somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

সাতু দু ব্রুই ও দোভিল সুমদ্র সৈকতের একদিন (শেষ পর্ব)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফরাসি খাবার তালিকায় মদ একটি ঐতিহ্যবাহী পানি।সমস্ত ফরাসি ভূখণ্ডে নামী ব্রান্ডের মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানার পাশাপাশী রয়েছে অসংখ্য অপরিচিত ছোট ছোট কারখানা এমনকি ফরাসি গ্রামাঞ্চলে অনেক কৃষি পরিবারে পারিবারিক ভাবেও তৈরি হয় মদ যেমনটি আমাদের দেশে কাঁচা আমের সময় গ্রামের অনেক পরিবার তৈরি করে কাসুন্দি।এখানে আঙুর এবং আপেল অন্যতম কৃষি পণ্য যা বিশেষত মদ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহিত হয়ে থাকে।ফরাসি রপ্তানিজাত পণ্যের মধ্যে মদ অন্যতম।আমাদের দেশের বিভিন্ন মেলায় যেমন স্থান পায় আমাদের দেশজ উৎপাদিত প্রধান পণ্যসামগ্রী আর এখানকার শহর কিংবা গ্রামে কোন মেলার আয়োজন হলে সেখান প্রধানত স্থান পায় মদ ও পনীর।এই দুটি পণ্য ফরাসি ঐতিহ্যের অন্যতম অংশীদার।

আমরা যখন সাতু দু ব্রুই থেকে বিদায় নিয়ে গ্রামীণ জনপদের ভেতর দিয়ে দোভিললের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম তখন চোখে পড়ল অসংখ্য আপেল বাগান।উঁচু নিচু গাছপালা বেষ্টিত সবুজ ভূমির কোথাও কোথাও নয়নাভিরাম গ্রামীণ ঘরবাড়ী।
দোভিল রেল ষ্টেশনে পৌঁছানোর পর আমাদের ভ্রমণ নির্দেশনাকারী ঘোষণা করলেন সন্ধ্যা ছয়টার সময় ভ্রমণ বাস প্যারিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে,সুতরাং সবাইকে ছয়টা বাজার পনেরো মিনিট পূর্বে বাসে অবস্থান নিতে হবে।
সবারই সঙ্গী রয়েছে এবং অধিকাংশই স্বেদ চামড়ার আমার অপরিচিত জন তাই সঙ্গীহীন আমি একাই আমার ক্যামেরাকে সঙ্গী করে রওনা হলাম সৈকতের উদ্দেশ্যে।পরিচিত শহরক এবার নিজের কাছে নতুন করে আবিষ্কৃত হল।বিগত সময় এভাবে দোভিল শহরের সৌন্দর্যে আমার দৃষ্টিকে ছুঁয়ে যায়নি। শহরের ভেতর দিয়ে সৈকতে যাওয়ার সময় চোখে পড়ল পাহাড়ের পাহাড়ের ভাজে ভাজে গড়ে ওঠা স্থানীয়দের বসতবাড়ী,অন্যদিকে সমভূমিতে গড়ে ওঠা ভিন্ন মাত্রার স্থাপত্য শৈলীর দালান, যার অধিকাংশই হোটেল,কাসিনো, অফিস আদালত।মনে হল দালানগুলোর সামনের অংশের নকশার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কাঠের ব্যবহার করা হয়েছে।ইতোপূর্বে আমি নরমাণ্ডীর আরও কয়েকটি শহরে ভ্রমণ করেছি, তবে এবার মনে হল দোভিল শহরের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে যা অন্য শহরগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

দোভিলের সমুদ্র সৈকতটি চল্লিশ মিনিট একপাশ ধরে হেঁটে অন্যপাশে যাওয়া যায়।আমার সমুদ্রের গর্জন শুনতে ভালোলাগে,তীরের বুকে ঢেউয়ের আঁচড়ে পরার দৃশ্য মুগ্ধ করে কিন্তু নোনা জলে শরীর ভেজাতে এক ধরণের অনীহা রয়েছে।গতবার এই সৈকতে এলোমেলোভাবে হেঁটে বেড়িয়েছি কিন্তু পুরো সৈকত ঘুরে দেখা হইনি ।বেশ দূরত্বে সুমদ্রের কোল ঘেঁষে বেয়ে ওঠা সবুজে ঘেরা একটি টিলার মাঝে ছোট্ট একটি বাড়ি নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিলুচ্ছে,সেই সৌন্দর্য আমাকে দারুণভাবে টানলো তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সৈকতের তীর ধরে হেঁটে ঐ বাড়ীটার কাছে পৌঁছুবো।আমি হাঁটছি আর সৈকতের চার পাশের মানুষের কর্মকাণ্ড দেখছি,ছোট শিশুরা বাবা মায়ের সাথে সমুদ্রের জলে জলকেলিতে মেতে উঠেছে, সৈকতের বেলাভূমির স্বেদ চামড়ার নানা বয়সের বয়সের মানুষ স্বল্প বসনে শরীরকে প্রকৃতির কাছে সমর্পণ করে নিশ্চিন্ত মনে সূর্যের তাপ গ্রহণ করছে।বছরের অধিকাংশ সময় ঠাণ্ডা আবাহাওয়ার কারণে ইউরোপের মানুষের শরীর মোটা কাপড়ে ঢাকা থাকে তার উপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ সূর্যকে ঢেকে রাখে ফলে সূর্যের তাপ থেকে তাদের শরীর হয় বঞ্চিত, তাই মাস তিনেকের রোদ্রোজ্জল উষ্ণ সময় কালে অধিকাংশ ইউরোপিয়ান সমুদ্রমুখী হয় শরীরের সাদা রঙটাকে রোদে পুড়িয়ে একটু তামাটে করার প্রচেষ্টায়।সমুদ্রের তীর দিয়ে দীর্ঘ সময় হেঁটে আমার গন্তব্যে পৌছুলাম।এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নেবার পর ফেরার পথে দেহ মনে দারুণ এক ক্লান্তি চেপে বসলো তাই সমুদ্রের বিশালতাকে সামনে রেখে নিজেকে এই বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ির উপর সমর্পণ করলাম।আমাদের ইট পাথরে আচ্ছাদিত নিয়ম কানুনের জীবন যাপনে মাটির স্পর্শ নেবার সুযোগ খুবই কম।সমুদ্রের গর্জন, বয়ে যাওয়া বাতাসের শোঁশোঁ আওয়াজ এমন প্রকৃতির মাঝে বালুর উপর দেহটাকে এলিয়ে দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত চিন্তার জাল ছিন্ন করে চলে গেলাম ঘুমের ঘোরে।মনে হল, বিধি নিষেধের সভ্যতার বাইরে দু ঘণ্টার জন্য আদিমতর জীবনের নির্ভেজাল স্বাদ গ্রহণ করলাম।ঘড়ির কাঁটা বুঝিয়ে দিলো সাগর পারের কিছু ক্ষণের উন্মত্ত জীবনের সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে তাই শরীরে উপর জমে থাকা বালুর স্তর ঝেড়ে ফেলে আবার সভ্য সমাজের পোশাকে তৈরি হয়ে নিলাম।কিছুক্ষণ পড়ন্ত বিকেলের উত্তাপহীন সৈকতে হাঁটাহাঁটি করে চলে এলাম সারি সারি জাহাজের নোঙর করা এলাকায়। এখানে শান্ত জলাধারার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক কিছু অবকাশ যাপনের দালান কোঠা আর ক্যানালের ওপর পাশে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সবুজে ঘেরা পাহাড়ি জনবসতি আর পর্যটকদের পদচারণা মুখর সৈকত দোভিল শহরের সৌন্দর্যকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে ।
সাগরের পার থেকে বিদায় নিয়ে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা আগেই চলে এলাম আমাদের দোভিল রেল ষ্টেশনে।উদ্বৃত্ত সময় শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা নদীর পারে বসা বৈকালিক মেলা, আকাশে পাখিদের দলবেঁধে উড়ে বেড়ানো,নদীর শান্ত স্রোতে বয়ে চলার দৃশ্য দেখে কেটে গেলো।বাসে ঢুকতেই আমাদের ভ্রমণ পরিচালক মহিলা আমাকে দেখে মনে হয় একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,কারণ ভ্রমণ দলের একমাত্র সঙ্গীহীন এবং এশিয়ান কালো মানুষ আমি তাই তার হয়তো আশংকা ছিল ভীণদেশী মানুষটির অচেনা শহরের পথ হারাবার ।
সাতু দু ব্রুই ও দোভিল সুমদ্র সৈকতের একদিন (পর্ব-১) পড়তে ক্লিক করুণ



























সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×