somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ চলে যায়, ভালবাসা গুলো বেঁচে থাকে যুগ থেকে যুগে।।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা থেকেই মানুষের মাঝে ফোবিয়া বা ভয় সৃষ্টি হতে পারে। যেমন মনে করুন; খুব ছোট বেলায় কুকুর কাউকে কামড় দিয়েছে। সেই মানুষ বড় হয়ে বাঘের খাঁচায় বসবাস করতে রাজি হলেও কুকুর দেখলে দেয় ভোঁ দৌড়।



ছোট মনের সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা গুলো মানুষ চাইলে এড়িয়ে যেতে পারে না। আমিও পারি না। তবে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে আমার মাঝে যা সৃষ্টি হয়েছে তাকে ফোবিয়া বা ভয় বলা ঠিক কিনা জানি না, তবে এটা অনেকটা ভয় এর বিপরীত অর্থও বলা যায়। বিষয়টি মৃত্যু। শেষ বার যখন বাড়ি গিয়েছিলাম সেটা প্রায় ৫ বছর পরে ছিল। বাড়িতে গিয়ে হিসেব করে পেলাম এই ৫ বছরে প্রায় ২২ জন মানুষ মৃত্যু বরন করেছে।

খুব যখন ছোট ছিলাম, যে মানুষদের হাত ধরে সময় কাটিয়েছি তাদের মধ্য একজন ছিলেন সোহাগ ভাইয়া। সম্পর্কে আমার মামাত ভাই। সুঠাম শরীর, তিক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার একজন মানুষ ছিলেন এই সোহাগ ভাইয়া। আমার মনে আছে, নানুবাড়ির পূর্বের ভিটায় পানি উঠে গেলেই আমরা চিংড়ি মাছ ধরতাম। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দিনে খুব বৃষ্টি ছিল। সারাদিন আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিল। উৎসব মূখর ভোটের পরিবেশ বৃষ্টি নষ্ট করতে পারে নাই।
সোহাগ ভাইয়া খুব ভাল চুল কাটতে পারতেন। তার মিষ্ট ভাষা আর সুন্দর আচরন আজও তাকে আমার মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছে।
মানুষটি যখন SSC পরিক্ষার কিছু দিন পর মারা গেলেন। একদিন আমি আমাদের বরিশালের বাসায়। আমি স্কুল থেকে এসেছিলাম। আম্মু বললেন তোর সোহাগ ভাইয়া মারা গেছেন। তার অনেক দিন পরে বাড়ি গিয়েছিলাম। মামানীর সামনে যেতে পারছিলাম সাহস করে। সব কিছু থাকার পরেও আজ শুধু সোহাগ ভাইয়া নেই বলে সব কিছু মলিন লাগছিল। মামানীর সাথে একসাথে অনেক সময় কেঁদে কেঁদে কিছুটা হালকা হয়েছিলাম।

সোহাগ আর মাহবুব ভাইয়ার বড় ভাই ছিলেন সগির ভাইয়া। তার সাথেও আমার স্মৃতি কম নয়। শৈশব কেটেছে যে তাদের সাথেই। ২০০৮ কিংবা ২০০৯ সালে হবে। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে বাড়ি আসতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় চলে গেলেন সগির ভাইয়াও। বড় দুই সন্তানের নিঃস্ব জননীর সামনে দাড়াতে আমার ছোট মন সাহস করতে পারে নাই। আজও মামানী সন্তান হারানোর কষ্ট নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। আর আমি আমার শৈশবের স্মৃতিগুলো খুজে ফিরি।

২০১১ সাল। আমি ঢাকায় এসেছি মাত্র কয়েক মাস। একদিন ফোনে নানু আর নানু বুয়ার সাথে কথা হল। নানুবুয়া একটু অসুস্থ। তার ৩ দিন পর আমাকে না বলেই চলে গেলেন আমার প্রানের প্রান নানু বুয়া। নানু বুয়া আমার জন্য কি অর্থ বহন করে সেটা একটা বাক্যে আমি শুধু বুঝাতে চাই। আজও আমি সকালে ঘুম থেকে জেগে তার কথা ভেবে অজান্তে চোখের জল ফেলি। বুকটা বড় শুন্য লাগে। মানুষ কেন মরে যায়। নিজেকে প্রশ্ন করি।

আমি যখন ২০১৪ সালে তার্কি আসব, তখন নানুর সাথে শেষ কথা হয়। সেই বছরের ঈদে নানু আমাদের পটুয়াখালীর বাসায় এসেছিলেন। আমার মনে আছে আমি স্কলারশীপ পাওয়ায় সেই বছরের ঈদের আনন্দটা আমাদের জন্য অন্য রকম প্রাপ্তি নিয়ে এসেছিল। সাঈদ, আকরাম, আর আরিফ মিলে বেশ ঘুরেছিলাম
সেই ঈদে। আবু তারেকও পরে আমাদের সাথে যোগ হয়ছিলেন।
তার পরে ঢাকায় চলে আসি। সব কাজ শেষ করে আবার একবার বাসায় যাই। আম্মু আর খালামনিকে নিয়ে আসি আমার সাথে ঢাকায়। নানুকে ফোন দিয়ে বললাম আমি আসি একটু আপনার সাথে দেখা করতে। নানু বললেন, "রাস্তা ভাল না। দরকার নেই। তুমি ফিরে আসলে ইনশাল্লাহ দেখা হবে"। এরপরে কথা হলেও আর কোন দিন দেখা হয় নাই আমার নানুর সাথে। একদিন একটি ভায়ানক সকালে এই খবরটি আমি পেয়েছিলাম। কষ্ট পাথর হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। আমাকে হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে যাওয়া সেই মানুষটা আজ আর নেই। আমার সাথে আর কথাও বলবে না। মেনে নিয়ে পারি নাই আজও।
বাড়ি গিয়ে যখন তার কবরের পাশে দাড়ালাম, পৃথিবী আমার কাছে নিঃস্ব আর অর্থহীন মনে হল। আসলেও তাই ছিল। কারন আমার পৃথিবীর অর্থ যে ২ জন মানুষ তারা তো আমার সামনেই করবে শুয়ে আছে। সীমাহীন কষ্টের মাঝে তাদের সেখানেই রেখে ফিরে আসতে হত।
আমি যখন আগে নানুবাড়ি থেকে আসতাম, মসজিদের কোনে নানুবুয়া আর নানু আমার সাথে রাস্তা অব্দি আসতেন। আজ তারা শুয়ে আছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি তাদের উপস্থিতি আমার সাথেই আছে। তারা আমার মাঝেই বেঁচে আছেন। ছোট মামা, বড় মামা, আম্মু আর খালামনি আজও কেহ তাদের বাবা-মা হারানোর কষ্ট পার হতে পারেন নাই। আসলে এটা পারার মত কোন বিষয়ও না। বাবা-মা ছাড়া সেই এই পৃথিবীর কোন অর্থই নেই। কোন অর্থ নেই। সব কিছু বৃথা।

এর মধ্যে দাদুও চলে গেছেন। শেষ বাড়িতে গিয়ে তার কবর জিয়ারত করে এলাম।

এই প্রিয় কয়েকজন মানুষের মৃত্যু আসলে আমাকেই না আমার অস্তিত্বকে প্রিয় হারা করে দিয়েছে। তবে তাদের অস্তিত্ব আমার সাথেই বেঁচে থাকে।

এই মৃত্যু গুলোর পরে আমার কাছে কেন যেন আমার অজান্তেই কোন মৃত্যু আমাকে আর কষ্ট দেয় না। জানি এটা ঠিক না। তবে কেন যেন আমি "মৃত্যু" শব্দটাকেই মেনে নিতে পারি না। কিংবা মেনে নিতে নিতে এখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।

প্রিয়জনেরা বেঁচে থাকুক সারাজীবন।।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×