somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অরুপম
দেবার মতো তেমন কোন পরিচয় আমার নেই। আমি মানুষ, চমৎকার এই পৃথিবীর চমৎকার সব ঘটনা দেখে এখন পর্যন্ত চমৎকৃত। আর তাই লেখালিখির মাধ্যমে সেটা কিছুটা প্রকাশ করতে চেষ্টা করি।

দ্বন্দের সমাজ কিংবা সমাজের দ্বন্দ

২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজটা দ্বন্দে ভরপুর। আশ্বিন মাসের ভরা বাদলায় যেমন টুপটুপ করে পানি পড়তেই থাকে, পড়তেই থাকে, সমাজের অস্থিমজ্জা বেয়ে বেয়ে তেমনি দ্বন্দ-অন্তর্দ্বন্দের রস বেয়ে বেয়ে পড়ছে। সমাজের যে দিকেই আপনি তাকান না কেন আপনার দ্বন্দ চোখে পড়বে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখুন- রাজনৈতিক দ্বন্দ, সাংগঠনিক দ্বন্দ, আদর্শিক দ্বন্দ কিংবা মানসিক বিরুদ্ধাচরন। সংসারে দৃষ্টিপাত করুন- বাবা ছেলেতে, মা'য়ে মেয়েতে, স্ত্রী স্বামীতে, প্রেয়সী প্রেমিকে, চারিদিকে কেবল সমস্যা। কোনটা প্রত্যক্ষ স্বার্থের, কোনোটা মনস্তত্বের। দ্বন্দ আবার সামাজিক স্তর ভেদে ভিন্ন। উচ্চবিত্তদের দ্বন্দটা প্রভাব প্রতিপত্তি আর অর্থের। মধ্যবিত্তের দ্বন্দ হরেক রকমের-মনস্তত্ব, অর্থ, সুখ, মিলন নানা কিসিমের দ্বন্দ তাদের। গরিবের দ্বন্দ দু'জায়গায়- পেটের ক্ষুধা আর শরীরের ক্ষুধা। অথচ এই সব স্তরের মানুষের দ্বন্দের একটাই কারন- সবাই সুখি হতে চায়৷ সুখি থাকতে চাওয়াটা অবশ্যই খুব স্বাভাবিক, ক্ষুদ্র এবং নির্দোষ ইচ্ছা। এই জনে জনে দ্বন্দ-অন্তর্দ্বন্দের যে কারনগুলো বললাম সেগুলো নিতান্তই গোড়ার কারন। বিশদ বিশ্লেষণ করলে আরো অসংখ্য ডালপালা পাওয়া যাবে৷ কিন্তু এগুলো হচ্ছে "ফান্ডামেন্টাল কনফ্লিক্ট"।
এই কনফ্লিক্ট বা দ্বন্দটা আবার চিন্তাশীল মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যারা সমাজের সমস্যা অনুধাবন করতে পারেন তারা একধরনের আত্মদহনে ভোগেন। তারা কেবলই চান সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলতে, একদম নিখুঁত। এই নিখুঁত করতে চাওয়ার চেষ্টাটাই আত্মদহন কিংবা অসুখি থাকার মূল কারন।

আমরা সবাই এটা বুঝি, বুঝেও আমরা একই কাজ করি। কারন আমরা কেউই নিখুঁত নই। আমরা চাইলেও সবকিছুকে একদম নিখুঁত করতে পারবো না। Nothing is perfect. এই দ্বন্দ থাকবেই। এটা চিরন্তন সত্য।
সমাজবিজ্ঞানে সমাজের দুইটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে।
১। Functionalist view- এমিল ডুরকহিম বা হারবার্ট স্পেন্সারের মতো নামকরা সমাজবিজ্ঞানিদের মতে, সমাজের প্রতিটি কাজ সমাজের জন্য অপরিহার্য। পতিতাবৃত্তি সাধারনের কাছে ঘৃন্য, কিন্তু পতিতাবৃত্তি সমাজের অনেক বড় একটা অঙ্গ। সমাজকে পরিচালনা করতে হলে সমাজের কোন কাজকেই, কোন ধরনের মানুষকেই বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
২। Conflict view- এর প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত সমাজবিদ কার্ল মার্কস। তার মতে, কনফ্লিক্ট বা দ্বন্দ হচ্ছে চিরন্তন বিষয়। দ্বন্দ আছে বলেই সমাজ টিকে আছে। যদি সমাজে একের সাথে অপরের দ্বন্দ না থাকতো, তবে সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকতো না। এত হাজার বছর ধরে সংঘবদ্ধ সমাজব্যবস্থা টিকে আছে। এর দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, ধরন বদলেছে, দেশে দেশে কালে কালে এর মত পথ আদর্শ সবই বদলেছে। বদলায় নি কেবল এর কিছু মূল জিনিস। তার একটা হলো অন্তর্ঘাত, একের সাথে অন্যের মতানৈক্য, নিজেকে এবং অন্যকে নিখুঁত করার চেষ্টা। আপাত দৃষ্টিতে এটা মন্দ বলে বিবেচিত। কিন্তু আপনি গভীরভাবে যদি মূলের দিকে নজর দিয়ে ভেবে দেখেন তবে দেখবেন যে আপনি যে আদর্শ নিয়ে চিন্তা করে অন্যকে ভুল বলছেন সেই আদর্শে সীমাবদ্ধতা আছে। আবার উল্টোটাও সত্য। কমুনিজম ভালো, ক্যাপিটালিজম ভালো না, এই দ্বন্দ বহু কালের। কিন্তু কোনটা ভালো? কিংবা কোনটা তুলনামূলক কম খারাপ? সময়ের চাহিদা কোনটা? ধর্ম নাকি বিজ্ঞান? নারীবাদিতা নাকি পুরুষবাদিতা? ব্যষ্টিক চিন্তা নাকি সামষ্টিক চিন্তা? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন আপনি করতে পারবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ নিখুঁত কোন আদর্শ, কোন উত্তর আপনি পাবেন না। যেটা পাবেন সেটা হলো একটা মত অন্য আরেকটা মতের চেয়ে কতটুকু বাস্তবসম্মত, কতটুকু বেশি যৌক্তিক, কতটুকু বেশি সঙ্গতিপূর্ণ, বৃহত্তর স্বার্থের জন্য কতটুকু বেশি দরকারি৷ একটা ঐক্যে আপনাকে আসতে হবে। কিন্তু কিভাবে আসবেন? যে কোন একদিকে আপনাকে ঝুঁকতেই হবে। আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনি ঝুঁকে আছেন।।কিন্তু কোনদিকে ঝুঁকবেন? যে দিকটায় সবাই আছে? না কি যে দিকটা আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয় সে দিকে? সেটা নিতান্তই আপনার ইচ্ছা। এর সমাধান আপনার হাতে, আপনার মগজে। মাথাটাকে কেবল চুল গজানোর অংশ মনে না করে একটু সিদ্ধান্ত নেবার কাজেও খরচা করুন। আর যদি না পারেন তবে "দশের মত আমারই মত" করে কাজে লেগে পড়ুন। নয়তো কিন্তু আখেরে পস্তাবেন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×