somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা ইতিহাস : ভাষা আন্দোলনের দিনপন্জী - ৫

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনপন্জী -১ , দিনপন্জী - ২, দিনপন্জী - ৩, দিনপন্জী ৪
ভাষা আন্দোলনের দিনপন্জী - ৪ এ থাকছে ১৯৫১ থেকে ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারীর আগ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির দিনপন্জী ।

১০ ডিসেম্বর ১৯৫০ :
মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জেল থেক মুক্তি প্রদান । মুক্তির পরপরই ভাসানী BPC রিপোর্ট (যাতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল) প্রত্যাখ্যান করেন এবং Grand National Convention এ গৃহীত প্রস্তাবগুলি অবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহবান জানান । (১)

ফেব্রুয়ারী ১৯৫১ :
পূর্ব পাকিস্তান ইয়ুথ লীগের জন্ম । এই ইয়ুথ লীগ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পাশাপাশি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রোমোটকৃত মুসলিম কালচারের পরিবর্তে পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের নিজস্ব কালচার যেমন পহেলা বৈশাখ, নবান্ন ইত্যাদি চর্চার ব্যাপারে উচ্চকন্ঠ ছিলো । ইয়ুথ লীগ মুলত পাকিস্তানের প‌্যান-ইসলামিক মতবাদ থেকে বেরিয়ে এসে পূর্ব-বাংলার নিজস্ব কালচার চর্চার ক্ষেত্রে একটি কন্ঠস্বর হিসাবে নিজেদের পরিচিত করে । (২)

১১ মার্চ ১৯৫১ : The Dhaka University State Language Movement Committee পূর্ব-বাংলার সকল পত্র পত্রিকায় এবং গণ পরিষদের সদস্যদের মাঝে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবীতে একটি মেমোরেন্ডাম পাঠায় ।

২৭ মার্চ ১৯৫১ : পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী পুনরায় এ্যাসেম্বলীতে আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবটি পেশ করে । এখানে উল্লেখ্য যে মৌলানা আকরাম খান এর নেতৃত্বে গঠিত ১৬ সদস্যবিশিষ্ট East Bengal Language Committee আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং উদ্ভট হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করলেও সেই রিপোর্টকে সাধারণ জনগনের সামনে প্রকাশ করেনি পাকিস্তান সরকার । ততদিনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের এদেশীয় সদস্যদের মধ্যেও অনেকে বাংলার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছেন । এরকমই একজন হাবিবুল্লাহ বাহার এ্যাসেম্বলীতে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন । হাবিবুল্লাহ বাহারের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই প্রস্তাবকে পূর্ব-বাংলার জনগণকে শিক্ষা ক্ষেত্রে পঙ্গু করার জন্য একটি দূরভিসন্ধি হিসাবে অভিহিত করে এই প্রস্তাব বাতিল করার দাবী জানান । পূর্ব বাংলার এম পি দের একাংশের তীব্র বিরোধিতার মুখে প্রস্তাবটি প্রত্যাহারে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার । (৩)

জুলাই - ডিসেম্বর ১৯৫১ :
এই সময়কালীন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলো আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন The Dhaka University State Language Movement Committee । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে পৃথক পৃথক সমাবেশ করে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবী জানানো হয় । এই সময়ের সমাবেশগুলিতে কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক প্রমুখ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ।

২৬ জানুয়ারী ১৯৫২ :
The Basic Principles Committee of the Constituent Assembly of Pakistan পুনরায় উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে এ্যাসেম্বলীতে চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রদান করে । (৪)

২৭ জানুয়ারী ১৯৫২ :
ঢাকা সফররত পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্ণর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টন ময়দানের সমাবেশে ঘোষণা করেন কেবল মাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা । সাথে সাথে সমাবেশস্থলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শ্লোগান ওঠে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" । এই বক্তব্য সমগ্র পূর্ব - পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে । (৫)

২৮ জানুয়ারী ১৯৫২ :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে । এই সমাবেশ থেকে নাজিমুদ্দিনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা ছাড়াও পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীপরিষদকে পশ্চিম পাকস্তানের হাতের পুতুল হিসাবে অভিহিত করা হয় । (৬, ৭)

৩০ জানুয়ারী ১৯৫২ :
খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্য ভাষা আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দান করে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইদিন সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয় । (৫)

একই দিন আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় ভাসানীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি আওয়ামী মুসলিম লীগের সরাসরি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । (৬, ৭)

৩১শে জানুয়ারী ১৯৫২ :
মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভপতিত্বে পূর্ব-পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবিদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এই সম্মেলন থেকে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহবায়ক করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারী সমগ্র পূর্ব-পাকিস্তানে সাধারণ ধর্মঘট আহবান করে । (৫)

৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ : ছাত্রদের ঢাকে ঢাকা শহরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বত:স্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয় । ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবীতে তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় একটি মিছিল নিয়ে ঢাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে ।

১৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ : পাকিস্তান সরকার ২১শে ফেব্রুয়ারী ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সকল সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । (৫, ৭)

২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ : পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১৪৪ ধারা জারির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এর উদ্যোগে আবুল হাশিম এর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় উপস্থিত সদস্যগণ ১৪৪ ধারা ভংগ করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে ব্যর্থ হন । সভার একটি বড় অংশ ১৪৪ ধারা ভংগের ব্যাপারে মত দিলেও অনেকেই এতে সহিংসতার আশংকায় বিপক্ষে মত দেন । (৫)






১। Maulana Bhasani: The Founder of Politics of Opposition and Agitation during the Formative Years of Pakistan
M. Waheeduzzaman Manik

২। ভার্চুয়াল বাংলাদেশ । Virtual Bangladesh : History : Article by Tanweer Akram

৩। Rangalal Sen, Political Elite in Bangladesh’, Dhaka; University Press Limited, 1986, p. 106

৪। Martyr Dhirendranath Datta
My tribute to the forgotten Harbinger of the Bengali language movement
By M. Waheeduzzaman Manik

৫। ভাষা আন্দোলন, বাংলাপিডিয়া ।

৬। ভার্চুয়াল বাংলাদেশ , A Brief History of the Bangla Language Movement

৭ । Hasan Zaheer, The Separation of East Pakistan - The Rise and Realization of Bengali Muslim Nationalism, Oxford University Press, Karachi, Pakistan, 1994

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:০০
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×