somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

মধ্যরাতের আতঙ্ক।

১৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ জুলাই রাতে ড্রয়িং রুমে ঘুমিয়েছি। রাত দুটো বাজে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।জাগতিক পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায়। চারপাশে কি হচ্ছে কিছুই আমার ইন্দ্রিয়ে ধরা পড়ছে না।পাশের রুম থেকে আমার স্ত্রীর মৃদু কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। ওঠো ওঠো ……।
হঠাৎ তার হাতের ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসলাম।
বললাম, কি হয়েছে ?
বাইরে থেকে কেউ কলিং বেল টিপছে শুনতে পাচ্ছনা?
উত্তরে বললাম শুনিনিতো ।
এবার ঘন ঘন কয়েকবার কলিংবেলয়ের আওয়াজ হলো।
সে বলল, দরজায় গিয়ে দেখ কে সুইচ টিপছে?
এত রাতে কলিংবেল, একটু ভয় কাজ করছে ভেতরে। কে টিপছে কলিংবেল এবং কেন টিপছে?
চোখ মুছতে মুছতে দরজার কাছে দাঁড়াতে আবারও কলিং বেল বেজে উঠল। দ্বিধা সঙ্কোচ ও ভয় নিয়ে দরজা খুলতেই দেখি চেনা মুখের এক তরুণ, উদ্ভ্রান্তের মত বলছে ফু ফু, ছোরতে দো ভোতর আপারতোম, অর্থাৎ আগুন আগুন আপনার এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যান। আগুনে পোড়া গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। ছেলেটি অন্য একটি এপার্টমেন্টে গিয়ে কলিং বেলের সুইচ টিপতে লাগলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার স্ত্রীকে বললাম বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে। আমি ঘুমের পোশাক পরেই শুধু মুঠোফোন এবং এপার্টমেন্টের চাবি পকেটে নিয়ে বের হতে উদ্যত হলাম। মেয়েকে ঘুম থেকে দ্রুত জাগানা হল।আমার স্ত্রী তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যাগ সঙ্গে নিয়েই বের হল কিন্তু আমার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নেবার কথা মাথায় এলোনা। সম্পদের চেয়ে সময় ও জীবনের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত দরজায় তালা মেরে ওদেরকে নিয়ে বিল্ডিঙয়ের সিঁড়ির দরজার কাছে চলে গেলাম। আমাদের ফ্লোরের অন্যান্য প্রতিবেশীরাও বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। প্রতিটি তলায় পুলিশ ও দুই আফ্রিকান বংশোদ্ভূত যুবক দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষের ঘুম ভাঙ্গিয়ে বাহিরে বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন সিঁড়ি বেয়ে নামছি তখন অন্যান্য এপার্টমেন্টের পরিবারগুলো তাদের শিশু বাচ্চাদের বিছানার কম্বল জড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নামার চেষ্টা করছে। পোড়া গন্ধ আরও প্রকট হয়ে নাকে লাগায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সিঁড়ির দরজায় পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কের মধ্যদিয়ে আমরা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। ১৩ জুলাই বিকেল থেকে আমাদের এলাকায় অসংখ্য পুলিশ সশস্ত্র অবস্থায় প্রহরারত রয়েছে। ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস, এই দিন রাতে সাধারণত এলাকার তরুণেরা ককটেল ফাটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। এই উন্মাদনার কারণে অনেক সময় নানা অঘটন ঘটে থাকে।তাই পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন এলাকা অতিরিক্ত নজরদারির মধ্যে রাখে।

রাস্তায় এই গভীর রাতে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে গেছে। পুলিশ বিক্ষিপ্ত লোকজনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিল্ডিঙয়ের দ্বিতীয় তলায় রাস্তার ধারের এপার্টমেন্টে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমেই বেড়ে চলছে। তখন ফায়ার ব্রিগেড এসে পৌঁছেনি। এপার্টমেন্টটিতে একটি পরিবারের বসবাস। এপার্টমেন্টের কলিং বেল টিপে ভেতরে অবস্থানরত মানুষদের জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কোন সারা পাওয়া যায়নি। তাই, আফ্রিকান এক যুবক বিল্ডিংয়ের কার্নিশ বেয়ে চলে গেলো এপার্টমেন্টটের রারান্দায়।তার সন্নিকটে জ্বলছে আগুন কিন্তু সে সাহসিকতার সঙ্গে একটি লোহার রড দিয়ে দেয়ালের কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলো।বাহির থেকে ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে সন্ধান করলো ভেতরে কেউ আছে কিনা। কিন্তু কারো সারা না মেলায় ছেলেটি নিচে নেমে এলো। আমরা যখন নিজের জীবন রক্ষায় ব্যস্ত তখন ওই যুবকটি অন্যের জীবন রক্ষার চিন্তায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে ভাবে আগুনের সামনে এগিয়ে গেলো তখন মনে হল পৃথিবীতে মানুষ কত মহান ও মানবিক হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় কিছু মানুষকে বিশেষ অনুভূতি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠায়। যারা অন্যের বিপদ দেখলে নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যায়

পাঁচ মিনিট পর ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি চলে এলো।ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা দ্রুত আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হালকা পোশাক পরে বাহিরে চলে এসেছি, ঠাণ্ডায় শরীর কাঁপছে। বিল্ডিংয়ের সকল লোকজন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। সবাই আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রতীক্ষায় উৎকণ্ঠিত সময় পার করছে। দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগায় ফায়ার ব্রিগেড টিমের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে খুব বেশী কসরত করতে হল না। পনেরো মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসল।কিন্তু অন্যতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আমাদের কাছ থেকে চাবি সংগ্রহ করে ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা বিভিন্ন তলায় চলে গেলো।সেই সাথে পরিপূর্ণ ভাবে আগুন নেভানোর কার্যক্রম চলতে লাগলো। সম্পূর্ণ ভাবে নেভানোর কাজ শেষ হতে প্রায় ভোর চারটা বেজে গেলো।কিন্তু কারো বিল্ডিংয়ের ভেতর প্রবেশের অনুমোদন মিলছে না। ফায়ার ব্রিগেডের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভোর পাঁচটায় আমরা পুনরায় বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করলাম।
একটি আতঙ্কের রাত পাড়ি দিতে হল।টিভি পর্দায় শুধু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও বিল্ডিংয়ে আগুন লাগার দৃশ্য দেখেছি কিন্তু ঐ রাতে বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম। যে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত তরুণকে রাস্তার মোড়ে আরব বখাটে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখি, সেই তরুণই আমাদের মধ্যরাতের ঘুম ভেঙ্গে জাগিয়ে তুলেছিল । অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই তোমাকে …………

ধারনা করা হচ্ছে রাস্তা থেকে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ছোড়া ককটেল ফুটে এই আগুনের সূত্রপাত। যে এপার্টমেন্টটি পুড়ে ছাই হয়েছে, ঐ ফ্লাটের পরিবার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনে বাইরে রয়েছে। একটি বাসায় একটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, আসবাস ও দীর্ঘদিনের সংগৃহীত সৌখিন জিনিসপত্র থাকে। নিজেদের রুচি অনুযায়ী সাজানো হয় নিজ বাসস্থল।যদিও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষতিপূরণ পাবে কিন্তু তাদের শখের সাজানো বাসাটি আগের মত করে পাবে না। দেয়ালে টাঙ্গান শখের পেইন্টিং ও সংগৃহীত সুভেনিরগুলো পাবে না । যখন পরিবারটি ফিরে এসে দেখবে রেখে যাওয়া সাজানো গোছানো নীড়টি ছাই হয়ে বাতাসে উড়াউড়ি করছে তখন কি কষ্টটাই বুকের মধ্যে জমাট বাঁধবে ............।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৩২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×