somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমানবন্দরে সেদিন iphone টি হারিয়ে গেল। অতঃপর?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২১ তারিখ সকাল। সূর্যি মামার জাগার আগেই আমি আর আব্বু চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। আগ্রাবাদের বাসা থেকে আসতে সব মিলে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছিল। প্রথম গন্তব্য ঢাকা। US-Bangla সকাল ৬ঃ২৫ মিনিটের ফ্লাইট ধরে ৭ঃ১৫ তে ঢাকায়। যদিও ব্যাগ পেয়ে বেশ সময় লেগেছিল। আমার এবারের গন্তব্য কাতারের দোহা হয়ে তার্কির ইস্তানবুল


সকাল ১১ টায় ফ্লাইট। যদিও প্রধানমন্ত্রী সেদিন লন্ডয় যাওয়ায় সব ফ্লাইটের মত আমারটিও ২ ঘন্টা পিছিয়েছিল। খুব বিরক্তিকর ছিল এই সময়টা।
সকাল ৮টায় আমি ডমেস্টিক থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দের প্রবেশ করি। বেতর থেকেই প্রবেশ করলাম। কোন লাইন ছিল না। খুব ভাল লাগছিল। তবে দেশ ত্যাগের পূর্ব সময় যতটুকুর ভাল লাগার আর কি!
মাহমুদ, যিনি তুরস্কের একটি শহরে থাকেন, আগের দিন অনুরোধ করেছিলেন তার জন্য তার পরিবার থেকে একটি মোবাইল ফোন এর প্যাকেট দিবেন, আমি যেন সেটা নিয়ে আসি। যেহেতু আমি ভেতরে প্রবেশ করেছি আর তার পরিবারও আগে এসে দাঁড়িয়ে ছিল তাই বোডিং শেষ করার আগেই সেখানে যাওয়া দরকারী ছিল।

বিমানবন্দরে আসলে কেউ কারো ব্যাগ রাখতে চাইবে না। এটাই সাধারন। এতে অনেক রিস্ক থাকে। তবুও আমি আমার বিমানের একজনকে দেখতে পেলাম হাতে টিকেট সহ। তার কাছে আমার ডকুমেন্টস দেখিয়ে আমার ২ টি লাগেজ রেখে, শুরুতে ৬ নম্বর গেইট থেকে বের হতে গেলাম। আমাকে সেখান থেকে দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি ৪ নং থেকে বের হতে বললেন। কিন্তু ৪ং থেকে আবার আমাকে ৬ নং এর পাঠাল। এভাবে ২ বার ঘুরে ৬নং থেকে বের হলাম। প্যাকেট নিলাম। মাঝে ২ মিনিট সময়। ৬নং এর সামনে আমি।

এবার আবার প্রবেশের পালা। বিমানবন্দরে প্রবেশ এর জন্য প্রায় ৫-৬ টি গেইট থাকার পরেও শুধু মাত্র ৪নং গেইট থেকে যাত্রী প্রবেশ করানো হচ্ছিল। ৫নং প্রধানমন্ত্রী আর তার সেই বিমানের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ। আমি অনুরোধ করে বুঝালাম যে আমার সব ভেতরে রেখে এসেছি। এখন না গেলে আমার লাগেজ সন্দেহের তালিকায় চলে যাবে। তবুও যেতে দিল না। ৬নং ফাঁকা। কেউ নেই। তবুও দিল না। ফিরে গেলাম ৪নং গেইটে। তবে সেখানের লাইন এত বড় ছিল যে আমি আমার ফ্লাইট মিস করব, যদি আমি সেখান থেকে প্রবেশ করি। তবে সেখানে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তাকে বুঝিয়ে বললাম। উনি আমাকে লাইন ছাড়া প্রবেশ করতে দিলেন।

এতক্ষন আমি শুধু এটাই ভাবছিলাম আমার লাগেজ সন্দেহের তালিকায় চলে যায় কিনা(!) দ্রুত করা ফিরে এসে সব ঠিক ভাবেই পেলাম।
তবে পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার মোবাইলটি নেই। শুরুতে সব ঠিক মত পরিক্ষা করে বুঝতে পারলাম কোথাও রেখেছি। কিংবা কেউ নিয়েছে। তবে খুব বেশী চিন্তিত ছিলাম না। আমি তখন শুরুতে একটি iphone খুজতেছিলাম। যেহেতু আমার ফোনটি iphone ছিল, তাই সেখানে "Find my iphone" থেকে আমি ফোন যেখানেই আছে খুজে পাব।

তখন মনে হল, আমি যখন একটু আগে ৪নং গেইট থেকে প্রবেশ করলাম সেখানে চেকিংএ দিয়েছিলাম। হয়তো বাকি জিনিষ নিয়ে এসেছি। আর তাড়াহুড়াতে ফোনটি বক্সে পড়ে ছিল। দৌড়ে সেখানে গেলাম। আনসারকে বললাম। কোন গুরুত্বই দিল না।
'আরে দূর মিয়া এখানে থাকলে আমরা পেতাম। আমরা কি লুকিয়ে রেখেছি' এসব বলে আমাকে সড়িয়ে দিলেন। যিনি চেকিং টেবিলে বসা তার কাছে গিয়ে বললাম, 'এখানের বক্সে থাকতে পারে। মাত্র ৫-৭ মিনিট আগের ঘটনা। একটু যদি বক্স গুলো খুজে দেখা যেত?'
'আরে না মিয়া। এখানে থাকলে আমরা পেতাম। ওসব দেখা যাবে না।' আচ্ছা আপনি দেখেন না? আমি বললাম। 'আমিও দেখতে পারব না।' বলে আমাকে বলে পাঠিয়ে দিলেন।

তখন আমি সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সাথে দেখা করি। দৌড়ে গিয়ে হাফাতে হাফাতে তাকে ইংলিশেই বললাম। একটু ইচ্ছে করেই ইংরেজীতে বলেছিলাম। আর যখন বললাম ফোনটি iphone, তখন উনি বললেন, 'আচ্ছা চলেন দেখি। কোথায় রাখতে পারেন?' আমাকে প্রশ্ন করল। আমি তাকে ২ টা স্থান বললাম। আমরা তখন ৪নং গেইটের সামনে। উনি সবাইকে প্রশ্ন করলেন।
"না, না স্যার। আমরা দেখি নাই। এখানে নাই। অন্য কোথাও আছে।' এভাবেই বলে গেলেন সবাই মিলে।

এবার উনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে এবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখব। এটা বলেই উনি কন্টোল রুমে নক করলেন।

আর আমি ২য় সন্দেহের স্থানের দিকে যাচ্ছিলাম। এর মাঝেই পেছন থেকে হইহই করে ডাক এলো। "এই যে ফোন। এখানে। পাওয়া গিয়েছে"।

হা, এবার ফোনটি পাওয়া গিয়েছে। সেই বক্সের মাঝেই। যেটা আমি একটু আগে দেখতে বলেছিলাম। কেউ গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমাকে ফোনটি দিয়ে দেয়া হল। আর পুলিশ অফিসার তখন গেইটে থাকা সেই লোকদের একটু চার্জ করেন, এই বলে যে, কেন একটু আগে আমি যখন বলেছিলাম তখন দেখা হল না। এখান কিভাবে বের হল। আর তিনি যখন শুরুতে বলেছিলেন তখন কেন না না করে দেয়া হয়। ইত্যাদি।

আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাত মিলিয়ে চলে এলাম।

আমি মনে করিনা সেখানের কেউ ইচ্ছে করে ফোনটি লুকিয়ে রেখেছেন। তবে সেই শুরুতে আমি যখন তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বা বক্স দেখতে অনুরোধ করছিলাম তখন দেখলে পরের ঘটনাগুলো আর হত না।
আমি হয়তো সাহস করে পুলিশের কাছে গিয়েছি, কিন্তু গ্রাম থেকে সোজা বিদেশে যাওয়া কেহ হয়তো এটা ভাবতেও পারত না। জিনিষ হারিয়ে দেশ থেকে একটি কষ্ট নিয়ে বিদায় নিত।
সবশেষে, অনেক ধন্যবাদ সেই পুলিশ অফিসারকে। আর যাত্রীদের প্রতি আরো একটু সহনশীল আচরন করা, তাদের কথা গুলো শুনার এবং বুঝতে চেষ্টা করার পরমর্শ সেদিন গেইটে থাকা সেই দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রতি।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০২
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×