somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা ছিলাম এককামরার সহযাত্রী

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভূমিকা : আমার সহ ব্লগার অতি প্রিয় কামাল ভাই প্রথম আলো ব্লগ এ তার শুক্রবার এর আড্ডা পোস্ট দিয়েছিলেন। এবার তার একটি বিষয়বস্তু ছিল " প্রেম রোমাঞ্চ " ।আমাকে উনি বললেন আপু অভিজ্ঞতার কথা বলুন। বললাম অভিজ্ঞতা না গল্প (কাল্পনিক গল্প ) ।যখন দেখলাম বড় হয়ে গেল লেখা টা তখন চিন্তা করলাম সামুতে গল্প হিসাবে পোস্ট করি। এ শুধু হালকা বিনোদনের প্রেম কাহিনী বলা যেতে পারে। ক্ষণিক বিনোদনের জন্য লেখা। গভীর কিছু না খুজলে খুশি হব। সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা ভালবাসা সহ গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।
=============================================
মূল গল্প :

ঢাকা টু সিলেটের ট্রেন এর এই কামরায় প্রথম ওর সাথে দেখা। পাওয়ার ফুল চশমায় ঢাকা চোখ। আমার ঠিক মুখোমুখি ওকে বসে থাকতে দেখি।বই এর পাতায় নিবিষ্ট চোখ। আমি ছাড়া আর ও দুইজন মেয়ে ছিল ওই কম্পার্টমেন্ট এ।যারা চেহারা সৌন্দয্যে পুরা ট্রেন এ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। কোন মেয়ের দিকে তাকানো বা দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা ছিলনা প্রচলিত ছেলেদের মত। প্রথম দুইঘন্টা যাবত ছেলেটির চোখ দেখেছি অবনত বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ।

আমি তখন এম এস সি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সিলেটে এক বান্ধবীর বিয়ে যেতে ওর মুখোমুখি আমি। এর মধ্যে ট্রেন এর স্ন্যাকস এর লোকটি এসে জিজ্ঞাসা করল আমাদের কিছু চাই কিনা ?তখন ও ছেলেটির চোখের সামনে বই টি নড়েনি।

আমি একটা চা নিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে থাকলাম। আজকে আবহাওয়া টা চমত্কার।

আমার চোখ টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। লং টাইম একসঙ্গে পড়া নিষেধ আমার জানেন। কিন্তু বই দেখলে আমি সামলাতে পারিনা।

চমকে উঠলাম কার ও কথা শুনে। তাকিয়ে দেখি আমার মুখোমুখি ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। তার মুখে হাসি এবং বন্ধুত্বের আভাস। ছেলেটি চশমা খুলে চোখ মুছে নিচ্ছে রুমালে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাসল। এতক্ষণ এ ছেলেটির চোখ দেখলাম। খুব দুরের অন্যমনস্ক চাহনি ,তার সাথে শিশু সরল একটা মুখ। অনেক পড়াশোনা করে তার চোখ দেখে বলে দেওয়া যায়। চোখের পাতায় ক্রমাগত ঘূর্ণন ,কাপনে বুঝা যাচ্ছে রেটিনাটির অবস্থা টি সুবিধার নয়।

চা খাবেন ? আবার কথা বলে উঠল ছেলেটি। আমার দিকে বাড়িয়ে দিল তার বিস্কুটের প্যাকেট। চমত্কৃত হলাম তার অফার এ।

চা খেতে খেতে দুজনের কিছু কথা হল।

লাঞ্চ এর সময় আসতে আমি পরোটা সবজি অর্ডার করলাম। সৌজন্যের খাতিরে অফার করলাম।মনে হল অফার এর জন্য অপেক্ষা করছিল। তাড়াতাড়ি নিজের সিট ছেড়ে আমার পাশে এসে বসল।

অনেক ক্ষুধার্ত আমি হেসে বলল।

হাসিটা এমন বুকের ভিতর টা নড়ে উঠল। ভিতর বাহির এর বেশ স্বচ্ছ তার হাসি বলে দিল।

জানেন আমাকে এখন ও আমার মা খাইয়ে দেন। এমনভাবে প্রত্যাশা করে কথা টা বলল হাসি পেয়ে গেল।

তাহলে মাকে নিয়ে সবসময় ঘুরবেন ডাইনিং টেবিল মনে করে। বলে মনে হল মাইন্ড করল কথাটায়। এইভাবে বলা উচিত হয়নি মনে হয়।

মুখ গোমড়া করে বসে রইল কিছুক্ষণ। তারপর আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসল। ভিতরে ভিতরে হাসি পেলে ও একসঙ্গে অস্বস্তি বোধ করছি এই ভেবে কিভাবে তাকে আবার স্বাভাবিক করব।

কিছুক্ষণ পরে নিজে আবার সহজ হয়ে কথা বলা শুরু করল। আমি হাপ ছেড়ে বাচলাম।

আপনার কি এটা ঠিক হল ? মাকে ডাইনিং টেবিল এর সাথে তুলনা করলেন।

আমাকে হাসতে ই হল জোরে। আপনি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এ মুখ ফসকে বের হয়েছে কথার কথা। মাকে কেন এরকম মীন করব। তবু ও আমি দুঃখিত। প্লিস কিছু মনে করবেন না।

দ্রুত এসে আবার পাশে বসে পড়ল।

এবার আমি অস্বস্তিবোধ করতে থাকলাম। আমারদের পাশে আর ও চারজন যাত্রী আছেন দুইজন মেয়ে দুইজন বয়স্ক লোক। মনে হয় বাবা মেয়ে। মেয়ে দুইজন তেরছা চোখে আমাকে খেয়াল করছে। সবজায়গায় আমাকে এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। ছেলেদের আমার প্রতি আগ্রহ প্রকাশে মেয়েদের সমালোচনায় পড়তে হয়। তাদের দৃষ্টি আচরণে মনে হয় এতে আমার ইন্ধন আছে।

খাওয়া শেষ করে ছেলেটি উঠে দাড়াল। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এল হাতে আইসক্রিম নিয়ে।


কথা হল আর ও। তার ছোট দুই বোন আছে স্কুল এ পড়ে। বাবা ন্যাশনাল ব্যান্ক এর এম ডি। মা পড়ায় কলেজ এ। সে সদ্য পাশ করে বের হয়েছে। মাইক্রো বায়োলজি তে মাস্টার্স করেছে। এখন জব খুজছে। একটা জব এর ইন্টারভিউ দিতে সে সিলেট যাচ্ছে।

চমত্কৃত হলাম আবার ও। আমার মা ও কলেজে পড়ায়।

ছবি তুলব ট্রেন এর জানালা থেকে। ফোন এর কি হয়েছে। ছবি উঠছিলনা। ও একটু দেখে বল এখন তুলুন।

তুললাম ছবি আর ও কথা হল। একপর্যায়ে আমি একটা ছবি তুললাম ওর ওর ই অজান্তে। যখন বই পড়ছিল মাথা নিচু ছিল।

নির্ধারিত স্টপ আসাতে আমি নেমে পড়লাম। তাকাতে দেখি ব্যগ্র হয়ে জানালা দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে আছে।

এই তুমি পারবে তো দেখে শুনে যেতে ? ওয়েট আমি আসছি।আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করল । এর মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিল। আমি আর ও দাড়িয়ে রইলাম ঘন্টা খানিক। ওকে আর পেলামনা।

রিক্সা ঠিক করলাম। বসতে ফোন বেজে উঠল।

এই আমি ট্রেন থেকে নামতে পারিনি। তবে তোমার ঠিকানা বল। কাল তোমার বাসায় আসতে পারি।

ওহ আমার নাম্বার কিভাবে পেলে? আশ্চর্য্য হলাম ভারী ।

যখন তোমার ক্যামেরা ঠিক করছিলাম তখন চালাকি করে তোমার ফোন থেকে আমার নাম্বার কল করেছি। দুঃখিত তোমার পারমিশান ছাড়া নিয়ে নিলাম। বলল হেসে ।

এইভাবে শুরু হল আমাদের কথা। এখন ও চলছে। ....জীবনের কথা। .
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৫৫
৩৫টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×