দেশে গিয়েছিলাম। পরিবার মেয়ে দেখবে। অনেক প্রস্তাব আসতে শুরু করল। পরিবারের একান্ত ইচ্ছে মেয়ে বরিশাল অঞ্চলের হবে। একটি প্রস্তাব এলো। পরিবারের চাহিদার সাথে মিলে যাচ্ছিল। কন্যা প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে খুব ভাল একটি বিষয়ের ছাত্রী।
আমাদের বায়োডাটা আদান প্রদান হল। মেয়ে দেখার আগে অব্দি তার রেজাল্ট এবং পারিবারিক অবস্থান সব মিলে বেশ ভাল ছিল। তারাও আমাদের বায়োডাটা দেখে, "আপ্নারা চাইলে মেয়ে দেখতে আসতে পারেন" বলে আমাদের দাওয়াত দিল। মেয়েকে দেখতে তাদের ঢাকার বাসায় আমাদের পক্ষ থেকে তিনজন মানুষ গেলেন।
ফিরে এসে তাদের অভিমত; মেয়ে পর্দা করে না তবে খুব মেধাবী। পরিবার ভাল। মেয়ের মা জানতে চেয়েছে যে, ছেলের ঢাকাতে বাড়ী আছে কিনা? মেয়ে কালো তবে মুখমন্ডল বেশ উজ্জল আর এমন মেধাবীদের কালোও বিয়ে করা যায়। ইত্যাদি। এককথায় পজিটিভ হিসেবে নেয়া যায়।
আমাকে মেয়ের ছবি পাঠানো হল। আর আমার কিছু ছবিও মেয়ের কাছে পৌছে গেল শুরুতে পরিবার আর পরে ডিজিটাল মাধ্যম হয়ে।
আমি তখন চট্টগ্রামে। ছবি দেখে এবং যেহেতু ছেলে হিসেবে ঢাকায় আমার বাড়ি নেই তাই আমি অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে পরিবারকে ফাইনাল কিছু জানালাম না। প্রশ্ন করা হলে, "ভেবে দেখি' উত্তর দিয়ে এড়িয়ে যেতাম।
আসলে মেয়ে কালো কিংবা অনেক রূপসী এটা আমার কাছে বড় কোন কারন হওয়া থেকেও তার আউটফিট নিয়ে চিন্তা করছিলাম। (সবার প্রতি সম্মান রাখি। তবে নিজে জন্য নিজের চাহিদা মত খুজে নেওয়াও আমার অধিকার)।
আমি বরিশাল গেলাম। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আর এরপর বরিশাল গেলাম। সাথে আবু তারেক আর সাঈদ। ৫ দিন পর ভোলায় আইউবুর রহমানদের বাড়ি হয়ে ফিরে এলাম আবার ঢাকায়। সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ সকালে গিয়ে তারেকের বাসায় উঠলাম। পান্থপথ এলাকায়। দুপুরে বের হয়েছি। একুশে টিভির নিচে এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করে আবার চট্টগ্রাম চলে যাব। হাতে আমার ছোট লাগেজটি।
আমি আর তারেক পাশাপাশি হাটছিলাম। বসুন্ধরা সিটির ঠিক সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হল হাজারো অচেনা মানুষের মাঝে আমার পাশ থেকে একটি মেয়ে হেটে গেল। যাকে আমি দেখেছি কোথাও। বামহাত দিয়ে; খাট ঘরনের, মাথায় একঝাক কোকড়ানো সোনালী চুলওয়ালা একজন যুবকের হাতে হাত দিয়ে হাটছিলেন। ছেলেটিকে পরে দেখেছিলাম। আর মেয়েটিই যেহেতু আমার আগের দেখা ছিল তাই আর চিনতে সমস্যা হয় নাই। কালো একটি থ্রী-পিছ পরিধান করেছে। সেই সাথে একটি টিপ ছিল কপালে। টিপের রং-টা আসলে রোদে কারনে বুঝা যাচ্ছিল না।
আমি ২/৩ কদম সামনে গিয়েই থমকে দাড়ালাম। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি; মেয়েটি তার বাম হাত দিয়ে ছেলেটির ডান হাত ধরে আছে। মেয়েটি দাঁড়িয়ে গেছে আর ছেলেটি একটু সামনে থেকে যেন টানছিল, এমনই দেখতে লাগছিল। মেয়েটি মাথা ঘুরিয়ে দাড়িয়েই ছিল। আমি তাকাতেই একটা মুচকি হাসি দিল। আমিও দিলাম। মাথা ঘুরিয়ে ফিরে এলাম। আর পেছনে ফিরে তাকাই নাই। বাসায় এসে সেই মেধাবী রমনীর প্রস্তাব খানা চুড়ান্ত ভাবে 'না' করে দিলাম।।