মনি রাজধানীর ২ নম্বর উত্তর যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকার মাসুদ রশীদ খানের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো। ছোট বেলায় মনিকে ওই বাসায় গৃহকর্তার স্ত্রী নিলুফার নাহার পালক সন্তান হিসেবে নিয়ে আসেন। এর পর তাকে গৃহকর্মী হিসেবে ব্যবহার করতেন।
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু মেডিসিন মডেল ওয়ার্ড (২০৮ বেড-১৩) এ শনিবার গভীর রাতে গৃহকর্তা শিশু মনিকে ভর্তি করে পালিয়ে যান।
পরে ঢামেক হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশের সহযোগিতায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের একটি দল রাত ২টায় ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে ওই শিশুর চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়।
শনিবার ভোরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্তা মাসুদ রশীদ খান ও তার স্ত্রী নিলুফার নাহারকে আটক করে। পরে ওই শিশুর চিকিৎসার জন্য গৃহকর্ত্রী নিলুফার নাহারকে ঢামেক হাসপাতালের শিশু মেডিসিন মডেল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
শুনিবার দুপুর আড়াইটায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল শিশু মনি।
শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. অদিতি বাংলানিউজকে জানান, রাত থেকে শিশুটি একা, আমরা তার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ করছি । বর্তমানে শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসক আরও জানান, শিশুটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম বস্তু দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।
শিশু মনি অভিযোগ করে বলে, তাকে দিয়ে বাসার সব কাজ করানো হতো। কাজ না পারলে প্রায়ই মারধর করা হতো। শীতের মধ্যে তাকে বিছানায় না রেখে, মেঝেতে শুইয়ে রাখা হতো।
আর এজন্য মাঝে মাঝে তার শরীরে জ্বরসহ বিভিন্ন অসুখ লেগে থাকতো। তাকে মাঝে মাঝে কাশির সিরাপসহ বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে এসে দিতো গৃহকর্তা মাসুদ। শিশু মনি তাড়াতাড়ি অসুখ সেরে যাবে, এ আশায় পুরো সিরাপের বোতল একেবারে মুখে ঢেলে খিয়ে ফেলতো।
শনিবার রাতে এরকমই এক ঘটনায় গৃহকর্ত্রী নিলুফার নাহার বেধড়ক পিটিয়ে ও গরম ক্ষুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে মারাত্মক আহত করে মনিকে (৮)।
গভীর রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালের শিশু মেডিসিন মডেল ওয়ার্ডে ভতি করে গৃহকর্তা মাসুদ রশীদ খান।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “ঘটনার পর পুলিশের একাধিক দল নির্যাতনকারী মাসুদ রশীদ খানের ৭৬/২/১ এর বাসার আশেপাশের প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে।
শিশুটির চিকিৎসা করানোর শর্তে তার স্ত্রী নিলুফার নাহারকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতনের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিশু নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েআজ ববৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা। তিনি বলেন, ঘটনাক্রমে দুএকজন শিশুর এই নিষ্ঠুর কাহিনী সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শত শত শিশু নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের কেউ খরও নিচ্ছে না এবং খবর জানার কোন সুযোগ থাকছে না।
যে দেশে প্রতিদিন গড়ে চারজন ধর্ষিত হয়, ১৫জন গড়ে খুন হয়, ২জন গড়ে গুম হয় সে দেশে শিশু নির্যাতন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে যারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম খুন ও নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের একদিন আইনের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যে পরিবারে এই শিশুটি নির্যাতিত হয়েছে সেই পরিবারের গৃহকতৃী ও নির্যাতনকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




