somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

ইন-গ্রুপ বনাম আউট-গ্রুপ বায়াস

২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(নোট: আজকের এই প্রবন্ধ লেখা হয়েছে রোল্ফ ডোবেলির লেখা বই ‘The Art of Thinking Clearly (2011)’ এর আলোকে। এছাড়াও সাহায্য নেওয়া হয়েছে স্প্যানিশ সিরিজ ‘Money Heist’ এর কোরিয়ান সংযোজন ‘Money Heist: Korea - Joint Economic Area’ এর)

আমরা গ্রুপ বা টিম কেন তৈরি করি? ছোটবেলায় খেলার সঙ্গী থেকে শুরু করে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, কর্মস্থলে সহকর্মী এবং সর্বশেষ পশ্চিম ও পূর্ব (বাংলা) পার্টিশন। এসবের বেশিরভাগ দায় ইতিহাস অনুযায়ী শ্বেতাঙ্গদের দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও পৃথিবীর বড় বড় দুই শক্তি ‘US’ এবং ‘USSR’ মিলে কেন আমাদেরকে পশ্চিম ও পূর্ব অথবা উত্তর ও দক্ষিণে বিভাজিত করে রেখেছে?

আবার পূর্ব বা পশ্চিমের মধ্যে নানান রকম বিভাজন দেখতে পাই। আর্থিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় আমাদের মতাদর্শের সাথে ছদ্মবেশি ধারণার মিল রেখে তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে হাজারো/লাখো ‘In-Group’ এবং ‘Out-Group’ বায়াস। আপনার ধর্ম ইসলাম অথবা সনাতন হতে পারে কিন্তু আপনি কতটা ধার্মিক সেটার উপর ভিত্তি করেও অদ্ভুত অদ্ভুত সব গ্রুপ তৈরি হচ্ছে।

আরো মজার বিষয় হচ্ছে, যে মেয়েরা হিজাব পরছেন এবং যে মেয়েরা হিজাব পরছেন না তারা কিন্তু স্পষ্টত আলাদা আলাদা গ্রুপে অবস্থান করছেন। পবিত্র আল-কোরআন শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ পবিত্র আল-কোরআন পাঠ করতে পারবেন। কিন্তু এখানে আবার আরো অদ্ভুত সব গ্রুপ আছে,

(ক) হাফেজ (যিনি পবিত্র আল-কোরআন পুরোটা মুখস্ত করেছেন।
(খ) মুফতি (ইসলামিক পণ্ডিত, যিনি ইসলামি আইনশাস্ত্রের বিশদ ব্যাখ্যা এবং ইসলামের আলোকে বিভিন্ন ফতোয়া প্রদান করেন।)
(গ ধর্ম সম্পর্কে আমরা যারা পড়াশোনা করি এবং নিজে থেকে কিছু জানার চেষ্টা করি।
(ঘ) যেসব মুসলিম শুধু নামাজ আদায়ের জন্য কিছু সূরাহ মুখস্ত করেছেন।

এছাড়াও যিনি পবিত্র আল-কোরআন জানেন কিন্তু নামাজ পড়েন না তিনি আবার কিন্তু ভিন্ন গ্রুপে চলে যাবেন। কি অদ্ভুত তাই না! কেন এমন ক্যাটেগরি বা গ্রুপ দিনদিন আমাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ কান্ড দেখুন! আমি এসব বিষয়ে মতামত জানাতে পর্যন্ত ভয় পাই। কারণ আপনি মতামত জানানো মাত্রই ‘In-Group/Out-Group’ বায়াসের মধ্যে পড়ে যাবেন। কিন্তু আমিও তো আল্লাহ্ কে মানি। আর ঐ পবিত্র আল-কোরআন আমারও, আর যাই হোক কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি/সম্পদ নয়।

কিন্তু যত সহজে আমি কথাগুলো বলছি তত সহজে এই কথাগুলো কিন্তু কিছু কিছু গ্রুপ নিতে পারবেন না। কিন্তু মতামত বা অভিযোগ করতে না পারার যে খারাপলাগা অথবা, “আমি মতামত/অভিযোগ জানানোর কেউ নই” – এমন অনুভূতির মধ্যে ফেলে দেওয়াটাকে বেশ অদ্ভুত লাগে। তাছাড়াও অভিযোগ মানে বিরাট ব্যাপার; আপনি মতামত জানানোর ফলে কোন গ্রুপে যে শামিল হয়ে গেলেন সেটা একমাত্র উপর আল্লাহ্ জানেন। ফলতঃ অনেক জ্ঞানী মানুষদের একটু বেশিই চুপ থাকতে দেখি।

আবার এই রমজান মাসে আমার হিন্দুধর্মের বন্ধু কেন এবং কোথায় খাবার খাবে? খাবার খেলেও কীভাবে খাবে? এবং এজন্য সে অপমানিত হবে কি হবে না সেটার দায়িত্ব আবার কোন কোন গ্রুপ নিলেন? অথবা, রমজান মাসে আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি এবং গরুর মাস খাবো কি খাবো না তাতে আমার হিন্দুধর্মের বন্ধুর কোনো মাথাব্যাথা নাই কিন্তু কর্তৃপক্ষের যে মোরাল পুলিসিং সেটাও একটি শাসকশ্রেণীর গ্রুপ হিসেবে চোখে রাঙানোর বিষয়টি ভারি অদ্ভুত। একই সাথে আমাদের মধ্যে এক ধরণের ইন-গ্রুপ এবং আউট-গ্রুপ বায়াসের জন্ম দেয়। ইনসিকিউরিটি বাড়তে থাকে।

এভাবে গ্রুপের পর গ্রুপ তৈয়ার হতেই আছে। আজ আপনাদের ইফতারি নিয়ে নোটিশ দেখে চোখ কপালে উঠে যায়। এমন চলতে থাকলে আমার ইফতারি তে আমার হিন্দুধর্মের বন্ধু বসতে শঙ্কায় ও সঙ্কোচে থাকে। সে অনুভব করতে শুরু করে আমি ইন-গ্রুপে পড়ছি না। সেক্ষেত্রে, ও কি ফের এসব ভুলে একসাথে আমার সাথে ইফতারি করবে? ওর দোষটা ঠিক কোথায়? আমি বলছি না যে, আমার ইফতারি তে হিন্দুধর্মের বন্ধুটি না বসলে আমার ইফতারি হবে না। ইফতারি হবে, কিন্তু যুগ যুগ ধরে যেটা জানলাম এবং কিছুটা দেখলাম, তার নাম কি সম্প্রীতি নয়! আচ্ছা, এই নতুন ‘সম্প্রীতি’ এর সংজ্ঞা কিছুটা কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে অতি উৎসাহিত হয়ে কোন গ্রুপ তৈয়ার করছেন? কেন করছেন? কি লাভ হচ্ছে বলুন তো? তারচেয়ে বড় কথা হলো, এই আপনাদের কোনো কাজ-কর্ম হাতে নাই! বেকার?

এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গালা নাইট (এটা কোন দেশের সংস্কৃতি?)’ কে ‘ওয়েস্টার্ণ ক্লাব’ বানিয়েছে। সেজন্য আবার পক্ষে বিপক্ষে ছাপাই গাইছে। সরি, আপনাদের এই উচ্চবিত্তদের কারবার তো আমি বুঝবো না। কিন্তু আপনাদের পক্ষে লেখার জন্য আমার কাছে একটা শব্দও নাই। এই ঘটনার কোনো জাস্টিফিকেশান অন্তত আমি দিতে পারছি না। আমার এই ব্যর্থতা মাফ করবেন। আমি এখনো অনেক সেকেলে এবং আমার মনে হয়, এ দেশ এখনো আপনাদের মত এত উন্নত সংস্কৃতি বহন করে না। শুভকামনা আপনাদের জন্য।

বিশ্বাস করুন, আমি যত বয়সে বেড়ে উঠছি তত এসব গ্রুপের সংখ্যা চোখের সামনে মনে হয় বেড়েই যাচ্ছে। এখন তো আমি আমার অস্তিত্ব সংকটে ভুগছি। আচ্ছা, এত এত গ্রুপের মধ্যে আমি ঠিক কোন গ্রুপে পড়ি? আমার ‘সেন্স অব বেলংগিং’ কোন গ্রুপের জন্য হওয়া উচিত?

ছবি: Bing Enterprise
Also Read It On: ইন-গ্রুপ বনাম আউট-গ্রুপ বায়াস
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×