somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দত্ত পরিবার(পর্ব-০২)

২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা বিষয়ে আমি সহমত না হয়ে পারছি না আর তা হলো, "মানুষ অনেককিছু ছাড়া বাঁচতে পারে তবে ভালবাসা ছাড়া নয়"। হতে পারে কথাটা সত্য। স্মৃতি দত্ত আমায় বড় বোনের মত করে দেখভাল করছেন। এক অদ্ভূত মায়া আছে উনার চোখে, এক অদ্ভূত ভালবাসা আছে। যেটা খুব কাছে টানে।

বৃদ্ধ হলে মানুষের হাত থেকে সব বন্ধু ফসকে যায় অথবা ওপারে না কি চলে যায় তাই বাকি সময় একা একা জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। হোক সে কোন জমিদার বা কোন প্রতিপত্তিশালী। তাতে কিচ্ছু আসে যায় না!

একদিন কি যেন দরকারে মিসেস দত্ত আমায় ডাকলেন। কাছে যেতেই প্রশ্ন করলেন,

: চাকুরী পেলে কোথাও?
: না, দিদি
: এখন কি করবে ভাবছো?
: সত্যি বলতে গত ছয় মাস এখানেই শুয়ে বসে কেটে গেল। বাকি কিছুদিন যদি একটু সময় দিতেন!
: সময় নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার চেষ্টা অব্যাহত রাখো। খালি হাতে তো আমি আমার মেয়েটাকে তোমাকে দিতে পারি না।

শেষের বাক্যটা শুনে ধাতস্ত হতে আমার একটু সময় লাগলো। আচ্ছা, উনি কীভাবে বুঝলেন যে আমি উনার মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছি। এ তো অসম্ভব! তাই কথার দিক ঘুরালাম,

: মাফ করবেন! একটা প্রশ্ন করতে পারি?
: নিশ্চয়, করতে পারো।
: বাংলা ভাগের পর বাংলাদেশেই যে থেকে গেলেন? কখনো মনে হয়নি কলকাতায় পুনরায় ফিরে যাবার কথা?
: ইচ্ছে হয়নি তেমন নয়। কিন্তু ইচ্ছের উপর ভালবাসা ছিলো এই মাটির প্রতি, এখানে আমার স্বামী ছিলেন। ওর স্মৃতি আর স্পর্শ এই বাড়ির দেয়ালের প্রতিটা অংশে লেগে আছে যেন।
: আমি দুঃখিত, দিদি
: এই দেখো, তুমি আবার দুঃখিত কেন? চলো স্টোর রুমে যাই তোমাকে কিছু দেখাবো।

করিডর পেরিয়ে বাড়ির শেষ মাথায় একটি স্টোর রুম আছে। একটি বৃহদাকার স্টোর রুম। দেখে মনে হচ্ছে শতবর্ষের পুরনো। আমি বলে উঠলাম,

: দিদি, এই স্টোর রুম তো দেখছি বিশাল একটা আর্কাইভ। আমার ফোনের বত্রিশ জিবি স্টোরেজের চেয়েও বড় মনে হচ্ছে।
: হাসালে... তুমি বরং পেইন্টিংগুলো দেখো?
: এমা সেকি! এখানে তো দশটা মহামানবের ছবি আছে। কে এসব? সবগুলোই কি আপনার স্বামী ছিলেন?
: বজ্জাত কোথাকার! শেষের এই যে পেইন্টিং দেখছো এটা হচ্ছে আমার স্বামীর। বাকিগুলো তাঁর পূর্ব পুরুষদের।
: ওহ্, অদ্ভূত তো! কেউ এসব ট্রাডিশন এখনো অনুসরণ করেন?
: কেউ করেন কি না জানিনা, তবে দত্ত পরিবার করে আসছে...
: দিদি, ৬ষ্ঠ লোকটা কে?
: একদম তোমার মত দেখতে তাই না?
: ঠিক তাই! শুধু রাজকীয় এই পোষাক ছেড়ে শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে দিন দেখবেন আমাদের মধ্যে হুবহু মিল খুঁজে পাবেন। আর সাথে দাঁড়ি-গোঁফ এত বড় কেনো? এসবের ক্লিন শেভ করতে হবে।
: উঁহু! পেইন্টিং এ তা সম্ভব নয়। একটা কথা জানো তো, যেদিন তোমাকে দেখলাম সেদিন আমি একরকম চমকে উঠেছিলাম। মনে হয় তোমার পুনর্জন্ম হয়েছে।
: আহা! আমি মুসলিম। এসব জন্মান্তরে আমি বিশ্বাসী নই। একটাই জীবন আর মরবোও একবার।
: সেটা তোমার বিশ্বাস। আমি তো সেখানে আঘাত করছি না! আমি আমার বিশ্বাসে তোমাকে খুঁজে পেয়েছি।
: বুঝেছি, মিশনারী কান্ড ঘটাবেন এখন আমার সাথে?
: মানে?
: মানে আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করবেন।
: ধূর! বুদ্ধ। সারাক্ষণ ফাযলামি। তুমি ঐ পেইন্টিংটা ভাল করে দেখো তো?

একসময় মাথা ধরলো। মিসেস দত্ত কে বিদায় জানিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসলাম। কি অদ্ভূত এক বাড়িতে আমার আগমন। মনে হচ্ছে মন্ত্রমুগ্ধের মত আমাকে টানছে এই বাড়ির সমস্তটুকু। দাদার ৬ষ্ঠ পূর্ব পুরুষের ছবি দেখে অবাক না হয়ে পারিনি। সত্যিই কি আমি আজ থেকে দুইশত বছর পূর্বেও ছিলাম। তখন কার শাসন চলছিলো? মুঘল আমলে! আর তখন আমার ভূমিকা কি ছিলো?

এক সময় রাত ঘনিয়ে আসলো, ঢলে পড়লাম ঘুমের ঘোরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:৪০
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×