তিন যুগ আগে এক বৃদ্ধ লোকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনার ছোটকালে দেখা মানুষের চেহারা কেমন ছিল?
তিনি বলেছিলেন, ‘সেরকম কদাকার চেহারার মানুষইতো আর দেখি না। বহু মানুষের চেহারাই ছিল কুৎসতি। এমন সুন্দর, নাক, চোখ, ঠোঁট থাকতো জমিদারদের আর ব্রাহ্মণদের। সাধারণ মানুষের চেহারা সাধারণত সুন্দর হতো না। এছাড়া বসন্তের দাগ চেহারাকে আরো কদাকার করে তুলতো। বহু মানুষের মুখে-শরীরে টিউমার থাকতো’। তিনি বৃটিশ ভারতের শেষ দিকের কথাই বলেছিলেন। তাহলে সেই মানুষগুলো গেল কোথায়? আমার এক বন্ধুর সাথেও বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলতাম তবে কারণটি বুঝতে পারতাম না।
মেন্ডেলের সূত্রানুযায়ী আমরা জানি, পিতা-মাতা থেকে প্রথম জেনারেশনে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকটভাবে প্রকাশ পায় কিন্তু দ্বিতীয় জেনারেশনে এক চতুর্থাংশ জীবে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়। এভাবে কয়েক প্রজন্ম পরেই আলাদা বৈশিষ্ট্যের মানুষ তৈরি হয়। ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য টিকে থাকে বিভিন্ন কারণে। ধরা যাক ১৯৪০ সালে কারো ৪ জন পুত্র ও ৪ জন কন্যা সন্তান ছিল। তার মধ্যে ১ জন পুত্র খুবই সুদর্শন ও মেধাবী ও ১ জন পুত্র খুবই কদাকার ও মেধাহীন। মেয়ের ক্ষেত্রেও তাই। সুদর্শন ও মেধাবী পুত্রটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, সে একজন সুন্দরী ও মেধাবী মেয়েকে বিয়ে করবে এবং তাদের সন্তানরাও অধিকতর মেধাবী ও চৌকশ হবে এবং সমাজে টিকে থাকবে। মেধাহীন-কদাকার ও দুর্বল বৈশিষ্ট্যের পুত্রটি অসুখবিসুখে মারা পড়বে সবার আগে। টিকে থাকলেও তার পক্ষে সমাজে প্রভাববিস্তার করে টিকে থাকা হবে না। সে বিয়ে করবে কদাকার ও মেধাহীন কোন নারীকে। তাদের সন্তানরাও হবে সাধারণত অপুষ্ট, মেধাহীন ও কদাকার। তাদেরও টিকে থাকা মুশকিল। এভাবে সাধারণত এই সন্তানটির বংশধর ভালমতো টিকে থাকে না। আর সুদর্শন ও মেধাবী সন্তানটির বংশধর অধিক সংখ্যক টিকে থাকে। এভাবেই সমাজে আস্তে আস্তে সুন্দর-বুদ্ধিমান মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় আর কমে যায় কদাকার-বুদ্ধিহনি মানুষের সংখ্যা।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ অটিজমে আক্রান্ত। এছাড়া শারীরিক, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, দৃষ্টি, বাক, বুদ্ধি, শ্রবণ, শ্রবণ দৃষ্টি, সেরিব্রাল পালসি ও ডাউন সিনড্রোম ক্যাটাগরির প্রতিবন্ধী রয়েছে। এই মানুষগুলোর সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি একেবারেই কম থাকে। তাদের মধ্যে এমনিতেই রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ জীন। পরিবার ও সমাজ থেকেও তারা অবহেলার শিকার হন এবং পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। প্রতিবন্ধী মানুষের গড় আয়ুও অনেক কম। তাদের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যায়। রোগের ধাক্কায় আগেই মারা পড়েন। তার উপর বিয়ে করে বংশ বিস্তার করা অসাধ্য হয়ে যায়। তাদের সন্তানদের টিকে থাকা আরো কঠিন হয়ে উঠে। ফলে সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষ মায়ের গর্ভে এলেও অধিকাংশই ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই মারা যায়। দশ বছর হওয়ার আগেই ঝরে যাবে উল্লেখযোগ্য অংশ। আর এখন যদি মোটের উপর গণনা করা হয় তবে মোট জনগোষ্ঠীর ৭% এর বেশি পাওয়া যাবে না প্রতিবন্ধী মানুষ।
এভাবেই সুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। বিবর্তন এভাবে ঘটে যায় চোখের সামনেই!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৫৫