somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মৎসকন্যার কাহিনী (কাল্পনিক কাহিনী )

১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমুদ্রতে সময় কাটানো তার অনেকটা নেশার মত। ঘন্টার পর ঘন্টা সে সমদ্রের তলদেশে সময় কাটায়। মায়ামী বিচ এ কাজ করে কোস্ট গার্ড এর। যদিও তার কাজ সমুদ্রে আগত যারা ইযর্ট বা সমুদ্রে সাতার কাটা অবস্থায় বিপদে পরে তাদের বাঁচানো। তীরে লাইফ সিকিউরিটি র কাজ করে। কিন্তু সমুদ্র , পানি তার অনেক টা জীবনের মত। প্রতিদিন কিছুটা সময় এর পানিতে অবগাহন করে যেন জীবনের স্বাদ পায় সে।

নাম তার রিশান মৌতিফ । ক্যালিফোর্নিয়া তে তার বাস যদিও কাজের জন্য প্রতিদিন দিনের অধিকাংশ সময় এই বিচ এ কাটায়। আজ বিচ এ দুর্যোগ সংকেত দেওয়া হয়েছে কতক্ষণ আগে। ধীরে ধীরে সব মানুষ বিচ ছেড়ে নিরাপদ লোকালয়ে ফিরে গিয়েছে। একমাত্র সে এখন সাতরিয়ে চলেছে পানিতে। আজ সে ডুবুরীর পোশাক পরে নিয়েছে। সাতরে সে আজ চলে গিয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। আজ চলে এসেছে অনেক গভীর ভিন্ন এক জায়গায়।

আচমকা চোখে এক আলোর ঝলকানি পড়তে সে থমকে দাঁড়াল। আলো অনুসরণ করতে করতে অভিভূত হয়ে দেখল সামনে এক ছায়ামূর্তি। ছায়ামূর্তির পিছন থেকে দেখতে পাচ্ছে। শারীরিক আকৃতিতে মনে হচ্ছে মানবী নারী !!! চমকে আর ও মনযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে সামনের ছায়ামূর্তি কে অনুসরণ করতে থাকে।অবাক হয়ে লক্ষ্য করে একসময়ে মূর্তি টি এসে থামে একটি বিশাল ঝিনুক আকৃতির প্রাসাদের সামনে। বা প্রাসাদ না বলে ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন বলা যায়। অভিভূতের মত দেখল সামনে কোন একটা কিছু চাপ দিতে দরজার মত একটা পাল্লা খুলে গেল। মেয়েটি এর ভিতরে ঢুকতে দরজা টি বন্ধ হয়ে গেল।

রিশান হতাশ হয়ে গেল সঙ্গে ঢুকতে পারলনা বলে। একবার ভাবছে দরজায় নক করবে কিনা। সঙ্গে সঙ্গে আবার দরজাটি খুলে গেল। সে তড়িৎে আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।

আশ্চর্য্য একটা গুনগুন আওয়াজের সাথে মাথা হেলিয়ে মনে হচ্ছে গান গাইছে। এ কি কল্পনা তার ? ডুবুরীর মাস্ক পরে গান গাইতে পারার কথা না।

এত স্বচ্ছন্দে মেয়েটা মাথা দুলিয়ে সাতরে যাচ্ছে ভাবা স্বাভাবিক এ সমুদ্রের এক কন্যা। এই পাতালে তার বাস।

খুব সাবধানে একটু দূর থেকে মেয়েটিকে অনুসরণ করতে থাকে সে।

একসময় মেয়েটি ঝট করে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দেখল। ঝোপের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল রিশান। সচেতন হতে দেখল মেয়েটা সাগরের একেবারে তলদেশে চলে এসেছে। তার হাতে এক সার্চ লাইট আছে যা দিয়ে মনে হচ্ছে কিছু একটা খুজছে সে। একটা জায়গায় থামল। কিছু লতাপাতা ধরনের টেনে টেনে ছিড়ে নিল।

এবার সে আগের জায়গায় যেতে শুরু করল। হিসাব মতে সে প্রায় ছয় ঘন্টা কাটিয়ে ফেলেছে সাগরে। এই মুহুর্তে থাকা তার জন্য ঠিক নিরাপদ না। তার ডুবুরীর পোশাক আর কতক্ষণ অক্সিজেন সরবরাহ করবে সেটা ও ভাববার। কিন্তু তারপর ও নেশাগ্রস্থের মত অগ্রবর্তিনী কে অনুসরণ করে চলেছে।

আবার আগের সেই ঝিনুক আকৃতি খোলস এর কাছে চাপ দিতে দরজা খুলে। তারপর মাথা ঘুরিয়ে ইশারায় তাকে ডেকে বসল মেয়েটি।
চমকে প্রায় মাথা নিচু করে ফেলতে নিয়েছিল সে। পরে যখন বুঝে গেল ধরা পড়ে গিয়েছে সামনে এসে দাড়াল। মেয়েটির ইশারামত ঝিনুক আকৃতি যানটির ভিতরে এসে ঢুকল। ভিতরে আসার পর এক সুইচ চাপতে দেওয়াল আস্তে উল্টে মেঝের উপর লেগে গেল। সাগরের পানি তলদেশে চলে গেল।

এ অনেক টা ডুবো জাহাজ এর মত। মেয়েটি এবার তার ডুবুরীর পোশাক খুলে ফেলল।

নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল রিশান মৌতিফ এর। অসহ্য রকমের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এক তন্বী রূপসীর সামনে সাগরের তলে।

হতভম্বের মত তাকিয়ে রইল সে।

আমি ত্রিলিনা নিত্রিভ জেহার্ব এর কন্যা।

নিত্রিব নিত্রিব কোথায় নামটি পড়েছে। স্মৃতির পাতা হাতড়াতে গিয়ে চমকে উঠে তাকায় পাশ্ববর্তিনীর দিকে।

প্রফেসর নিত্রিভ সৌর মন্ডলী নিয়ে গবেষণায় আলোড়ন ফেলে দেওয়া তথ্য প্রফেসর এবং তার অন্তর্ধান ,অনেকদিন যাবত বড় দৈনিক সংবাদে এর খবর প্রতিদিন ই পড়া অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে সে।

আপনার বাবা হতভম্ব অবস্থা থেকে উঠে এই শব্দ ই উচ্চারণ করতে পারল।

বাবা এখানে।

আবার ও হতভম্ব হওয়ার পালা।

আমার জন্য।

আপনার জন্য কেন ?

খেয়াল করে দেখুন আমায়। মেয়েটি বলে এবার বেদনার স্বরে।

তাকিয়ে এবার বুঝতে পারে কেন মেয়েটি এত স্বচ্ছন্দ পাতালে সাতারে। এতক্ষণ মেয়েটিকে মনে করেছিল লম্বা গাউন পরে আছে। গাউন একটু তুলে সে দেখাল তার শরীরের আকৃতি। নিচের দিকে মাছের মত। মানুষের মত কোন পা নেই যা বলা যায় অনেক টা মাছের লেজ পাখার মত।

এত অপূর্ব সুন্দরী মনমোহিনী যে কিনা ,মুখের সৌন্দয্যে হেলেন অফ ট্রয় ,ক্লিওপেট্রা কে ও পিছনে ফেলে দেওয়ার মত। রিশানের মনটা বেদনায় ভরে গেল।

আমি যখন মায়ের গর্ভে ছিলাম তখন আমার মায়ের এই রোগ ধরা পরে। বড় অদ্ভুতভাবে তার শরীরের নিচের অংশ শুকিয়ে যেতে থাকে ,একসময় দুই পা মিলিয়ে যায়। উনি হাটতে পারতেননা। কিন্তু পানিতে নামিয়ে দিলে শুধু সাতার কাটতে পারতেন। আমার জন্মের পর মা মারা যান। কেন না পানি ছাড়া অসুস্থ হয়ে যেতেন। বাবা সারাক্ষণ ওনাকে বাথ ট্যাব এ শুয়ে রাখতেন।

আমি পনের বছর পর্যন্ত আর সব মেয়েদের মত ছিলাম। যখন আমি নারীত্বে পৌছলাম সেদিন থেকে আমি যেন থাকতে পারছিলামনা ,মাটিতে হাটতে পারছিলামনা। একসময় আমার মায়ের মত হল আমার , দুই পা লোপ পেয়ে গেল তখন আমার বয়স আঠার। বাবা ভয় পেয়ে চলে এলেন এই সাগরের তলদেশে পৃথিবীর মানুষের আড়াল থেকে। আমার বয়স এখন চব্বিশ। ছয় বছর ধরে আমি সাগরের তলদেশে আছি , শেষের দিকে মেয়েটি মুখ ঢেকে ফেলে।

রিশান বেদনা অনুভব করে মেয়েটির পাশে বসে পড়ে।

তুমি কি কিছু খাবে ? ক্ষুধার্ত ? জিজ্ঞাসা করে মেয়েটি।

আমি শুধু সবজি খেতে পারি কিন্তু তোমার জন্য মাছ বারবিকিউ করতে পারি যদি খেতে চাও।

খেতে খেতে আর ও কিছু কথা জানা হল। তার বাবা এক আশ্চর্য্য লতা গুল্মের সন্ধান পেয়েছেন তিনি তা দিয়ে এক অয়েন্মেনট বানিয়েছেন যা এখন সে ব্যবহার করছে ,এখন শরীরে ব্যথা কম অনুভব হয়। বাবা এখন আশাবাদী যে আমি সুস্থ হয়ে উঠব। পৃথিবীতে আবার ফিরে যাব। স্থলের কোন মানুষের সাথে আমার সংসার হবে এইটুকু বলে সে হাসল।

তোমাকে এই অবস্থায় ও যে কোন ছেলে ঘর সংসার করতে চাবে আমিও চাই ,কিন্তু তা হয়তবা তোমার জন্য নিরাপদ হবেনা ,তুমি সার্ভাইব করতে পারবেনা ,মনে মনে আবেগে কথা গুলি বলতে থাকে রিশান।

তুমি কি কিছু বললে মেয়েটি হেসে জিজ্ঞাসা করে।

রিশান হেসে বলে মনে মনে বলছিলাম।

দুজনে দুজনের দিকে আবেগে তাকায়।

রিশান এর যাওয়ার সময় হয়ে এল। বিদায় নেয় সে প্রত্যাশা নিয়ে এ নিশ্চয় কোন স্বপ্ন নয়। কাল ও আমি ওকে দেখতে চাই। যদি পারতাম তাকে পৃথিবীর মাটিতে নিয়ে একসঙ্গে হাত ধরে হাটতে।
স্বপ্ন দেখছে সে এখন ই। প্রকৃতি জানে হয়ত হতে পারে কোনদিন।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০৮
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×