পেছনে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে ওড়ার মত ভঙ্গি করে ব্রুনো ফিরছিল। ওর সঙ্গে আরো কতগুলো ছেলে। বার্লিনের জনাকীর্ন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন সে দুই দিকে হাত উঁচিয়ে এরোপ্লেনের মত করে বাড়ি ফেরে।তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে!
চারদিকে যখন হত্যাযজ্ঞ চলছে, নাৎসীরা নির্বিচারে হাজার হাজার লোককে নির্যাতন করছে ,গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারছে তখন মা আর বছর চারেকের বড় বোন গ্রেটেল কে নিয়ে ব্রুনোর ভারি নিরাপদ জীবন। হ্যা ব্রুনোর বাবা র্যাল্ফ নাৎসী বাহিনীর বড় কর্তা।ব্রুনো ভালবাসে টায়ারের তৈরী দোলনায় দুলতে, ভালবাসে বাড়ির আঙিনা আর বার্লিনের রাস্তা ধরে বিমানের মত মুখে বোওওওও শব্দ করে ছুঁটতে ।
এ দিকে মি: র্যাল্ফের পদোন্নতি হওয়ায় বার্লিনের একপ্রান্তে চলে আসতে হয় ,পাশেই ইহুদি নির্যাতন ক্যাম্প। নতুন ঘর, চারপাশের পরিবেশ ব্রুনোর কাছে ক্রমশ অসহ্য হয়ে ওঠে। সে আশপাশ খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ নির্যাতন ক্যাম্পটাকে আবিস্কার করে।অবাক হয়ে দেখে কাটাতারের বেড়ার ওপাশে ময়লা চেক জামাকাপড় পড়া ভারি রহস্যময় লোকজন ঘোরাফেরা করছে। ঘটনাচক্রে
স্মুয়েল নামক এক সমবয়সী ইহুদি ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়!এ এক আজব বন্ধুত্ব , দু বন্ধুর মাঝখানে কাটাতারের বেড়া । স্মুয়েল যে ভালমত খেতে পায়না তা ও দেখেই বুঝে নেয়। ব্রুনো প্রতিদিন বাড়ি থেকে ওর জন্য চুরি করে খাবার নিয়ে আসে, স্মুয়েল খায় আর ও ব্রুনো অবাক হয়ে দেখে। হঠাৎ ব্রুনোর এ জায়গাটা ভালো লাগতে থাকে!
গ্যাস চেম্বারে মানুষ পোড়ালে তার চারপাশে একটা বাজে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, সে গন্ধ মিসেস র্যাল্ফের নাকে যেতেই তিনি উৎসুক হয়ে ওঠেন। যখন শুনলেন এ মানুষ পোড়ানোর গন্ধ তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন, ভাবতেই পারেননি এত কাছেই ইহুদি নির্যাতন ক্যাম্প রয়েছে!সেদিন রাতেই স্বামীর সাথে তিনি ভীষন চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন!অগত্যা সবাইকে বার্লিন পাঠাতে রাজী হওয়া ছাড়া মি. র্যাল্ফের আর কোন উপায় থাকেনা।
বার্লিন ফিরে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু ব্রুনো তো ফিরে যেতে চায়না তার এখানে আছে স্মুয়েলের মত বন্ধু আবার স্মুয়েলটা নাকি কদিন ধরে তার বাবাকে খুজে পাচ্ছেনা, সে স্মুয়েল কে কথাও দিয়েছে তার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকে খুঁজে দেবে।
তাই একদিন কথামত বেলচা নিয়ে আসে ব্রুনো আর কাটাতারের বেড়ার ওধারে স্মুয়েল অপেক্ষা করে, স্মুয়েল নিজের মাপের আরেক সেট জামা জোগাড় করে রাখে, জানে জার্মান সৈন্যদের চোখ কে ফাঁকি দিতে চাইলে তার বন্ধুর ও চাই এমন জামা কাপড়। ব্রুনো বেলচা দিয়ে গর্ত খুড়ে কাটাতারের এধারে চলে আসে, জামা কাপড় পাল্টে হয়ে যায় পুরোদস্তুর স্মুয়েলের মত ইহুদি কিশোর। তারা দুজন মিলে স্মুয়েলের বাবাকে খুঁজতে থাকে, ক্যাম্পের এখানে ওখানে।
এদিকে জার্মানদের ইহুদি নির্যাতন ক্যাম্পের আজ বিশেষ দিন।যথারীতি সাইরেন বেজে ওঠে।বন্দীদের কে সারি বেধে একটা ঘরে ঢুকিয়ে চারপাশ বন্ধ করে দেয়া হয়।ছেলে, বুড়ো ,মধ্য বয়সী, তার মধ্য ব্রুনো-স্মুয়েল গা ঘেষাঘেষি করে দাড়িয়ে থাকে, চোখের ভেতর আতঙ্ক আর কৌতুহল !
তার আগে অবশ্য সৈন্যরা সবার চেক জামা কাপড়গুলো খুলে নিয়ে যায়, ও গুলো আবার কাজে লাগবে যে!
এদিকে বাড়িতে অনেকক্ষন ব্রুনোর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা, সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছে! নাৎসী বাহিনীর জাদরেল কর্মকর্তা কমান্ড্যান্ট র্যাল্ফের ছেলেটা কই গেল? মা, গ্রেটেল সহ সবাই পাগলের মত খুজতে শুরু করলো......
বন্ধ ঘরের সব বন্দীরা সবাই নিশ্চুপ উলঙ্গ দাড়িয়ে।হঠাৎ ছাতের দিকে একটা মাস্ক পরা মুখ দেখা যায়! তার হাতে কি ওটা !!!
ব্রুনো আর স্মুয়েল পরস্পরের হাত শক্ত করে ধরে রাখে.....
ব্রুনোর মা এলসা আজ যে গন্ধটা পাবে তা অনান্য দিনের মত পরিচিত একই গন্ধ নয়!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




