমি একটা ঘরে ঢুকে পড়ি। ঘরটি এতটাই সুন্দর যে তার উপমা ব্যাখ্যা করার সাধ্য আমার নেই, তবেঘরটা দেখে আমি যেন কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। ঘরটার মধ্য ৬ টি জানালা এবং তিনটি দরজা তবে তার মধ্য কেন জানি একটি দরজা বন্ধ ছিলো। কেন বন্ধ? সেই কৌতুহল নিবারণের জন্য যখন দরজারটার নিকটে যাই তখন চোখ পড়ে ঝুল বারান্দার পানে। খুুুব অবাক হয়ে যাই ---- সাঈফের আমার প্রতি এরুপ আচরন দেখে, কেননা ও জানো যে আমার ঝুলবারান্দা যুক্ত ঘরে থাকার খুব ইচ্ছে। ছোটবেলায় রুপকথার রাজ্যের রাজার ঝুলবারান্দার বণর্ণা শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যে তখন থেকে মনে ইচ্ছে পোষণ করি বড় হয়ে ঝুলবারান্দা যুক্ত বাড়ি তৈরি করবো। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হতে পারা শর্তে ও হবেনা? না এটা কখনো হতে পারেনা। এই চিন্তাধারায় মগ্ন ছিলাম, হঠ্যাৎ দেখি সাঈফ খুব রাগান্বিত ভাবে ঘরে ঢুকলো।
আমাকে ভীষন রাগীমাখা স্বরে জিজ্ঞাসা করলো ------ তুমি এই ঘরে কেন? সারাবাড়িতে তোমাকে আমি খুজে হয়রান।
বিষাদ কন্ঠে বললাম ---- ভালো লাগছিলো না, তাই এদিকে একটু হাটছিলাম, এই ঘরটা খুব পছন্দ হয়েছে তাই এই ঘরে একটু ঢুকলাম।
------- ঠিক আছে এবার চল।
----- কোথায়?
----- কোথায় আবার কি? তোমার রুমে।
----- না আমি ওই রুমে থাকবোনা।
----- মানে?
----- মানে হলো আমি যদি থাকি তাহলে এই ঘরেই থাকবো।
----- তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
----- এখানে পাগল হওয়ার কী আছে হ্যা? তুমি জানো আমার ঝুলবারান্দা খুব পছন্দ তা শর্তে তুমি আমাকে এই ঘরে নিয়ে আসলে না।
---- দরকার নেই তোমার ঝুলবারান্দা যুক্ত ঘরে থাকার।
বিয়ের পর থেকে সাঈফের এরুপ আচরন আমাকে খুব কষ্ট দেয়। সারাদিন মেজাজটা কেমন জানি ওর খিটখিটে হয়ে থাকে, আর এর কারনে ওর সাথে আমার মাঝেমাঝে খুব জগড়া ও হয়।
---- কি হলো?
---কিছুনা, আমি এ ঘরেই থাকবো।
----- ওকে ফাইন তোমার যেহুতো এই ঘরে থাকার এতটাই শখ থাকবে, কিন্তু তার আগে একটু পাশের জানালা দিয়ে দেখ তো বাইরে কি আছে?
---- কি দেখবো।
--- জানালার কাছে গিয়ে দেখইনা।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×