আজ অফিসে আসতে অনেক ড্রামা করতে হয়েছে। এমনিতেই শরীরটা কেমন ভালো ঠেকছে না আজ। তাও ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবুমনিটা আমার আগেই উঠে বাবার পিছে পিছে হাঁটছে। ওয়াশ রুমে গেলাম শুনি ও বলছে - এই তাড়াতাড়ি আস। আমি তো খুবই ভয় পেয়ে গেলাম নাজানি কি হয়েছে । ওখান থেকে চিৎকার করে বললাম কি হয়েছে? ওদিক থেকে জবাব এল- দেখে যাও বাবু কি করছে? তাড়াতাড়ি আস। আমি কোন মতে হাতমুখ ধুয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি-
বাবুটি আমার, টেবিলে ওভেনের উপর বসে আছে আর একটি হাতে ফিল্টারের কী উপরের দিকে টেনে ধরে রেখেছে- সমানে পানি পড়ছে, পানির পড়া দেখে ও খুব মজা পাচ্ছে। ওর বাবাও ছেলের কান্ড দেখে খুব মজা পাচ্ছে। মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে যেন তার ছেলে মহা বীরত্বের কাজ করছে। এক কলসী পানি সেহরীর সময় ফিল্টারে দেওয়া হয়েছিল। সব ফেলে দিল। আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে টেবিল থেকে নামিয়ে দিলাম আর ঘ্যানর ঘ্যানর করতে করতে আধোয়া যত কাপড়-চোপড় পেলাম সব পানির উপর এনে দিলাম। দুষ্ট টা এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল যেন সে কিছুই করেনি।
একটু পরেই দেখি রান্না ঘরের সিন্ক ধরে ঝুলে আছে আর ফেলে দেওয়া কিছু বাসি ভাত আর ময়লা পানি একটা চামচ দিয়ে নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছে। তাড়াতারি ওখান থেকে সরিয়ে রান্না ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলাম। পালাতে গিয়ে কিছুক্ষণ আগে ফেলা পানিতে একটি আছাড় খেল। হাত দিয়ে চিৎ হয়ে পড়া ঠেকাল। আমার দিকে একটু তাকিয়ে থাকল অসহায় ভঙ্গিতে। বুঝল আমার মেজাজ খারাপ আদর করে উঠানোর সম্ভবনা নাই। তারপর আস্তে আস্তে(পাছে না আবার পড়ে যায়) উঠে ভেজা থেকে সরে আসল। এবার একটা পিঁড়ি নিয়ে ঐ টাকে উল্টা করে ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকল গাড়ি গাড়ি করতে করতে। আমি এই ফাঁকে কোনভাবে ওর খাওয়া খাওয়ালাম অনেক কষ্ট করে। বাচ্চাদের খাওয়ানো যে কি কষ্ট তা বাচ্চার মায়েরা ভালো করেই জানে।
দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম অফিস এ যাওয়ার জন্য। অলরেডি অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। ও বুঝে গেল আমি বাইরে যাচ্ছি। কান্না জুড়ে দিল কোলে উঠার জন্য। মায়ের মন ভিজে গেল কোলে না নিয়ে কি আর পারি! ওকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে আসলাম উদ্দেশ্য নিচে মার বাসায় কোনো ভাবে ঢুকিয়ে দিয়েই আমি ফুটব। কিন্তু না সে কিছুতেই ছাড়বেনা। এমন সময় দেখলাম আমার ছোটবোন ওর ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরছে। ও বলল -কি ব্যাপার তুমি এখনও অফিসে যাওনি। (ও বলে রেখেছিল আজ যেন অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি চলে আসি, একসাথে শপিং এ যাবে)। বললাম কি করে যাব ও ছাড়ছেই না। ছেলের খালামনি ওকে অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করল। বলল - চল তোমাকে চকলেট কিনে দিব। সে শুধু আমাকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে না না ই বলে গেল। শেষ পর্যন্ত বাবুর খালামনি বলল- যাও আজ তোমার মা আর অফিসে যাবে না। ওকে জোড় করে কোলে নিয়ে (আমার দিকে তাকিয়ে) বলল- যাও তো তুমি বাসায় চলে যাও, যেও না আজকে। আমিও ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে বাসায় ঢুকে গেলাম। ও তো কান্না থামাবেই না। ও আবার বাসার ভিতরে এসে দেখাল যে আমি সত্যিই অফিসে যাচ্ছিনা ব্যাগ-ট্যাগ রেখে দিয়েছি। দেখে পিচ্চি বুঝি বুঝ পেল, কান্না থামাল। ওর খালামনি বলল - চল তোমার জন্য চকো চকো কিনে নিয়ে আসি (পাশেই একটা চোট্ট দোকান আছে)। কিন্তু এমনই কপাল বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই গেইটের বাইরে যেতে পারল না। ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকল।
আমি এই ফাঁকে গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি গেইট পাড় হওয়ার সময় ও দেখে ফেলল। আমি পিছন ফিরে দেখলাম আমার সোনামনিটি একটা হাত গাড়ির দিকে তাক করে মা মা বলে কান্না করছে। মনটা খুব আর্দ্র হয়ে গেল। কিন্তু কি আর করা উপায় নেই।
বাইরে খুবই বৃষ্টি হচ্ছিল। ওমা কিছু দুর যেতেই দেখি বৃষ্টি নেই। হাল্কা হাল্কা ফোঁটা পড়ছে। রাস্তাঘাট একদম শুকনা। একটু অবাকই লাগল এতো অল্প ব্যবধানে (আধা কিলোমিটারও হবে কিনা সন্দেহ - যারা সিটিজি থাকেন তারা বুঝবেন দেবপাহাড় থেকে রহমতগন্জের আগে পর্যন্ত) প্রকৃতির দুই রুপ দেখে।
যাক বিষন্ন মন নিয়ে অফিসে পৌঁছালাম। আজ অফিসের শেষদিন। কাল থেকে লম্বা ছুটি ভাবতেই মনটা একটু ভালো হয়ে এল। একটু আগে দুষ্ট সোনাটার বাবা ফোন করেছিল। ও বাসায় গেছে। বেবী নাকি খুবই দুষ্টামি করছে। ফ্রিজ খুলে দুইটা ডিম ভেঙ্গে ফেলেছে। বুয়া এক বালতি কাপড় ধুয়ে রেখেছিল সব মাটিতে ফেলে দিয়েছে। আরো কি কি সব নাকি করেছে। ফোন টা ওর হাতে দিতেই বলল- হুয়ো (হ্যালো) আম্মূূূূু আত (আস)।
খুবই ইচ্ছে হচ্ছে এখনি ছুটে চলে যায়। কিন্তু এসেছি অনেক দেড়ি করে। এখন আবার তাড়াতাড়ি কেমনে যায়!!! অপেক্ষায় আছি কখন অফিস টাইম শেষ হবে আর আমি বাসায় গিয়ে আমার বেবীটাকে কোলে তুলে নিব।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




