এটি একটি সাদা মনের মানুষের গল্প।
ব্লগে প্রকাশিত এই গল্পটি আমি পুনরায় পোস্ট করছি। কেননা, এই মানুষটি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক। প্রাইমারী স্কুলে তাকে পুরা তিন বছর শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। তাকে নিয়ে ব্লগে যতটুকু লেখা হয়েছে, তিনি তার চেয়েও অনেক বেশি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তার জন্য এখনো আমাদের মন কাদে। লেখাপড়া যে অনেক আনন্দের একটি বিষয়, তা আমরা তপন স্যারের কাছ থেকেই প্রমাণ পাই। তপন স্যারের ক্লাসে ছাত্র/ছাত্রীরা কখনই পড়াশুনা ছাড়া যায় না। অথচ, স্যার কাউকে কোনদিন বেত্রাঘাত করেন নি। তিনি মূলত তার উপস্থাপন ও কৌশল দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মুগ্ধ এবং লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। আমরা তার ত্যাগ ও সততার কাছে ঋণী। এবং এ দেশের কর্ণধারদের কাছে অনুরোধ করবো--তপন স্যারের মতন এমন আদর্শবান ও ত্যাগী শিক্ষকই যেন আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলেই দেশের মঙ্গল বয়ে আসবে। আর দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের দেয়া শিক্ষায় দুর্নীতিবাজ শিক্ষার্থীই তৈরি হবে। যা করো জন্যই কাম্য নয়। ছোট মানুষ বড় কথা বলে ফেললাম বলে দুঃখিত। ধন্যবাদ সবাইকে। গল্পটি পড়ুন:
বৃষ্টি
গল্পটি যাকে নিয়ে তার নাম ফেরদৌস আলম তপন। বেড়া উপজেলার সিংহাসন গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশের স্বনামধন্য সাহিত্যপত্রিকা কালি ও কলম ও গ্ল্যমার পত্রিকা আইস টু ডে পত্রিকায় দীর্ঘ তিন বছর সুনামের সাথে চাকরী করেন। সন্তোষজনক বেতনে চাকরী করলেও তার মন পড়ে থাকে গ্রামের মাঠ, ঘাট, ধুলো-বালির দিকেই। নিজের জেলা শহর পাবনায় গিয়ে একটি কলেজে যোগদান করেন। সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মালেও তার মন পড়ে থাকে গ্রামে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য কিছু করার জন্য মন কাঁদে। কলেজের চাকরী ছেড়ে দিয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শুরু হয় তার প্রকৃত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ চলা...। নিজ গ্রামের বোরামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদনের পর দেখেন তাদের বিদ্যালয়ের দৈন্যদশা। দীর্ঘ ১৫ বছর যে স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী পাশ করতে পারতো না সেই স্কুল থেকে প্রথম বছরে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বেড়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত স্কুলে ক্লাশ নেওয়ার পরও স্কুলের গরীব-মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ডেকে এনে বিনা বেতনে সকাল-বিকাল কোচিং দিয়ে থাকেন। এছাড়াও সন্ধার পর ছাত্র/ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজখবর নেন। দরীদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের নিজের বেতনের টাকা দিয়ে খাতা-কলম-পেন্সিল কিনে দেন। প্রতি বছর প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ছাত্র/ছাত্রীকে তিনি বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। ছাত্র/ছাত্রীদের সুখের জন্য নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়েছেন। ঢাকা ছায়ানট থেকে নজরুল সংগীতের শিক্ষা গ্রহণ করা এই শিক্ষক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নানা রকম আনন্দদানের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তার ক্লাশে কোন শিক্ষার্থীই অমনযোগী থাকে না। তার এই শিক্ষা পদ্ধতিই শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফল করাচ্ছে বলে জানায় স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীরা। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণ শিক্ষক তার চাকরী জীবনের সূচনায়ই যে সুকীর্তি স্থাপন করছেন তা আমাদের সবার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা উচিত। এমন একজন শিক্ষককে কি আমরা সাদা মনের মানুষ বলতে পারি না?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




