অনেকক্ষণ ধরে চাদনী চক এর একটা দোকানে শীলম ঘুরছে। মায়ের জন্য উল কিনতে এসেছে সে। খুব শখ মায়ের সবার জন্য নিজের হাতে মাফলার মোজা এসব বানানো। তার জন্য বিভিন্ন দোকান ঘুরে বিভিন্ন রং এর উল এর খোজে সে চষে ফেলছে গোটা চাদনী চক। দুইটা কালার এখন ও ম্যাচ করাতে পারেনি । তখন ই সচেতন হল সে।
কেও একজন তাকে অনুসরণ করছে। যখন পিছন ফিরে দেখার চেষ্টা করে কাওকে সন্দেহ করার মত পায়না। কিন্তু তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে কেও তার পিছন পিছন আসছে। রাত নয়টা বেজে যাচ্ছে প্রায়। তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার তাগিদ অনুভব করল। এত ভিড় এই জায়গায়। ভিড়ের মধ্যে কেও একজন তার গায়ে হাত দিল। শীলমের মনটা বিরক্তি আর ক্ষোভে ভরে গেল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিড় ঠেলে রাস্তায় আসার চেষ্টা করল। আজকে আর কেনা যাবেনা কালকে এসে চেষ্টা করবে আবার।
রাস্তায় আসা মাত্র তার পাশে ব্রেক কষে গাড়ি থামল। ভিতর থেকে কেও হাত বাড়িয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিল। সে কিছু বুঝে উঠার আগে কেও মুখে চেপে ধরল রুমাল। চেতনা হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল।
লাপ দিয়ে বিছানায় উঠে বসল সে। একি অলুক্ষুনে সপ্ন রে বাবা। বুকটা এখন ও ধড়ফড় করছে ওর।
ঘড়িতে বাজে তিনটা। এই অসময়ে ঘুম ভাঙ্গা অর্থ আর ঘুম আসবেনা। তাই উঠে কম্পিউটার খুলে বসল।ব্লগ এ ঢুকল। চমত্কার চমত্কার চিঠি। পড়তে পড়তে একটু আগের বাজের সপ্নের রেশ কেটে গেল। মন এখন বেশ হালকা লাগছে।
সে ও লিখল হালকা ছোট কবিতা। অনেক এ বেশ মজা পেল। এইধরনের কবিতা তুমি লিখ। তোমাকে সিরিয়াস লেখিকা জানতাম।
সামি তার ইনবক্স এ মজার কবিতা লিখে পাঠাল।
বাঁধনে বাঁধাও মোরে কাঁদাও
মনে মোর বাসনা
কেন কাছে আস না
কাছে ,আমার আকাশে
চেয়ে থাকি শুধু
মন করে ধুধু
কিসের হাহাকারে
বারে বারে
অনেক গভীরে
মন মন্দিরে
বাঁধনে বাঁধাও
মোরে কাঁদাও ।
সামি বলছে মজা করে তোমাকে নিয়ে অতঃপর লিখলাম কবিতা। তুমি ও তো লিখছ আমাকে নিয়ে তাইনা ?
নাহ তোমাকে নিয়ে না ভিতরে যে আছে আমার আরেকজন তাকে নিয়ে , দুষ্টুমির সুরে বলে শীলম।
নাহ মেয়ে তোমাকে বুঝিনা। খুব দুর্বোধ্য তুমি সময় সময় আমার কাছে।
বেশি বুঝনা। আস্তে আস্তে আমাকে বুঝ তাই চাই। সম্পূর্ণ বুঝে গেলে তো আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলল সে হেসে।
আগ্রহ হারানোর কি আছে। আমি তোমাকে ভালবাসি তোমাকে চাই। তুমি কি চাওনা আমাকে খুব আগ্রহে ব্যাকুল ভাবে সামি তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
সামিকে সব কিছু বলতে পারছেনা। মা বাবার ইতিমধ্যে তার জন্য পাত্র দেখা শুরু করছে। সে মাকে বলতে পারছেনা সব কথা। অবশ্য সামিকে ঠিক স্বামী হিসাবে এখন ও চিন্তা করেনি। শুধূ কথা বলতে ই ভাল লাগে বা ভাল একজন বন্ধু ই বলা যায়। সামি র আবেগ দেখে তাকে প্রত্যাখান করবে, কিভাবে দুঃখ দিবে তাই ভাবে সে।
সকাল দশটা বাজে। আজকে বাসায় খুব হুড়াহুড়ি। ব্যাপার কি ? জানা গেল কানাডা প্রবাসী এক ভদ্রলোক আজ আসছেন তাকে দেখতে।
মনটা বিষন্নতায় ডুবে গেল ওর। এখন মা বাবা কে তার কোন ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা বলতে পারবেনা। এত অসহায় আর অসুস্থ দুজন।
বিকাল পাচটা। যথাসময়ে পাত্রপক্ষ হাজির। পাত্রের এর মামা , বোনসহ পাত্র নিজে। ওর বুকের ভিতরে কাপতে লাগল। এতক্ষণে সে তার সপ্নের অর্থ টা বুঝতে পারল। মা বাবাকে বলতে পারলনা সে দেশের বাহিরে যেতে চায়না।
(পরবর্তীতে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬