somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

ওষুধের প্রথম প্রয়োগ কেন অন্য প্রাণীর উপর?

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নতুন কোন ওষুধ বাজারে আনতে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে হয়। তবে প্রথম পরীক্ষা করা হয় অন্য প্রাণীর উপর। একটি ক্ষুদে প্রাণির উপর করা পরীক্ষা সফল হলেই তা মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তা কাজ করে কি কারণে? ওখানেই ভূমিকা রাখছে বিবর্তনবাদ। মানুষ অন্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা কিছু নয়। তারা একই ধরনের কোষ দিয়ে গঠিত ও জীবন প্রণালী একই রকম বলেই এক প্রাণির উপর পরীক্ষায় সফল হওয়া ওষুধ প্রয়োগ করতে পারছে অন্য প্রাণীর উপর। বানর, গিনিপিগ, ইঁদুর, জেব্রা ফিস ও ব্যাঙের উপরই বেশি পরীক্ষা চালানো হয়।


বানরঃ
মার্কিন কোম্পানী নোভাভ্যাক্স টিকা আবিষ্কারের জন্য ১২ টি বানরের উপর দুই ডোজ টিকা দেযার পর তাদের উপর করোনাভাইরাস সংক্রমণ করে। এতে ১১টি বানরের শরীরে কোনরূপ উপসর্গ দেখা দেয়নি। একটি বানরকে অল্প পরিমাণে ডোজ দেয়া হয়েছিল।ওটির ফুসফুসে করোনাভাইরাস সামান্য দেখা যায়। তার দুই দিন জরের মতো হয়েছিল। এই সফলতার পরেই তারা ১৩১ জন মানুষের উপর ২ ডোজ করে টিকা প্রয়োগ করে সফলতা পায়। এখন পরীক্ষা শুরু করবে ৩০ হাজার মানুষের উপর। ইবোলা ভাইরাসের ওষুধও প্রথম বানরের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। বানর ক্লোন করেছে চীন। ক্লোন বানরের মধ্যে ক্যান্সার, ডায়াবেটিকসসহ বিভিন্ন জিনগত ত্রুটি গবেষণা ও নিরাময়ের কাজের লাগানো হবে। তাদের একটি পরীক্ষাগারে মানব বানরের হাইব্রিডও করা হয়েছে। এখান থেকে অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। বানরের ভ্রুণে মানব দেহের যেকোন ধরনের টিস্যু তৈরি করা সম্ভব। বানরের সাথে মানুষের জিনের ৯৫% মিল রয়েছে। ফলে পরীক্ষা চালানোর জন্য বানর খুবই উপযোগী। কিন্তু বানরের উপর পরীক্ষা চালানো সহজ নয়। এদের সংখ্যাও সীমিত। এটির জন্য অনুমোদন নিতে হয় বিভিন্ন বিভাগ থেকে। প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে যারা কাজ করে তাদের আপত্তি রয়েছে।


গিনিপিগঃ ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য বা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে পরীক্ষাগারে গিনিপিগের ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। মানুষের শরীরে প্রয়োগের আগে তা প্রয়োগ করা হতো গিনিপিগের উপর। জীবাণু তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রাণীটি। লুই পাস্তুরসহ বহু বিজ্ঞানী গিনিপিগ ব্যবহার করেছেন। এজন্যই এখনো মানুষের উপর কোন কিছু প্রয়োগ করলে তা গিনিপিগের সাথে তুলনা করা হয়। বলা হয় মানুষকে গিনিপিগ বানানো হচ্ছে। তবে এজন্য গিনিপিগের আলাদাভাবে চাষ করা হয় এবং উৎপন্ন গিনিপিগ পরীক্ষাগারের জন্যই বিক্রি করা হয়। মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাতেও এর ভূমিকা রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পূটনিক-৯ এ এবং চীন ১৯৯০ সালে যাত্রী হিসেবে মহাকাশে গিনিপিগকে পাঠিয়েছিলে। ১৯৬০ এর দশকে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারেই ২৫ লক্ষ গিনিপিগ ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথম মহাকাশ ভ্রমণকারী লাইকা নামের সেই কুকুরটির কথাও আমাদের মনে আছে।


ইঁদুরঃ ইঁদুর ও মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো প্রায় একই রকমভাবে পরিচালিত হয়। তাই পরীক্ষাগারে ইঁদুরের উপরই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। জৈব পরীক্ষার জন্য জীবিত প্রাণির প্রয়োজন হয়। শিম্পাজী, গরু-ছাগল ইত্যাদির চেয়ে ইঁদুর ছোট বলে অপেক্ষাকৃত সহজে পরিচালনা করা যায়। এছাড়া ইঁদুর সাপ-বিড়াল-সিংহ ইত্যাদির তুলনায় নিরীহ প্রাণি। অপরিসীম প্রজনন ক্ষমতা থাকায় খুব কম সময়েই বিভিন্ন জেনারেশনের উপর পরীক্ষা চালানো যায়। মানুষের সাথে ইঁদুরের ৯০% জিনের মিল রয়েছে। এজন্য মানুষের বিভিন্ন প্রকার জিনের মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতির পরীক্ষার জন্য মানুষেরই ভাল প্রতিনিধিত্ব করে ইঁদুর। ওষুধের প্রভাব নির্ণয় করেতে হয়। এদের নির্দিষ্ট জিনকে বন্ধ করে বা খুলে রেখে পর্যবেক্ষণ করা যায়। কিভাবে নির্দিষ্ট জিন নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী তা নির্ণয়ে ইঁদুর ভুমিকা রাখে। বাইরে থেকে ডিএনএ এদের শরীরে প্রবেশ করানোর পরে প্রজনন করানো হয় পরীক্ষার জন্য। মানুষের যন্ত্রণাদায়ক রোগের র্যা পিং মডেল তৈরিতেও ইঁদুরের সাহায্য নেয়া হয়।


জেব্রা ফিসঃ
বাংলায় এ মাছটিকে অঞ্জু মাছ বলে। তাদের শরীরে অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গই মানুষের মতো। তাই সাম্প্রতিক সময়ে রোগীকে কোন ওষুধ দিবেন তা আগে জেব্রা ফিসের উপরই প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানা যায় দ্রুত। কোন রোগীকে ঠিক কোন ওষুধ দেয়া যেতে পারে তাও জেব্রাফিসের উপর গবেষণা করে জেনে নেয়া যায়। ইঁদুরের বা গিনিপিগের উপর পরীক্ষা চালানোর জন্য বিরাট আয়োজন লাগে, অনেক জায়গা ও বিপুল খরচ করতে হয়। ছোট একটি একুরিয়ামেই প্রচুর জেব্রা ফিস রাখা যায়। ইঁদুর বা বানরের উপর পরীক্ষা চালাতে গেলে অনেক নিয়ম কানুন মানতে হয় এবং এথিকসের প্রশ্ন উঠে। শুধু ভারতেই এখন ৪০টি গবেষণাগারে জেব্রা ফিস ব্যবহৃত হচ্ছে। জেব্রা ফিসের রোগ প্রতিরোধও অনেকটাই মানব শরীরের মতো। তাদের শ্বাসযন্ত্র না থাকলেও যকৃৎ, হৃদপিণ্ড রয়েছে। জেব্রা ফিসের ভ্রুণ বাইরে বিকশিত হওয়ায় তা বাইরে থেকেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। কোন রোগীর দেহে টিউমার পাওয়া গেলে তা থেকে কোষ সংগ্রহ করে জেব্রা ফিসের মধ্যে প্রবেশ করালে ৩/৪ দিনের মধ্যেই মাছের মধ্যেও টিউমার দেখা দেয়। কোন ওষুধ বেশি কার্যকর তা এই মাছের উপর পরীক্ষা করেই রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসাতেও এই মাছ ব্যবহার করা হচ্ছে।


ব্যাঙঃ
স্কুল পরীক্ষাগারে ব্যাঙের প্রচলন ব্যাপক। জীববিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই মাধ্যমিকে ব্যাঙ কেটে তার পৌস্ট্রিকতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ব্যাঙ কাটতে হয়। আমি প্রথম যে ব্যাঙটি কেটেছিলাম তার পেট সেলাই করে ছেড়ে দিয়েছিলাম। বেঁচেছিল কিনা জানি না। সম্প্রতি চীন ব্যাঙ নিধন বন্ধ করতে প্লাস্টিকের ব্যাঙ ব্যবহার শুরু করেছে। তাতে লক্ষ লক্ষ ব্যাঙ রক্ষা পাবে। ব্যাঙ মেরুদণ্ডী প্রাণী বলে এর উপরও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। জেনোপস নামের এক ধরনের ব্যাঙের সাহায্যে আগে নারীদের প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা হতো। ওই প্রজাতির ব্যাঙের চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিয়ে নারীর মূত্র ঢুকিয়ে দেয়া হতো। সেটি যদি ওই মূত্রের প্রভাবে ৫-১২ ঘণ্টার মধ্যে ডিম পারতো তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেতো ওই নারী গর্ভবতী। নারী ব্যাঙের প্রজননে ভূমিকা রাখছে মানবী নারীর প্রজনন! কেন মিলে গেল? কিভাবে সম্ভব? ওই বিবর্তনবাদ দিয়েই শুধু ব্যাখ্যা করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৮
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×