করোনাভাইরাসে আরএনএ (রাইবোনুক্লিক অ্যাসিড) নামে জেনেটিক উপাদান রয়েছে। করোনাভাইরাস যখন কাউকে সংক্রামিত করে, তারা ওই ব্যক্তির কোষগুলিতে প্রোটিনস্পাইকের মাধ্যমে সংযুক্ত হয় এবং তাদের ভিতরে ঢুকে নিজের আরএনএর অনুলিপি তৈরি করে বংশবৃদ্ধি করে। যদি অনুলিপি করার কোনও ভুল হয় তবে আরএনএ পরিবর্তন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা এই পরিবর্তনগুলিকে Mutation হিসাবে অভিহিত করেছেন। এই পরিবর্তনগুলি ঘটে দৈবচয়নভাবে দুর্ঘটনারবশত, অনিচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যহীন। সর্দি-জ্বরের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাই না কেন? গত বছর যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আমাকে আক্রমণ করেছিল এবারে কিন্তু সে আগের বারের মতো নেই। বিবর্তিত হয়েছে। প্রতি বছর বারবার সর্দি-জ্বরে ভোগার কারণ হল- এরা বারবার পরিবর্তিত হয়। বারবার পরিবর্তন হয়ে গেলেই মানুষকে সংক্রামিত করা সহজ হয় এবং ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের জিনকাঠামোতে নিয়মিত পরিবর্তন হচ্ছে। ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস বহুরকমভাবে বদলে গেছে। এ কারণে এর টিকা আবিষ্কারও জটিল হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই এল, এস, ডি, ভি, জি- এ রকম নানা ভাগে ভাগ করেছেন অণুজীববিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশে তিন ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান রয়েছে। এগুলো মূলত জি ধরনের- তার মধ্যে রয়েছে জি, জিএইচ ও জিআর। চট্টগ্রাম এলাকায় পাওয়া গেছে ডি টাইপের ৭টি নমুনা। বাংলাদেশে মাত্র ২৮৮টি করোনাভাইরাসের জিনকাঠামো বিশ্লেষণ করা হলেও বিশ্বজুড়ে হয়েছে প্রায় ৭০ হাজারটি। এ থেকেই জানা যাচ্ছে কোন কোন দেশে কোন কোন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়েছে। চীনের প্রথম ভাইরাসটি ছিল এল ধরনের।
সারাবিশ্বে প্রতিটি নমুনায় গড়ে ৭টি করে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে আর বাংলাদেশে পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়েছে গড়ে ১০টি। এই পরিবর্তনের কারণে এখন আক্রান্ত অনেক বেশি হলেও মৃত্যুহার কমে এসেছে। ১৭ এপ্রিল ৮৪৯৪ জন মৃত্যুবরণ করেছিল, মোট আক্রান্ত ছিল ৮৫ হাজার। হাজারে মৃত্যু ছিল ১০০ জন অর্থাৎ ১০%! গতকাল আক্রান্ত ছিল ২ লক্ষ ৬৩ হাজার আর মৃত্যু ছিল ৫৬১২ জন। হাজারে মৃত্যু ২১ জন। অর্থাৎ মৃত্যু এক পঞ্চমাংশে এসে ঠেকেছে। স্পেন, ইতালি, ফ্রান্সে মৃত্যুহার ছিল ১০ এর উপরে আর গত পরশু ওই তিন দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৭৩৪৭ জন আর মারা গেছেন মাত্র ১৮ জন অর্থাৎ হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই জনেরও কম। ভারত সরকার দাবী করছে তাদের মৃত্যুহার অনেক কম। গত পরশু ৬১ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ৯৪০ জন অর্থাৎ হাজারে মৃত্যু ১৫ জনের বেশি। অর্থাৎ এখন স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্সের চেয়ে ৬ গুণ বেশি করোনারোগী মারা যাচ্ছে ভারতে। ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় তারা শীর্ষ তিনে থাকছে। মৃত্যুহার কম বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসার মান ইত্যাদি জড়িত থাকলেও ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোতে বিবর্তনও একটা বড় ভূমিকা রাখছে। সংক্রমণ ও পোষকের মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতার এই হেরফেরে, বিবর্তিত ভাইরাস ভূমিকা রাখছে। পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে- বাংলাদেশে বিবর্তিত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা কম, আমরা রক্ষা পেয়েছি।
এই ভাইরাস কি আরো খারাপ দিকে যেতে পারে? আরো শক্তিশালী ভাবে বিবর্তিত হতে পারে? তাহলে আবারো মৃত্যুর ঝড় বয়ে যাবে! এখনো অনেক দেশে মৃত্যুর হার বেশি। মেক্সিকোতে এখনো মৃত্যুর হার ১০% এর বেশি। এর মানে ওখানকার ভাইরাস ভয়ঙ্করভাবেই বিবর্তিত হয়েছে।
আমরা শুধু প্রত্যাশাই করতে পারি, টিকা না আসা পর্যন্ত করোনাভাইরাস যেনো খারাপভাবে বিবর্তিত না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৪