somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব-২ “রাজনিতির দুর্বৃত্তায়ন রোধ”

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ " দুর্নীতি নির্মূল "
রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ৩ " রাজা প্রজা আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার "
(ড্রাফট প্রস্তাব - সকল নাগরিকের সুচিন্তিত সাজেশন ওয়েল কাম)



আমরা স্বাধীনতার পরের ৪৮ বছরের স্বশাসনে প্রমান করেছি যে আমরা অতি সহজেই দুর্নীতিপরায়ন হয়ে পড়ি এবং ক্ষমতা এক কেন্দ্রিক করে ফেলি, বিশেষ করে শিক্ষিতরা। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই, আমাদের এই আত্মঘাতী প্রবনতা দুটো থেকে রক্ষা করতেই আমাদের দরকার সকলস্তরের জনপ্রতিনিধিত্ব, সরকার ও রাজনীতির এক কঠিন মানদন্ড সম্পন্ন কাঠামো।

এই উদ্দেশ্যেই আমি এমন একটি কাঠামো প্রস্তাব করছি, যা:


১) দশ কোটি ভোটারের মাঝ থেকে শুধু বাস্তব জীবনে প্রমাণিত সততা, দক্ষতা ও নিঃস্বার্থ জনসেবার রেকর্ডের ভিত্তিতেই জনপ্রতিনিধিত্বের নির্বাচনের জন্য নমিনেশন অনুমোদনের স্বচ্ছ গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থা করবে। আমরা আমাদের এই দুর্নীতিপ্রবন দেশে এই ব্যাপারে কোন সুযোগ নিতে পারিনা। নিশ্চয়ই আমরা ১৬-১৭ কোটি মানুষের এই দেশে দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দিয়েই যথেষ্ট সংখ্যক সৎ ও দক্ষ জনপ্রতিনিধি পাব।

১-ক) কোন ফৌজদারি ও দেওয়ানি অভিযোগে ৬ মাসের অতিরিক্ত কারাদন্ড প্রাপ্ত কোন ব্যাক্তি আজিবন কোন নির্বাচনে প্রার্থী হ্ইতে পারিবেন না।

১-খ) যেকোন ব্যবসায়ি যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তাকে ও তার নিকটাত্মীয়দের সেই ব্যাবসা সমূহ বিক্রয় ও হস্তান্তর করে তারপর নির্বাচনে প্রার্থিতার আবেদন করতে হবে। আর্থিক ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার একিভুতকরন দুর্নীতির সবচেয়ে বড় রেসেপি - এটা রোধ করতেই হবে।

১-গ) উপজেলা ও তাহার নিন্মস্তরের সকল নির্বাচিত পদে প্রার্থির আবেদনের যোগ্যতা: কমপক্ষে পাঁচ বছরের নিঃস্বার্থ ও দুর্নিতিহিন জনসেবার প্রমানধারীরাই, হলফনামা সহ তাদের ও নিকট আত্মীয়দের সকল সম্পদ বিবরণী দাখিল ও সেইসব সম্পদের বৈধ উৎস প্রমান সাপেক্ষে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আবেদন করিতে পারিবেন। নির্বাচন কমিশন উপজেলাওয়ারি উন্মুক্ত ও টেলিভাইসড গনশুনানির মাধ্যমে, দুর্নীতিহিন জনসেবা ও সম্পদের বৈধ উৎস প্রমান সাপেক্ষে প্রাথিতার অনুমোদন দিবে। কোন প্রার্থী এইসব প্রমাণে ব্যার্থ হ্ইলে, শুধু তাহার প্রার্থিতাই বাতিল হ্ইবে না,বরং "প্রস্তাব-১" অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে তাহার সাজাও হ্ইবে এব়ং আজিবনের জন্য সে কোন নির্বাচনে প্রার্থীও হ্ইতে পারিবে না এবং ভোটাধিকারও হারাইবেন। গনশুনানিকালে বা তাহার পূর্বে যেকোনো নাগরিক যদি প্রার্থির জনসেবা ও সম্পদের বৈধতার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ হাজির করে, তবে নির্বাচন কমিশন তাহা আমলে নিয়া যাচাই করিবেন এবং সেইমত উপোরক্ত ব্যাবস্থা নিবেন। কোন নাগরিক যদি উদ্দেশ্যমুলক ভাবে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রমাণ দাখিল বা প্রচার করেন, তবে "প্রস্তাব-১" অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে তাহার সাজাও হ্ইবে এব়ং আজিবনের জন্য সে কোন নির্বাচনে প্রার্থীও হ্ইতে পারিবে না এবং ভোটাধিকারও হারাইবেন।

১-ঘ) উপজেলার উপরস্ত সকল নির্বাচিত পদে প্রার্থির আবেদনের যোগ্যতা: কমপক্ষে পাঁচ বছরের নিঃস্বার্থ ও দুর্নিতিহিন জনসেবা এবং এর অতিরিক্ত কমপক্ষে আরো পাঁচ বছরের দুর্নীতিহিন জনপ্রতিনিধিত্বের প্রমানধারীরাই, হলফনামা সহ তাদের ও নিকট আত্মীয়দের সকল সম্পদ বিবরণী দাখিল ও সেইসব সম্পদের বৈধ উৎস প্রমান সাপেক্ষে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আবেদন করিতে পারিবেন। নির্বাচন কমিশন জেলাওয়ারি উন্মুক্ত ও টেলিভাইসড শুনানির মাধ্যমে, দুর্নীতিহিন জনসেবা ও সম্পদের বৈধ উৎস প্রমান সাপেক্ষে প্রাথিতার অনুমোদন দিবে। কোন প্রার্থী এইসব প্রমাণে ব্যার্থ হ্ইলে, শুধু তাহার প্রার্থিতাই বাতিল হ্ইবে না,বরং "প্রস্তাব-১" অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে তাহার সাজাও হ্ইবে এব়ং আজিবনের জন্য সে কোন নির্বাচনে প্রার্থীও হ্ইতে পারিবে না এবং ভোটাধিকারও হারাইবেন। গনশুনানিকালে বা তাহার পূর্বে যেকোনো নাগরিক যদি প্রার্থির জনসেবা ও সম্পদের বৈধতার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ হাজির করে, তবে নির্বাচন কমিশন তাহা আমলে নিয়া যাচাই করিবেন এবং সেইমত উপোরক্ত ব্যাবস্থা নিবেন। কোন নাগরিক যদি উদ্দেশ্যমুলক ভাবে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রমাণ দাখিল বা প্রচার করেন, তবে "প্রস্তাব-১" অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে তাহার সাজাও হ্ইবে এব়ং আজিবনের জন্য সে কোন নির্বাচনে প্রার্থীও হ্ইতে পারিবে না এবং ভোটাধিকারও হারাইবেন।

২) সরকারের ভেতরেই, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবনতা প্রতিরোধে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সংবিধানিক এটর্নি জেনারেলের পদ ও মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা। বর্তমানের স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করিয়া তাহাদের সমুদয় দ্বায়িত্ব ও অধিনস্তদের এটর্নি জেনারেলের অধিনে আনা হ্ইবে। মূল উদ্দেশ্য সরকারের সকল আইন শৃঙ্খলা ও ম্যাজিষ্ট্রেসি দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতা সাংবিধানিক পদমর্যাদার দক্ষ নিরপেক্ষ পেশাদার আইনগ্গের হাতে রাখা, যাহাতে দলিয় শাসনে রাষ্ট্রের আইনের শাসন ব্যাহত না হয় এবং এই মৌলিক জনস্বার্থের ক্ষমতাগুলোর অপব্যাবহার না হয়।

এটর্নি জেনারেলে নিয়োগ করিতে, নির্বাচিত সরকার, বিরোধী দলের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হ্ইবার যোগ্যতাসম্পন্ন ৩-৫ জনের একটি প্যানেল মনোনিত করিবেন এবং সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চের তাহাদের যোগ্যতার ভেটিং করিবেন। ভেটিংয়ে উত্তির্ন প্রার্থিদের মধ্য হ্ইতে যিনি সংসদের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন পাইবেন তিনিই এটর্নি জেনারেল পদে নির্বাচিত হ্ইবেন সরকারের মেয়াদ পর্যন্ত। এই নির্বাচনে দুই বা ততোধিক দফা ভোটাভুটি প্রয়োজন হ্ইতে পারে।

শুধু সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যাবহারের অভিযোগে সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেন্চ, অভিযোগ প্রমান সাপেক্ষে এটর্নি জেনারেলেকে অপসারন করিতে পারিবেন। সুপ্রিম কোর্টে এটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গৃহীত হ্ইলে, তিনি রায় না হওয়া পর্যন্ত তাহার সিনিয়র ডেপুটির নিকট সাময়িক ভাবে দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করিবেন।

সুপ্রিম কোর্টের ভেটিং সাপেক্ষে, এটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের জজের যোগ্যতা সম্পন্ন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলদের নিয়োগ দিবেন। তাহাদের মেয়াদ হ্ইবে এটর্নি জেনারেলের মেয়াদ পর্যন্ত। তবে মন্ত্রণালয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় তিনি নিজ ক্ষমতায় সুনির্দিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী যৌক্তিক কারনে যেকোন সময়ে তাহাদের বরখাস্ত করিতে পারিবেন।

৩) মন্ত্রি সভায় এটর্নি জেনারেল, যৌথ অথবা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহন সহ অন্যান্য সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করিতে বাধ্য থাকিবেন। নিশ্চিত করিতে না পারিলে অনতিবিলম্বে তাহা লিখিত বিবৃতিতে জনসাধারণকে জানাইতে এবং সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ের করিতে বাধ্য থাকিবেন।

৪) বিশেষ অবস্থায় স্বল্পকালীন মেয়াদ ব্যাতিত, প্রধানমন্ত্রী সহ সকল মন্ত্রিসভার সদস্যগণ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বে থাকিতে পারিবেন না।

৫) মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়া ছাড়া সাংসদরা সাংসদিয় দ্বায়িত্বের বাহিরে কোনসরকারি বা বেসরকারি বা ব্যাবসায়িক প্রাশসনিক ও লাভজনক পদে থাকিতে পারিবেন না। তাহারা যাহাতে কোন লোভ লালসা বা ক্ষমতার মোহের উর্ধ্বে থাকিয়া শুধু তাহাদের মৌলিক সাংবিধানিক দ্বায়িত্বে মনোনিবেশ করিতে পারেন তাহা নিশ্চিত করিতেই এই ব্যাবস্থা।
________________________
মইন আহসান
১৯ এপ্রিল ২০১৯

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ " দুর্নীতি নির্মূল "
রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ৩ " রাজা প্রজা আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার "
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×