somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

কাউন্টার উপন্যাস

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মির্চা এলিয়াদের লা নুই বেঙ্গলী এবং মৈত্রেয়ী দেবীর ন হন্যতে

যুগল বই বলতে একই লেখকের একই ধরনের দুটি বইকে বা সিক্যুয়ালকে বুঝায়। কিন্তু রোমানিয়ার মির্চা এলিয়াদ এবং কলকাতার মৈত্রেয়ী দেবী কি করে যুগল বই লিখলেন? তারা যে বাস্তবের একই ঘটনা নিয়ে লিখেছেন। একজনের লেখার প্রতিবাদে আরেকজন লিখলেন আরেকটি। একে অবশ্য কাউন্টার উপন্যাসই বলা যায়। কলকাতায় ১৯২৯-১৯৩০ সালে দুজন প্রেম করেছেন, বিয়ে করতে চেয়েছেন সেই ঘটনা নিয়ে প্রথমে লিখেন মির্চা এলিয়াদ। সেই আত্মজৈবনিক উপন্যাস রোমানিয়াতে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। সেই ঢেউ এসে লাগে কলকাতাতেও। তাঁর পিতাসহ বিভিন্ন জনই মৈত্রেয়ী দেবীকে বইটি নিয়ে বলেছেন। ১৯৭২ সালে রোমানিয়ার একজন কলকাতায় এসে দেখা করতে চাইলে মৈত্রেয়ী দেবী নিজেই তার সাথের দেখা করতে যান। জানতে চান-
তুমি আমাকে চেন?
তোমাকে আমাদের দেশে সবাই চেনে, তুমি আমাদের দেশে রূপকথার নায়িকা।
কেন মির্চার বই?
হ্যাঁ, ওর বই। সে তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, তোমার বাবা দিলেন না, তোমরা হিন্দু-সে ক্রিশ্চান।
বাজে কথা।
কি বাজে কথা।
হিন্দু-ক্রিশ্চান ওসব কিছু নয়। তাঁর দম্ভ।
বিভিন্ন কথার পরে মৈত্রেয়ী দেবী জানতে চান, এমন কি কিছু আছে ও বইতে যাতে আমি লজ্জা পাব?
সে জানায়, সে লিখেছে তুমি রাত্রে তার ঘরে আসতে।
কী সর্বনাশ! কী অন্যায়! বিশ্বাস কর, এ সত্য নয়, একেবারে সত্য নয়। বলতে পার কেন সে আমার নাম করে বইটা লিখেছে?
তোমার নামের বন্ধন সে এড়াতে পারে নি, তখন সে তার কষ্ট, বড় কষ্ট- তুমি বইটা পড়লে চোখের জলে ভাসবে।
তাই বলে এমন একটা মিথ্যা কলঙ্ক দিবে?
এরপরই অতিথি মৈত্রেয়ী দেবীকে একটি বইয়ের কথা বলেন যার শেষ পাতায় মৈত্রেয়ী লিখেছেন- Mircea Mircea Mircea- I have told my mother that you have only kissed me on my forehead.
এসবই মৈত্রেয়ী দেবী তাঁর ন হন্যতে বইতে বলেছেন। বলা যায় মির্চার উপন্যাস যদি হয় প্রতিক্রিয়া তবে মৈত্রেয়ী তার জবাব দিয়েছেন। তাঁর মতো করেই তাদের প্রেমের কথা লিখেছেন। সেখানে আমরা দেখি মির্চাই মৈত্রেয়ী মানে অমৃতার সাথে প্রেম করতে বেশি আগ্রহী। শেষ দিকে এসে মির্চার লেখা তিনটি চিঠি পাওয়া যায়। সেটা পড়ে বুঝা যায় মির্চা চেয়েছিল মৈত্রেয়ী কিছু একটা করুক। এরপরই মৈত্রেয়ী দেবী আমেরিকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখতে গেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্চার সাথে দেখা হয়। মৈত্রেয়ী ভুল লেখার কারণ জানতে চান? মৈত্রেয়ী বলেছেন তাদের ভালবাসা ছিল মনের। এজন্যই নামটা ন হন্যতে। হন্য মানে শরীরে বা দেহে। ন হন্যতে মানে শরীরিক বা দৈহিক সম্পর্ক নয়। অর্থাৎ তাদের সম্পর্কটা দৈহিক ছিল না, ছিল মনের। আবার হন্য শব্দটা এসেছে হনন থেকে। সেখানে এর অর্থ ভিন্ন হয়- মরণ নয়।

আমি আগে মৈত্রেয়ী দেবীর বইটিই পড়ার সুযোগ পাই। বইটির শুরুতেই যেহেতু লা নুই বেঙ্গলীর কথা লেখা রয়েছে তাই খুবই আগ্রহ জন্মালো লা নুই বেঙ্গলীর প্রতি। কিন্তু পাই কোথায়? এক লাইব্রেরীতে পেয়েও গেলাম। নাম ‘বাংলার ভালবাসা’। টানা পড়ে ফেললাম মির্চা এলিয়াদের বাংলার ভালবাসা মানে লা নুই বেঙ্গলী। পড়ে দেখলাম অনেক কিছুই উল্টো। মির্চার বর্ণনায় পাই, মৈত্রেয়ীই তাদের ভালবাসায় বেশি আগ্রহী ছিল। রাতের বেলা তার ঘরে আসতো। শারীরিক সম্পর্ক ছিল। ন হন্যতে পাওয়া একটি ঘটনা: ওদের খাবার টেবিলে মির্চা পা দিয়ে মৈত্রেয়ীর পা স্পর্শ করেছিল। কিন্তু লা নুই বেঙ্গলীতে দেখেছি, মৈত্রেয়ী পা দিয়ে মির্চার পা স্পর্শ করেছে। মৈত্রেয়ী তাকে পাওয়ার জন্য বিপুল ব্যকুলতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মৈত্রেয়ীর পিতার কঠোর বিরোধীতায় তিনি সরে গেছেন। মির্চা মৈত্রেয়ীর পিতার ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকের নির্দেশ মেনে নেন। শেষে সিঙ্গাপুরে গিয়ে জানতে পারেন মৈত্রেয়ী এক ফুলওয়ালার সাথে পালিয়েছে। বাস্তবে মৈত্রেয়ীর স্বামী একজন প্রগতিশীল সভ্রান্ত গরু-খাওয়া মানুষ। তিনি বলেছেন, ‘হাতি খাওয়া গেলে আরো ভালো হতো। একটা কাটলেই অনেকে খেতে পারতাম।

এখন এক মলাটেই দুটো পাওয়া যায়। মির্চার লা নুই বেঙ্গলী এবং মৈত্রেয়ী দেবীর ন হন্যতের ছায়া অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাদের প্রেম পরিণতি না পেলেও তা অমর করে দিয়েছে উপন্যাস দুটি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×