somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটি ফিরে এসেছে (কাল্পনিক কাহিনী)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভূমিকা :এই গল্প টি লিখতে গিয়ে নামে এবং ঘটনায় কিছুটা প্রেরণা নিয়েছি হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর "রিটার্ন অফ শি " অনুবাদ গল্পটি র। আমার কৈশোর এ পড়া গল্পটি র আদলে প্রথমে লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে মনে হল আয়েশা নাম্নী চরিত্র আমার দেশের পারিপাশ্বিকতা য় লিখলে ততটা মানানসই হবেনা। আমি শুধু অনুপ্রেরণা নিয়েছি বা (ছায়া অবলম্বনে বলা যেতে পারে ) ..তবে মূল গল্প টি আমি লিখব আমার নিজস্ব দর্শনের আলোকে আমাদের দেশের পারিপাশ্বিকতায় একই পটভূমিতে। আলিশিয়ার প্রত্যাবর্তন নাম না দিয়ে নাটকীয়তার জন্য ই এই নাম টি বেছে নেওয়া। আলিশিয়া মেয়েটি অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী , অনেকটা হুমায়ুন আহমেদ এর দেবী গল্পের রানুর মত। মেয়েটির কিভাবে এই অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা হয়েছে তার ব্যাখ্যা বর্ণনা দেওয়া হবে গল্পে।সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ জানান হল।

============================================
মূল গল্প :
রবীন্দ্রনাথ এর কাদম্বরী এর মত অলৌকিক ভাবে সে ফিরে এসেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে । শেষ ডাক্তার এসে তার পালস পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করে ফেলেছে। তার বাবা , মা অসহায়ের মত কাদছে চিৎকার করে। সে শুনছে সব কথা। মা বাবার কান্না, ডাক্তার দের কথা।

তার সারা শরীর এইমুহুর্তে অসাড় হয়ে আছে যদিও চিন্তা চেতনা বেশ ক্রিয়াশীল , বেগে চলছে।

মা বাবা আমি বেচে আছি।

তাকে নিয়ে যাওয়া হল মর্গে। কাটা ছেড়া করা হবে বলে। পোস্ট মর্টেম এর জন্য যখন তার শরীর কাপড়ের বাধন খোলা হল। চুরি কাচি নেওয়া হল তখন সে বিছানায় উঠে বসেছে। ডাক্তার ডোম সবার হাতের জিনিস পড়ে গেল। দুইজন পালিয়ে গেল রুম থেকে ভয়ে আতঙ্কে।

ডাক্তার শুধু বলতে পারল এই কথা টি

তুমি কি বেচে আছ ? অবিশ্বাস্য।

হ্যা বেচে আছি।

পরের দিন দেশের সব বড় বড় সংবাদ পত্রে হেডলাইন এ এই খবর

মেয়েটি ফিরে এসেছে আবার পৃথিবীতে ?

মেয়েটির নাম আলিশিয়া। বয়স আঠার। যদি কাওকে জিজ্ঞাসা করা হয় আলিশিয়ার রূপের বর্ণনা কর তো সে স্বাভাবিক ভাবে হতভম্ব হয়ে পড়বে। তার রূপের বর্ণনা দেওয়া সে এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। সে অনিন্দ্য সুন্দরী। সেরকম অনেক সুন্দরী সবাই কখন ও রাস্তা ঘাটে বা সিনেমায় দেখে থাকে। কিন্তু এ আলিশিয়া সব বর্ণনাকে যেন অতিক্রম করে যায়। দুধে আলতা গায়ের রং , কাজল কাল চোখ , বা ঘন নিবিড় একরাশ চুল , দীর্ঘাঙ্গী সব বলার পর ও মনে হবে এ যেন কোন বর্ণনা ই নয় এই মেয়ের রূপ সৌন্দর্য্যের কাছে। সে যখন তার কাজল কাল চোখে কার ও দিকে তাকিয়ে থাকে সে ব্যক্তির মনে হবে প্রবল আলোড়নে পৃথিবী বুঝি আজ ধ্বসে যাবে। তার হাসি ঝরনার আওয়াজের সাথে মিষ্টি নুপুরের নিক্কনের আওয়াজের মত লাগে শ্রোতার কানে। সে যখন হেটে চলে মাটি সম্ভ্রমে নুয়ে থাকে তার এত মর্যাদা এত ব্যক্তিত্ব। তার সামনে এসে বক্তার কথা থেমে যায় ,চতুরের চতুরতা মার খায়। চালাক হয়ে যায় কৌশল বর্জিত জ্ঞানী হয়ে পড়ে নির্বোধ।

এই হেন আলিশিয়া মাত্র দুইদিনের জ্বরে এভাবে মারা যাবে সবার কল্পনার অতীত। সবাই বলছিল তাকে বিষ খাওয়ান হয়েছে। তার কোন অসুখ বিসুখ নাই। .কিভাবে সে মারা যায়।

তাদের ঘরের বিশাল লিভিং রুম এ বসে আছে সে নিঃশব্দ। তার আশেপাশে প্রচুর সাংবাদিক। বিভিনভাবে তার ছবি তুলছে ,প্রশ্ন করছে। সে নির্বাক।

হটাৎ সবাইকে সচকিত করে একজন পুলিস কে ধমক দিয়ে উঠল

তুমি তোমার কাজের মেয়েকে যে রেপ করে মেরে ফেলেছ তা আমি জানি , তার কোন বিচার হয়নি। পুলিসের কাছে গিয়ে দোষ স্বীকার কর।

পুরা ঘরে যেন বাজ পড়েছে সবাই এমনভাবে চমকে উঠেছে। ক্রিমিনাল পুলিশ টির অবস্থা সহজে অনুমানযোগ্য। কিছুক্ষণ থতমত খেয়ে স্বাভাবিক বাচার তাড়নায় অস্বীকার করার চেষ্টা করল।

মিথ্যে বলে লাভ নেই সে আবার বলে বসল। আমি সব তোমার জানি। তোমরা সাত ভাইবোন ,তুমি পাচ নম্বর।

সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ী করতে লাগল।

পুলিস টিকে এরেস্ট করা হল। সে সব দোষ কবুল করল।

তার ক্লিনিকাল মৃত্যুর সপ্তাহ আগের ঘটনা। এরপরে তার মৃত্যু তাই কেও স্বাভাবিক ভাবে সহজ ভাবে নিলনা। সবার ধারণা তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।

তার সৌভাগ্য সে ফিরে এসেছে।

অন্যায়কারীদের জন্য দুর্ভাগ্য সে ফিরে এসেছে।
আলিশিয়া র বাবা কাজ করে কাতার এর বাংলাদেশী এমব্যাসিতে। একমাসের জন্য ছুটি পান রমজানে। তখন দেশে আসেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে । ঈদ শেষে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। রোজার আগের মাসের কথা। তার বাবা রিজওয়ান আবেদ এবার একমাস বেশি ছুটি পেয়েছেন। তিনি উত্ফুল্ল। এবার দুইমাস একসাথে কাটাবেন পরিবারের সাথে। ফোন দিলেন।

কথা হচ্ছিল ওনার আর আলিশিয়াতে।

মামনি টা কেমন আছে?

বয়সের তুলনায় বেমানান গম্ভীর স্বরে বলে মেয়ে
ভাল তুমি কেমন আছ বাবা ?

বাবা মাঝে মাঝে থতমত খেয়ে যায় মেয়ের ভারিক্কি স্বরে , ব্যক্তিত্বে।

ঠিক হলো এই মাসের দশ তারিখ এ উনি দেশে এসে পৌছবেন।

আলিশিয়ার একভাই এক বোন্। দশ বছরের বোন ষোল বছরের ভাই। মা ঢাকা ভার্সিটির হিস্ট্রির অধ্যাপিকা। মা কাজে চলে গেলে বলা যায় সে তার ভাই বোনের অভিভাবক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টা ঘটনা। ছোট দুইভাই বোন ই তার গার্জিয়ান ভূমিকা পালন করে মায়ের অনুপস্থিতিতে।

আপু খেতে অস। শুতে যাও। বোনটিকে তারা একটু ভয় পায়। এ কেন যেন স্বাভাবিক নয়। খুব গম্ভীর চুপচাপ সবসময়।

দুপুরে মা ফোন করেছে।

কি করছ আলিশিয়া ?

বসে আছি।

পড়াশোনা করছনা ?

মা কিভাবে বাসায় আসছ আজ ?

আন্টির গাড়িতে । মার জবাব।

কোন রাস্তা হয়ে আসবে ?

তেজগাঁও ইন্দিরা রোড হয়ে। ....

ওখানে আজ বিশাল জ্যাম। ওই রাস্তায় গেলে সারারাত বসে থাকতে হবে। বাসায় আসতে পারবেনা। তুমি রিকশা করে তাড়াতাড়ি চলে এস। আমি তোমাকে মিস করছি।

মা অবশ্য শোনেননি মেয়ের কথা। ইন্দিরা রোড এ এসে দেখে রাস্তা ব্লক করে আছে পুলিস। বড় দুর্ঘটনা হয়েছে আজ এখানে। তাদের গাড়িতে পিছিয়ে অন্য রাস্তায় যাবে সে উপায় নাই। পিছনে বিশাল লম্বা লাইন গাড়ির। এখন যে জিনিস করা যায় গাড়ি ফেলে হেটে অন্য রাস্তায় এসে ট্যাক্সি কল করা যায়। ভদ্রতার কারণে তার বান্ধবী সুমা একা তাকে ফেলে ও আসতে পারছেন না মা

টেনশন এ মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বারবার ফোন করছেন।

সবাই দরজা জানালা বন্ধ করে পড়তে বস মা চলে আসছি কিছুক্ষণে।

সে জানত মা আজ সকালের আগে বাসায় আসতে পারবেনা।

আজ সে সত্যি অভিভাবক হল ছোট দুই ভাই বোনের। ভাই বোনকে খাইয়ে সে ধ্যানে বসে পড়ল। তার মার পক্ষে জানা সম্ভব না সে এই মুহুর্তে মাকে স্পষ্ট দেখছে। কপাল টিপে গাড়িতে বসে আছে।

সকাল ৪:৩০ স্পেশাল ট্রাফিক পুলিস , সশস্র বাহিনীর পুলিস এসে রাস্তা নিয়ন্ত্রণ এ আনল। আস্তে আস্তে সব গাড়িকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল।

বাসায় এসে পৌছলেন তিনি সকাল ছয়টায়। ক্লান্ত বিদ্ধস্ত অবস্থায় তিনি সোফায় এলিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। আলিশিয়াকে দেখে একটু ভয় জড়তা কাজ করল প্রথমে।

সব দ্বিধা ঝেড়ে মেয়েকে কাছে ডাকলেন

আয় মা কাছে আয় বলে বুকে জড়িয়ে নিলেন।

ভাবনায় তলিয়ে গেলেন মা। আলিশিয়া র আট বছর বয়সে একবার টাইফয়েড হয়েছিল যাতে তার জীবন সংশয়ের মত হয়েছিল। মরার হাত থেকে বেচে ফিরে এসেছিল।

তখন থেকে মেয়েটার পরিবর্তন হতে শুরু হল। প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠত।

তার ফুফুর ধারণা হয়েছিল জ্বিনের আছর হয়েছে। গ্রামের বাজে টোটকা চিকিৎসা হয়েছিল কবিরাজের মাধ্যমে।

হায় আল্লাহ আমার এত সুন্দর মেয়েটাকে স্বাভাবিক করে দাও। আর কিছু ই চাইনা।

মায়ের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
২২টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×