এর আগে মিশরী, আফগানী রমনীদের ইসলামী পোষাক থেকে মর্ডাণ হওয়ার গল্প বলেছিলাম। আবার বালকান রমনীদের ইসলামের দিকে ধাবিত হওয়ার ঘটনাও বলেছিলাম। আজ শুনের এই দুয়ের মাঝে অবস্থানকারী একজনের গল্প।
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে যখন আমি OIC এর একটি কনফেরান্স এর জন্য ইরানে যাই, তখন পরিচিত হয়েছিলাম এই পারস্যের রমনীর সাথে।
এই অঞ্চলের নারীদের সৌন্দর্যের কথা সাধারনত অনেকেরই জানা। রাত ১ টার কিছু পরে যখন আমরা মাশয়াদ বিমানবন্দর থেকে বের হয়েছিলাম, আমাদের অভ্যর্থনার জন্য এগিয়ে এলেন এমনই কিছু ইরানী রূপসী। সবাই আসলেই রূপসী কিনা সেটা বলা মুশকিল কারন বেশীর ভাগই মুখ বেধে রেখেছিল।
আগে বলা রাখি ইরানে ২ ধরনের হিজাব বৈধ।
১।মাথার মাঝখান থেকে চুলের অংশ থেকে শুরু করে সামনের অংশ খুলে রাখা।
২।শুধু মুখমন্ডল খুলে রাখা বা নিকাব করা।
যারা এগিয়ে এসেছিল তারা মূলত আমাদের ট্যুর গাইড। আগামী ১০ দিন আমাদের সাথেই থাকবেন।
ফারসী ভাষা পৃথিবীর সব থেকে বেশি মধুর ভাষাগুলোর একটি। পুরুষ কিংবা নারী কথা বলতেই মনে হয় কেউ খুব যত্ন করে কবিতা আবৃত্তি করছেন।
তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি আমাদের গ্রুপের সাথে থাকতেন। তাকে মেয়ে না বলে মধ্য বয়সের নারী বলা যেতে পারে। বিবাহিতা। এখনও কোন সন্তান নেই। পর্দার এই ১ম দিকটি সে মেনে চলে। অর্থাৎ মাথার মধ্য ভাগ থেকে সামনের দিকে খুলে রাখে।
আমি মাঝে মাঝেই তাকে ইচ্ছে করে বলতাম তুমি আমাদের কিছু একটা শুনাও। তোমার যা ইচ্ছে। ফারসি তো বুঝি না তবে এর টোন আমাদের খুব ভাল লেগেছে। তিনি শুনাতেন।
আমাদের শিয়াদের ৮ম (শিউর না) ঈমাম, ঈমান আলী রেজা, যার মাজার মাশয়াদে রয়েছে, সেখানে নিয়ে গিয়ে বেশ অনেক ধর্মীয় বয়ান দিয়েছিলেন। শিয়া মতামত সহ আরো অনেক দিক। আমি কি বলত সেটা শুনতাম না, তবে কথার টোন শুনতাম। সত্যি বলতে আমি ফারসী ভাষার প্রেমে পড়ে যাই। এখনও আছি।
ফিরে আসা পর সেই মেয়েটিকে মাঝে মাঝে মজা করে আমাদের গ্রুপে বলতাম তুমি কিছু একটা পাঠ করে আমাদের শোনাও।
সে না করত না। মাঝে মাঝে কবিতা পাঠ করে আমাকে ইনবক্স-ও করত। শুনতে ভাল লাগত। এটাকে তার প্রতি বা তার কন্ঠের প্রতি টান মনে করে ভুল করবেন না। এটা নিতান্তই ফারসী ভাষার প্রতি টান।
মেয়েটির সাথে গ্রুপের মাধ্যম থেকে শুরু করে অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ায় যোগ হয়েছিলাম। আর সেই সুবাদে জানতাম তিনি ইউরোপের একটি দেশের বাসিন্দা এখন।
তাকে আমি বোরকা ছেড়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে দেখেছি। আর তার চুড়ান্ত দেখলাম সেদিন, মাত্র ৩ দিন আগে, যখন তার বিকিনি পরিহিত ছবি সে ইন্সট্রাগ্রাম এ শেয়ার করেছেন। সাথে তার স্বামীও আছেন।
এইসব পরিবর্তনের দিন বিবেচনা করে আমার একটা জিনিষ পরিলক্ষিত হয়েছে যে, ধর্ম আসলে চাপিয়ে দেয়ার কোন বিষয় না। ধর্ম আসলে বুঝে শুনে পালন করার বিষয়। একটি জাতীকে ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক ভাবে আটরে রাখা যায় তবে সেটা ধর্মের জন্য ক্ষতি সয় ভাল কিছু নিয়ে আসে বলে মনে হয় না। তবে ধর্ম বুঝাতে পারলে সেই বালকানদের মত আরো অনেকেই ধর্মের ছায়ার ফিরে আসবে। নইলে আফগান, মিশরী কিংবা এই ইরানীর মত একদিন ধর্মকে উপস্থাপন করবে আর অনেকে এটাই ধর্ম মনে করবে।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫