somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীলমের দৈনন্দিন জীবন (পর্ব-চার)

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গেল গো

ফিরিল না, চাহিল না, পাষান সে।
কথাটি ও কহিল না, চলে গেল গো।
না যদি থাকিতে চায় , যাক যেথা সাধ যায়,
একেলা আপন মনে দিন কি কাটিবে না।
তাই হোক , হোক তবে-
আর তারে সাধিব না।
(গীত বিতান থেকে )

এই কবিতা টা কেমন ? আগ্রহে ঝুকে আসে সামি শীলমের দিকে।

ও আজ বেশ উন্মনা। অনেকক্ষণ ধরে ভাবছে সে আজ বলে ফেলবে সামিকে সে কি ভাবছে সামি এবং তার পরিবার নিয়ে। বলতে গিয়ে বারবার বাধা আসছে মনে। আবার বেশি অপেক্ষা করিয়ে রাখা ও সামিকে ঠিক হচ্ছেনা।

ব্যাপার কি কোন জগত এ আছ তুমি। এত চমত্কার কবিতা লিখলাম পাত্তা ই দিচ্ছনা হয়েছে কি ? সামি বিষন্ন একটু।

মাথা ব্যথা হচ্ছে ভীষণ কি বলবে ভেবে না পেয়ে তাই বলল সে।

দাড়াও চা নিয়ে আসি। দৌড়ে সে পাশের দোকানে চলে গেল চা আনতে গেল ও কে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে।

শীলম ডুবে গেল গভীর ভাবনায়। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কাল রাতে। শুক্রবার আখত এবং পরের সপ্তাহে অনুষ্ঠান। এখন ও তা বলা হয়নি সামিকে। সে আজ কিছুটা নিজের উপর বিরক্ত নিজের অসহায়ত্বে। কখন ও চিন্তা করছে মা বাবার কখন ও চিন্তা করছে সামির। একবার নিজেকে বলে বসল আমি কি চাই ? কেন নিজের কোন ইচ্ছের কথা কাওকে বলতে পারিনা। কেন আমার আপন জন রা খেয়াল করেনা আমাকে আমার মত করে। সবাই কে ভাবতে গিয়ে কেন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরক্ষণে নিজে নিজেকে ধিক্কার দিল।

ছিঃ ছিঃ এ আমি কেন স্বার্থপরের মত নিজের কথা ভাবছি। আজ মা অসুস্থ। হয়ত আমার বিয়ের আনন্দে মা আবার আগের মত হয়ে যাবে। এই দুইদিনে আনন্দে মা কিছুটা আগের মত চঞ্চলা আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

সামি দৌড়ে এলো চা আর ফুচকা নিয়ে।

এই ফুচকা খাও তো সুন্দরী বড়লোকের মেয়ে? আমি গরীব মানুষ। বাহিরে নিয়ে দামী ডিনার করাতে পারবনা। শুধু ফুচকা আর চা আছে কপালে। বল এরকম স্বামী কি কবুল ?

এতক্ষণে শীলম হেসে তাকাল।

যাক নয়ন হারিনী হৃদয় নাড়ানি এতক্ষণে হাসিতে কৃপা বর্ষণ করল।

কি উল্টা পাল্টা ছন্দ বল ? হৃদয় নাড়ানি শুনলে আমাদের ব্লগ এ আছে দুইজন তোমারে এ টু জেড ছন্দ শিখিয়ে ছাড়বে।

চা খেতে খেতে সহজ আর অন্তরঙ্গ হল দুজন কিছুটা আগের মত।

শীলমের সেল ফোন বেজে উঠল।

ফোন ধরতে ওইপাশে বেশ মার্জিত পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল।

শীলম আমি কি কথা বলতে পারি কিছুক্ষণ আপনার সাথে ? বুঝতে অসুবিধা হলনা শীলম এই কন্ঠ কার।

জ্বি বলুন। সামি ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে হাত নেড়ে জিজ্ঞাসা করছে কে কে ?

ওপাশের পুরুষ কন্ঠ বলছে আপনি কোথায় জায়গা টা বলুন। এখন ই আসছি আপনাকে পিক করতে।

শীলম খুব বিব্রত অবস্থায় এই মুহুর্তে। বন্ধুর সামনে কিভাবে বলে তাকে পিক করতে আসতে। এদিকে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে যার সাথে তাকে বলা যায়না এইমুহুর্তে সে একজন পুরুষ বন্ধুর সাথে বসে আছে। যদিও তার দৃষ্টিতে এখন ও সামির সাথে তার সম্পর্ক টা নিস্পাপ বন্ধুত্বের। সামি একাই সেভাবে ভাবছে। তার ভুল যেটা সামিকে আঘাত দিতে না পারার কারণে কিছুটা মৌনতা অবলম্বন করে মাঝে মাঝে।

ভদ্রলোককে তার ঠিকানা বলল এবং সামিকে যা বলল আমাকে বাসাতে পিক করতে আসছে মা এর পরিচিত একজন। এখন উঠতে হবে। রাতে ফোন এ কথা হবে বলে একপ্রকার সামিকে দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে উঠে দাড়ায়।

হাটতে থাকে সামনের গন্তব্যে। পিছনে না তাকিয়ে ও বুঝতে পারে সামির চোখে জল। সে নিজেও তার চোখের জল মুছে নিল।

আমরা মানুষ বড় অসহায়। সবার বেদনা ,সব কষ্ট আমি মুছে দিতে পারবনা। আমি শুধু পারব মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিতে। তাই আমি করব এবং আমাকে করতে হবে।

নির্ধারিত জায়গায় এসে দাড়াতে সামনে এসে ট্যাক্সি থামল। ভিতর থেকে ভদ্রলোক ইশারা করলেন পাশে বসতে।

এতক্ষণ মন খারাপ হয়ে থাকলে ও এখন সে মুগ্ধ হয়ে গেল ভদ্রলোকের চেহারায় ব্যক্তিত্বে। বেশ সুদর্শন ভদ্রলোক। তাকে পাশে জায়গা দিয়ে তিনি নিজে সরে বসলেন। যাতে শিলা চমত্কৃত হল। তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখেছে ছেলে বন্ধু সামি পাশ ঘেষে বসার চেষ্টা করে। সে অপ্রস্তুত হলে ভাবে এ তো ছেলেদের স্বভাব। কিন্তু এই ভদ্রলোকের ব্যবহার বেশ ভদ্র। মনে হচ্ছে তিনি একটু লজ্জা পাচ্ছেন কিভাবে কথা বলা শুরু করবেন।

একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়ি থামল। গাড়ি থেকে নেমে পাশের সিট টা খুলে ধরলেন শিলা কে হাত ধরে নামতে সাহায্য করলেন।

রেস্টুরেন্ট ঢুকে একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে বসল তারা।

আপনাকে কিছুটা জানতে এখানে নিয়ে আসা। আপনার নিশ্চয় আমার সম্পর্কে জানার ইচ্ছে আছে। বাহিরে থাকি , চরিত্র ঠিক আছে কিনা , পড়ালিখা সার্টিফিকেট ভেজাল না তো বলে এতক্ষণে ভদ্রলোক একটু জোরে শব্দ করে হেসে ফেললেন।

হাসিতে শীলম ভদ্রলোকের খোলা মনের পরিচয় পেয়ে গেল আজ যেটা গত দুইদিনে পায়নি। হাসিতে মনে হল এ ভিতর বাহিরে স্ফটিকের মত স্বচ্ছ।

আপনার লিখা পড়েছি ব্লগ এ। বেশ লিখছেন। বলে উঠলেন তিনি। আমি ভাবছি বই হিসাবে প্রকাশ করব কিছু লিখা তোমার। এই প্রথম ভদ্রলোক তাকে তুমি বলল। আমি বলা যায় তোমার লিখা আর ব্যক্তিত্বের গুনমুগ্ধ একজন। হাসলেন আবার।

একঘন্টা বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলল পরস্পরকে জেনে নিল তারা। বাসায় যখন তাকে নামিয়ে দিল

তার মুখে ছিল কবিতার লাইন

আমার যেতে সরে না মন _
তোমার দুয়ার পাড়ায়ে
আমি যাই যে হারায়ে
অতল বিরহে নিমগন।
(গীত বিতান থেকে )

সিড়িতে উঠতে উঠে ঘরের দরজার কাছে পৌছতে পৌছতে আজ ভুলে গেল তার বন্ধু সামির কথা , তার অশ্রুজলের কথা। সে তীব্র ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে পড়ল মাত্র একঘন্টার পরিচয়ের এই লোকটির জন্য।

তাকে টানতে থাকল দূর দেশ কানাডা , এই ভদ্রলোক চুম্বকের মত।

জীবন এরকম ই হয়ত। মেয়েরা হয়ত এরকম ই দুর্বল। পানির মত যেই পাত্রে রাখা যায় তার শেপ ধারণ করে। সে তার মনে বাহিরে চাকচিক্য ময় জীবন , এই আকর্ষনীয় ভদ্রলোক কে আর ও বেশি মায়া আকর্ষণের কভারে যেন জড়িয়ে নিতে চাইল হতাশা কে না ভেবে।

পরের সপ্তাহে ধুমধাম করে হয়ে গেল শীলমের বিয়ে।

পরবর্তীতে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৫২
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×