somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেন অষ্ট্রেলিয়ায় নেই?

১০ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিবর্তনের মূল কথা হল, কোন প্রজাতিই চিরন্তন বা স্থির নয়, বরং এক প্রজাতি থেকে পরিবর্তিত হতে হতে আরেক প্রজাতির জন্ম হয় অর্থাৎ পৃথিবীর সব প্রাণই কোটি কোটি বছর ধরে তাদের পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হতে হতে এখানে এসে পৌঁছেছে। এক প্রজাতি অন্য প্রজাতিতে বিবর্তন প্রথম বুঝতে পারেন, ফরাসী জ্যাঁ ব্যাপ্তিস্তে ল্যামার্ক। কিন্তু কিভাবে বিবর্তন ঘটে তিনি তার ভুল ব্যাখ্যা দিলেন। চার্লস ডারউইনই প্রথম বুঝতে পারেন প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিষয়। ডারউইন বিবর্তনবাদের ধারণা নিয়েছেন পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের কাছ থেকেই, তাদের অন্যতম চার্লস লায়েল। আগে ধারণা ছিল, ভূ-প্রকৃতি ও প্রাণীজগত স্থিতিশীল। লায়েলের সদা-পরিবর্তনশীল ভূ-প্রকৃতির ধারণাই যে সঠিক তা ডারউইন বিগল জাহাজে দীর্ঘদিন বিশ্বপরিভ্রমণ করে বুঝতে পারেন। এই উপলব্ধিই তাকে প্রাণের বিবর্তন সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। টমাস ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব পাঠ করেও ডারউইন প্রাণিকূলের প্রকৃতিতে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার উপর চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।


কাছাকাছি ধরনের প্রজাতিরা সাধারণত খুব কাছাকাছি এলাকায় বাস করে কারণ তারা এক সময় একই পূর্বপুরুষ থেকে পরিবর্তিত হতে হতে বিভিন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। অষ্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার প্রাণিগুলোর দিকে তাকালে বিস্মিত হতে হয়, একেক দেশে একেক রকম প্রাণি। বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেন অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকায় নেই আবার ক্যাঙ্গারু বাংলাদেশে নেই। এতে মনে হয় একেক বিচ্ছিন্ন স্থানে একেকভাবে প্রাণের বিবর্তন হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে রাশিয়ায় বহুপ্রাচীন কিছু বীজ পাওয়া যায়। ওই বীজ থেকে উৎপন্ন গাছে যে ফুল হয় তা বর্তমান পৃথিবীতে নেই। তার মানে ওই গাছ বদলে গেছে, বিবর্তন হয়েছে। ভুতাত্ত্বিক পুরাতন স্তরে পাওয়া যায় পুরাতন আমলের প্রাণীর ফসিল। এই ধারাবাহিকতার কোন ব্যতিক্রম নেই। এক স্তরে প্রাপ্ত কোন প্রাণীর ফসিল পরবর্তী স্তরে পাওয়া যাচ্ছে না, তার পরিবর্তে যে ফসিল পাওয়া যায় তা থেকে বুঝা যায় আগের প্রাণী বিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ ঘণিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত প্রজাতিরা বিবর্তনের মাধ্যমে একে অন্যকে প্রতিস্থাপিত করেছে। দুটি এলাকা যদি দীর্ঘকাল ধরে বিচ্ছিন্ন থাকে, তাদের মাঝে মহাসমুদ্র, খুব উচু পর্বতশ্রেণি থাকে তাহলে তাদের স্থানীয় জীবজন্তু, গাছপালাগুলো স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত হতে থাকে। এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ক্রমাগতভাবে চলতে থাকে এবং দীর্ঘকাল পরে দুই অঞ্চলের প্রাণীদের মধ্যে ভিন্ন প্রজাতি পরিলক্ষিত হবে। এই প্রাণের বিবর্তন ঘটছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই। ল্যামার্কের ভুলটাও ছিল এখানেই। অনেকে এখনো ল্যামার্কের এই ভুলকেই বিবর্তনের কারণ বলে মনে করেন।


মেরুভাল্লুক কেন মেরু অঞ্চলেই জন্মেছে? প্যাঙ্গুইন কেন বরফের উপর বাস করে? মেরুভাল্লুকের চামড়া পুরু ও লোম সাদা। চামড়ার নিচে পুরু চর্বির স্তর থাকে। এসব কারণে এরা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় টিকে থাকে। শীতের শুরুতে এদের চামড়ার চর্বিস্তর আরও বেড়ে যায়। ফলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় এরা বাস করতে পারে। এরা ভাল সাঁতরায় আবার এদের থাবাও অনেক বড়। আবার পেঙ্গুইন বাস করে দক্ষিণ মেরুবলয়ের আশেপাশে। এরা বরফের উপর থাকে, দিবাচর ও সমুদ্রবাসী। সাঁতরে তাড়া করে মাছ শিকার করতে পটু তবে হাঁটতে ঠিকমতো পারে না। ডানার সাহায্যে বরফের উপর দিয়ে চলে। বুক পেট ধবধবে সাদা, বাকি শরীর কালচে নীল। সহজভাবে মনে হবে মেরুভাল্লুক চামড়া পুরু, চর্বির স্তর ও সাদা লোম নিয়ে জন্মেছে ওখানে শীত বলেই। বাস্তবিক তা নয়। বিবর্তনের কোন লক্ষ্য থাকে না। ধরা যাক মেরু ভালুকের আগের প্রজাতি থেকে তিন ধরনের প্রজাতির উদ্ভব হল- ১) গায়ের লোম হালকা, কাল, শরীরে চর্বির স্তর কম, ২) গায়ের রং সাদা, লোম মাঝারি ঘণ, চর্বির স্তর কম এবং ৩) গায়ের রং সাদা, চামড়া পুরু, লোম ঘণ ও শরীরে চর্বির বেশি। তাহলে জীবন সংগ্রামে সুবিধা পাবে কত নং? অবশ্যই - ৩ নং শ্রেণি। আরো বিভিন্ন ধরনের মেরুভাল্লুকের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন ওই পরিস্থিতিতে। এভাবেই বিবর্তনে যারা সুবিধা পায় তারাই টিকে যায় জীবন সংগ্রামে।

অষ্ট্রেলিয়ার প্রাণীদের আর কোথাও দেখা যায় না। ক্যাঙ্গারুতো এখন বিপুলই কিন্তু ক্যাঙ্গারুর মতো দেখতে ওয়ারাবিরাসহ বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণী ছিল। তারা একই প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। অষ্ট্রেলিয়াতে লাল শেয়াল ও ডিঙ্গো নামের এক ধরনের কুকুর ইউরোপ থেকে আনা হয়েছিল। অথচ এগুলো আদিতে এখানে ছিল না। এখন ভালই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। কিন্তু তারা কেন ছিল না? অথচ শেয়াল, কুকুর, নেকড়ে জাতীয় অনেক রকম প্রাণি রয়েছে ইউরোপে। গত বছর অষ্ট্রেলিয়ায় হাজার হাজার উট হত্যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছিল। ১৮৪০ সালের আগে ওখানে কোন উট ছিল না। ওই দশকে প্রথম উট আমদানি করা হয়। ভারত থেকেই ২০ হাজারের বেশি উট আমদানি করা করেছিল। আজ সেই উট নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া সরকার বিপাকে পড়েছে। ১০ লক্ষেরও বেশি উট মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায়। তার মানে অষ্ট্রেলিয়া উটের জন্য খুবই উপযোগি কিন্তু ওখানে বিবর্তিত হয়নি। কারণ উট হওয়ার মতো পূর্ববর্তী কোন প্রজাতিও ওখানে ছিল না। ঠিক একই রকম প্রাণি ভিন্নভাবে ভিন্নস্থানে বিবর্তিত হতে পারে না। এজন্যই মহাবিশ্বে কোন প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলেও পৃথিবীর কোন প্রাণির মতোই কোন প্রাণি থাকবে না। ভারত জুড়েই ছিল বহু রকমের বাঘের বিচরণ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ইন্দোচীন বাঘ, মালয় বাঘ, সুমাত্রীয় বাঘ, সাইরেবীয় বাঘ, দক্ষিণ চীনের বাঘ, হিমালয়ের বাঘসহ বহু বিচিত্র রকমের বাঘ ছিল পৃথিবীতে, বহু বিলুপ্তির পরে বহু রকমের বাঘ টিকে আছে পৃথিবীতে। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে বাঘ ছিল কিন্তু অষ্ট্রেলিয়ায় বাঘ নেই। এই যে বিচিত্র রকমের বাঘ তারা সবাই বিবর্তিত হয়েছে পূর্ববর্তী কোন প্রজাতি থেকে এবং ইউরোপ-এশিয়া জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। কিন্তু সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অষ্ট্রেলিয়াতে যেতে পারেনি। ফলে বাঘ বা বিড়াল জাতীয় কোন প্রাণীই অষ্ট্রেলিয়ায় ছিল না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×