সিন্ধু অববাহিকায় বর্তমানে বাস করে প্রায় ২০ কোটি মানুষ। লক্ষ লক্ষ বর্গমাইলের ভূ-প্রকৃতির পানি সরবরাহ করতে ক্লান্ত সিন্ধু। আরব সাগরের টানে হাজার হাজার মাইল ছুটে চলা এ নদ বছরের ১০ মাসই গিয়ে মিলতে পারেনা আরবসাগরে। সিন্ধু, তিব্বত মালভূমির কৈলাসশৃঙ্গের পারে মানস সরোবরে জন্ম নিয়ে কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তানে প্রবাহিত। ভারত গত ২০০৯ সালে কাশ্মীরে ঝেলাম নদীর উপনদী কিষাণগঙ্গায় বাধের কাজ শুরু করে, সাধারণ মানুষ জলের অধিকার হারানোর পথে।
নদীতে বাধের ঘটনা অনেক পুরানা। ফেরাউনদের ক্ষমতার মূলে ছিল নীল নদের পানির নিয়ন্ত্রন। সেচনির্ভর কৃষির দখল থেকে খাদ্য গুদামের দখলে শক্তিশালী ফারাওরাও আজ নীলের কবলে বিলুপ্ত। পাঁচ হাজার বছর আগে জমজমাট এক সভ্যতা ছিল সিন্ধু নদের অববাহিকায়, হরোপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হরোপ্পা, আর ৪০০ মাইল ভাটিতে সিন্ধু প্রদেশে মহেঞ্জোদারো। পানি অব্যবস্থাপনা সিন্ধুসভ্যতার ধ্বংসের কারণ বলে অনেকে মনে করেন। নদীতে বাধ প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এটা মানুষ অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে, সারা দুনিয়ার মানুষ এর প্রতিবাদে সোচ্চার।
১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু অববাহিকার নদীসমূহের পানি বন্টন চুক্তি হয়। বিশ্ব ব্যাংকের তদারকিতে এই চুক্তি বলে সিন্ধু, চেনাব ও ঝেলাম নদীর অধিকার দেয়া হয় পাকিস্তানকে, আর রাভি সুতলেজ ও বিয়া নদীর অধিকার দেয়া হয় ভারতকে। একই সাথে সিন্ধু ও এর উপনদীর ৮০ শতাংশ পানির স্বত্তাধিকার দেয়া হয় পাকিস্তানকে। প্রথম বড় ধরণের সমস্যা দেখা দেয় ২০০৫ সালে যখন ভারত চেনাব নদীতে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বালিগহার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় এবং পশ্চিমমূখী নদীগুলোতে আরও ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিকল্পনা প্রকাশ করে। ২০০৮ সালে বালিগহারের জলাধারে পানি ভরাট করার ফলে চেনাব নদী শুকিয়ে যায় ভরা মৌসুমে।
আমরা কৈলাস থেকে ছড়িয়ে পড়া কোন নদী মাতার গলায় ফাঁস দিতে রাজি না। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর নব্য ফেরাউনি কীর্তিকলাপ ঠেকাতে না পারলে ভাটিতে মরুকরণ নিশ্চিত।
বর্তমান সভ্যতার শক্তির চাহিদা মেটানোর উপায় আছে নিশ্চয়ই। হাজার হাজার বছর ধরে সূর্য উপাসক আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ঠিকই বলে গেছে শক্তির উৎস কি। জগতের সকল জীবের মা গঙ্গার (পানি অর্থে) মুক্তি দিয়ে আবার সূর্যের দিকে নজর দেয়ার সময় এখন।
দোহাই
সাইন্স ৪ জুন ২০১০।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:১০