somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

চাকরি করতে চাওয়ায় মেরেই ফেলল?

২৩ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া বেগমের অপরাধ ছিল- সে পড়াশোনা করে চাকরি করতে চায়। এ দেশে এ চাওয়াটা কম ভয়ানক নয় একটি অতি রক্ষণশীল পরিবারে। আজ নিউজটা দেখার পরেই এক সহকর্মী জানালো, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক হলে থাকা তার বোনের পরিচিত। খুবই ভাল ও মেধাবী মেয়ে। তাদের দেশের বাড়ি যশোর হওয়ায় ঘণিষ্ঠতা ছিল। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। হিসাব মেলাই কেন এমনটা হল?


সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর কন্যা তিনি। ওয়াজ করে তিনি জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। বাবার পছন্দ মেনেই বিয়ে করেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন ছিল তার পিতার চেয়েও রক্ষণশীল। তারা পড়ালেখা করাটা পছন্দ করছিল না। পড়াশোনা বন্ধ করতে হুমকি দেয়া হয়, মারধরও করা হয। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়তে চায়নি মেয়েটি। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর স্বামীর পরিবার চাপ দিতে থাকে পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার। এরমধ্যে আবার মেয়েটি চাকরি করতে চায়। মেয়েটির বাবা মারা যাওয়াতে সে আর্থিক সংকটেও পড়েছিল। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রক্ষণশীল পরিবারটি মেনে নিতে পারেনি। প্রতিশোধ পরায়ণ পরিবারটি হত্যার পথই বেছে নেয়। এই পরিণতি রোধ করা যেতো?

মেয়েটির হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন জানিয়েছেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে এক সন্ধ্যায় সুমাইয়া আমাকে ফোন করে এবং জানায়, সে আমার সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চায়। যথারীতি সেদিন ডিউটি আওয়ারেই মাথায় সব সময় মাথায় ওড়না দেওয়া সুমাইয়া আমাদের হল অফিস রুমে এল। খুব আস্তে আস্তে কথা বলছিল। জানাল, কিছুদিন আগেই তার বাবা মারা গেছেন। তার পরিবার খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু তার বাবা চাইতেন, সে যেন চাকরি করে। খুবই মলিন মুখে সুমাইয়া জানায়, তার বাবা মারা যাওয়ায় সে খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। সে কিছু একটা করতে চায়, আমি কোনোভাবে তাকে সহায়তা করতে পারি কি না। আমার কোনো গবেষণাকাজে সে সহায়তা করতে পারে কি না। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী সে। যা বলছে, খুব দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্টভাবে বলছে। কোথাও দ্বিধা নেই, জড়তা নেই, আমতা-আমতা নেই। ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল কিন্তু কাজ করা, নিজের মতো জীবন যাপন করার অধিকারের বিষয়ে দুর্দমনীয়, বলিষ্ঠ। মেয়েটির জীবনবোধের ধার আমাকে স্পর্শ করে, কোথায় যেন ছুঁয়ে যায়।’

সেই মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হল না। নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নিজের জন্য বাঁচা, নিজেকে নিয়ে বাঁচা হল না। আমরা ধর্মান্ধতার কথা বলি, নারী স্বাধীনতার কথা বলি। যখন একেকটা মেয়ে ঝরে যায় তখন কিছু আলোচনা করি, দুঃখ পাই কিন্তু পথের কাঁটা তুলতে ভূমিকা রাখি না। সেই কাঁটায় রক্তাক্ত হয়, হবে আরো কোন ছাত্রী।রক্ষণশীলতা নারীদের গৃহ বন্দী করে রাখতে চায়।শাস্ত্রীয় বিধানে নারীর জন্য চাকরির পথ খোলা নেই। যে সকল নারীরা রাজনৈতিক দল করে, তারাও নারীর সংকট নিরসনে খুব একটা এগিয়ে আসেনি। ভারতে উমা ভারতী, সুষমা স্বরাজ, স্মৃতি ইরাণী তাই নারীর চেয়ে হিন্দুত্ববাদেরই জয়গান গান। বাংলাদেশের কথা বললাম না- মামলা খাওয়ার ভয়ে।শুধু বলি ধর্মীয় রাজনীতির সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারী শৈশবে থাকবে পিতার অধীন, যৌবনে স্বামীর অধীন আর বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অধীন। নারীর কাজ পতি সেবা আর পুত্রসন্তান জন্ম দেয়া। সেই নারীকেই কামনা করে আমাদের পশ্চাৎপদ সমাজ।আর আমরা স্বপ্ন দেখি সমাজে উঠে আসবে হাজার হাজার নোরা। নোরা মানে ইবসেনের ডলস হাউজের সেই নোরা। তিনি পুতুলের সংসার করতে চাননি।আমাদের সুমাইয়াদের স্বপ্ন রক্ষণশীলতার জাল ছিন্ন করতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:০১
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×