somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

“Jai Bhim” যা IMDb-তে Godfather কেও ছাড়িয়ে গেছে

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Movie: Jai Bhim
Cast: Suriya, Lijomol Jose, K. Manikan, Rajisha Vijayan, Prakash Raj, Rao Ramesh etc
Initial release: November 2, 2021
Directed by: T. J. Gnanavel
Distributed by: Amazon Prime Video
Editor: Philomin Raj
Production company: 2D Entertainment
IMDb Rating: 9.6/10

আইনের উপর ভরসা রেখে আমরা লাখো মানুষ রাতে ঘুমাতে যাই, সকালে ঘুমে থেকে উঠে ডিউটিতে। হোক সেটা সরকারি চাকরি বা বেসরকারি চাকরি, আমাদের বিশ্বাস আইনের উপর থাকে। আমরা স্বস্তিতে থাকি এটা ভেবে যে, “আমার সাথে যাই ঘটুক না কেন, আইন তো আছে আমাকে রক্ষা করবার জন্য।”

কিন্তু কেমন হয় যখন সেই আইন-ই কোন মানুষকে ধ্বংস করার অস্ত্র হয়ে যায়। তখন সেটা হয়ে উঠে সবচেয়ে ভয়ানক অস্ত্র যা মানুষকে মানুষের মত জীবন উপহার না দিয়ে উল্টো তাদেরকে সমাজে জানোয়ারদের মত করে জীবন ধারণ করতে বাধ্য করে।

“Jai Bhim” –এমন একটি সিনেমা যা সমাজের সেই দিকগুলো বিবেচনায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দেখানো হচ্ছে সত্য কে তামাশা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশেষ করে যখন সে সত্য আমি বা আপনার মত সাধারণ মানুষদের সাথে ডিল করছে। আরো একটি বিষয় হলো, “Jai Bhim” একটি সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি বা তামিল/তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির মুভি হলেও এটাকে আপনি “Amazon Prime” –এ হিন্দিতে উপভোগ করতে পারবেন এবং সাবটাইটেল থাকার দরুণ খুব সহজে উপলব্ধিও করতে পারবেন। এর অরিজিন্যাল ভাষা তামিল। একই সাথে এটি তেলেগু ভাষাতেও মুক্তি পেয়েছে। এই মুভিটিকে আরো ভালো করে বুঝতে হলে আমাদের একটি টার্মের সাথে পরিচিত হওয়া জরুরী।

HABEAS CORPUS: ENSURING NO ONE IS HELD WITHOUT CHARGES.

এই আইনের সূত্র ধরে কোর্ট খোদ অর্ডার করে কোন বিশেষ ব্যক্তি কে উপস্থিত করতে তাও যতদ্রুত সম্ভব। মুভিতে যেটা হয়, এক গ্রামের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বাড়িতে চুরির কান্ড ঘটে। তারপর দেখা যায় পুলিশ সোজা একটি উপজাতির কাছে যায় যারা মূলত Lower Caste –থেকে সেখানে অবস্থান করছে। উল্লেখ্য, ভারতে যাদের দলিত বলে চিহ্নিত করা হয়। তাদের জীবন ধারণ খুবই সাধারণ। তারা মূলত সাপ আর ইদুর ধরে জীবন যাপন করছেন।

তারপরের ঘটনা হচ্ছে, পুলিশ তাদের শক্তি ব্যবহার করে এই কমজোর এবং সাধারণ এক ট্রাইব কে জবরদস্তি দোষারোপ করেন কোন ধরণের ইনভেস্টিগেশন/তদন্ত ছাড়াই। তারপর জেলে যে অত্যাচারের দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা অত্যন্ত মানবিক ও লোমহর্ষক বৈ আর কি!

কি পুরুষ! আর কি নারী! সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে বস্ত্র খুলে অমানবিকভাবে মারপিট করেন। থার্ড ডিগ্রী কি আমি ভালো মতন জানিনা কিন্তু এই ধরণের শাস্তি বা মারধর সেটাকেই নির্দেশ করছে বলে মনে হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কেন এই মারধর? এই মারধর করা হয় এজন্য যে, যেন তাদেরকে জোর করে একটি মিথ্যা কান্ডে জড়িত থাকার জন্য বাধ্য করা যায়।

এখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের কমন যে সেন্স তাদের উপর কাজ করছে তা দেখা যায়। তারা মনে করেন, এরা ছোট জাতের। এদের মধ্যে লোভ আছে। সুতরাং চুরি যদি কেউ করেই থাকে তবে সেটা এরাই করেছে। আবার মুভিটির প্রথম দিকে দেখা যায়, নিঁচু জাতের মানুষদের কীভাবে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাই রেকর্ড ঘাটলেও দেখা যাচ্ছে, এদের রক্তে মিশে আছে লোভ ও লিপ্সা। যা কাগজে সত্যি হলেও, মাঠে মিথ্যে।

সত্যি বলতে পুলিশের এই গুন্ডাগিরি প্রমাণ করতেও পারতো যে, হ্যাঁ এরাই আসল চোর। কিন্তু কথায় আছে, সত্য কে লুকানো যায় না। তবে একজন দর্শক হিসাবে এক সময় পুলিশের যে দাদাগিরি স্বভাব তা বোধহয় এ যাত্রায় রক্ষা করা গেল না। কিন্তু একসময় ঠিকই এই নিঁচু জাতের মানুষদের জন্য দাঁড় হোন একজন সত্যিকারের আইনজীবী।

এই আইনজীবীর নাম, চন্দ্রু। তো চন্দ্রুর কাছে সামনে কেউ নিঁচু জাত বা উঁচু জাত আছে কিনা সে ব্যাপারে তার কিচ্ছু আসে বা যায় না। তিনি তার চোখে শুধু মানুষ দেখতে পান। শুধু তাই নয় তিনি ভীমরাও রামজি আম্বেডকর এর চিন্তাকে প্রাধান্য দেন। আমরা দর্শকরা নিশ্চয় খেয়াল করেছি যে, এক ডায়ালগে তিনি বলছেন, “সবার ফটো-ই তো আছে কিন্তু কোথাও আম্বেডকরের ফটো নেই কেন!”

ভীমরাও রামজি আম্বেডকর হলো ইতিহাসের এমন একজন মহান ব্যক্তি যাঁর কাছে উঁচু বা নিঁচু জাত বলে কিছু ছিলো না। অন্তত আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে। আর চন্দ্রুর মধ্যেও ভীমরাও রামজি আম্বেডকরের সেই মূর্তি আমরা দেখতে পাই। তিনি বিশেষ কিছু মামলা লড়ার জন্য কোন ফি চার্জ করেন না। আর সেই বিশেষ কেস হলো, মানবাধিকার সংক্রান্ত।

এখন এই কেসে যে সমস্যা হয় তাহলো সেখানকার বন্দিরা সবাই আচানক গায়েব হয়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন দেখিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করেন। তাদের দাবী, যাদেরকে আটক করা হয়েছিলো তারা চিহ্নিত অপরাধী শুধু তাই নয় তারা জেল থেকে পালিয়েছে।

আর ঠিক এখানেই সাহায্য নেওয়া হয়, Habeas Corpus: Ensuring no one is held without charges -এর। আর এর মাধ্যমেই শুধু একটি মামলা নয়, এমন হাজারো মামলার রায় যেসব বিতর্কিত তা পুনরায় যাচাই করা সম্ভব হয়।

আমার দৃষ্টিতে “Jai Bhim” কোন মামুলি মুভি নয়। অন্যদিকে এই ধরণের মুভি নির্মাণে বর্তমানে রয়েছে সেন্সরশীপের অবৈধ কেঁচি। মনে করে দেওয়া উচিত, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি নিয়েও বাংলাদেশে মুভি নির্মাণ হবার কথা ছিলো। কিন্তু সেই সিনেমা মুক্তির আগেই উধাও। আমরা যখনই আমাদের সমাজের ডার্ক সাইড দেখাতে চাই ঠিক তখনই এমন কিছু সামনে আসে যা সামনে যেতে দেয় না। ঠিক যেন, বলতে হয় তো ভালোটা বলো এবং যদি কিছু করতে হয় তবে ভালোটা করো। দ্বিতীয় জায়গায় ব্যাটে বলে আর হয়ে ওঠে না। সুতরাং “Jai Bhim” মুভি নির্মাণ একরকম চ্যালেঞ্জিং তো বটেই।

এজন্য হিম্মত লাগে। নিজের সমাজ ব্যবস্থাকে আয়না দেখানোর জন্য। মুশফিকুর রহিম আয়না দেখাতে গিয়ে যেমন নিজেই দল থেকে কি করে জানি উধাও হয়ে যায়। আর বাংলাদেশ লাগাতার গত দুই টি-টুয়েন্টি ম্যাচে হারতে থাকে।

যাইহোক, এই ফিল্মের স্ক্রিনপ্লে এত সুন্দর এবং ডিটেইলস যে, দেখার পর না নিজের প্রতি লজ্জা লাগতে শুরু করে। আমাদের দেশের ছোট ছোট উপজাতি/আদিবাসী/ট্রাইব এর কথা মনে পড়েছে বারবার। বিশেষ করে তাদের প্রতি আমাদের বর্তমান সমাজের মনোভাব কি ভয়ংকর অশ্লীল! ধনী ও গরীবের ভেদাভেদ তো আগে থেকে ছিলোই কিন্তু চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, মণিপুরী, ম্রো, সাওতাল, মুন্ডা, তঞ্চঙ্গা, বম, গারো, ওরাঁও, চাক, লসুাই, কোচ, ডালু, খুমি, খিয়াং, রাখাইন, হাজং, খাসিয়া, পাংখোয়া ইত্যাদি জাতের সাথে আমাদের আচরণ কি আজও ন্যায় করছে? এটা আমার প্রশ্ন।

উল্লেখ্য, “Jai Bhim” হচ্ছে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত মুভি। যেট কথা বলছে সরকারের বিপক্ষে গিয়ে, পুলিশের গুন্ডাগিরি নিয়ে। সুপার কপ নিয়ে তো খুব সহজেই একটা মুভি নির্মাণ করা যায়, এতে সেন্সরশীপের ঝামেলা এড়ানো যায়। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ক’টা সিনেমা বানানো যায় বা তৈরি হচ্ছে?

চেহারায় মেক-আপ দিয়ে ভরপুর, যৌন উত্তেজক স্টেজ কাঁপানো ড্যান্স, হিরোর ধামাকাদার এন্ট্রি… সত্যি বলতে এসবের কিছুই নেই এই মুভিটিতে। কিন্তু সাসপেন্স, থ্রিলার, ভালো ও মন্দের লড়াই, সাহসী গল্প দিয়ে ভরপুর প্যাকেজ হচ্ছে এই “Jai Bhim” সিনেমা। মাত্র ১০ কোটি বাজেটের এই সিনেমা ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পেলেও দেশ ছেড়ে ভিনদেশেও নাম কুড়াচ্ছে। তাদেরকেও আয়না দেখাতে বাধ্য করছে। ইতোমধ্যেই হইচই ফেলে দিয়েছে দর্শকদের মধ্যে। আর দর্শকরাও রেটিং করছে সেরা সিনেমা হিসেবে।

আর যদি সাপোর্টিং ভূমিকার কথা বলি তাহলে এক কথায় বাজিমাত করে দিয়েছেন সবাই। বুঝবার উপায় নেই এখানে কেউ অভিনেতা বা অভিনেত্রী মাত্র। মনে হতে পারে চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে সত্যিকারের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। সুতরাং আর দেরী কীসের? অন্তত একবার দেখে নেওয়া যেতেই পারে সূর্য এর সিনেমা Jai Bhim!


- মেহেদি হাসান(Mehedi Hasan)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৭
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×