somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তারের ওপর হামলাকারি নরপশুদের বিরুদ্ধে জেগে উঠুন

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম । ফেসবুকে কিংবা অনলাইন পত্রিকাগুলোয় ঢুঁ মারার সময় পাইনি । রাত ১ টায় যখন বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে নজর বুলাচ্ছি, তখনি চোখে পড়লো লোমহর্ষক খবরটা । সকালে উঠে খোজ নিলাম কুমিল্লা মেডিকেলে ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একজন ভাই লিখেছেন ,

‘ডাঃ শাহ আনিসুর রহমান রানা, চুপচাপ সাদাসিধে একজন মানুষ। অন্যান্য সব ইন্টার্ন ডাক্তার এর মত ৯৫০০ টাকা মাসিক বেতনে দিয়ে যাচ্ছিলেন দৈনিক ১৬ ঘন্টার ডিউটি। কিন্তু তাও বাধ সাধল।
নিত্যদিনের মতই মেডিসিন ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিলেন ভাইয়া। একজন রোগী এল ওয়ার্ডে ভর্তি নিয়ে, স্ট্রোকের পেশেন্ট, যথারীতি ফাইল ঠিক করে তাকে সীট দেয়া হল, তবে ফ্লোরে, এইতো আপনারা মানবতাবাদীরা চিত্কার শুরু করেন এবার, চিকিত্সকের অবহেলা ফ্লোরে রোগী. . .
এখন আপনারাই বলেন ৫০০ বেডের হাসপাতালে ৬৮০ জন রোগী ভর্তি হলে তো আপনাদের বাসায় রাখা যায়না, হাসপাতালেই রাখতে হবে। মজার ব্যাপার হলো রোগীর স্বজন ও ছেলে পাশের বেডের এক রোগীকে নামিয়ে দিয়ে তাকে বেডে উঠানোর দাবি জানায়। কি বুঝলেন? জেল যদি শ্বশুরবাড়ি হয় তাহলে হাসপাতালও মামাবাড়ি বলা যায়, নাকি ?
আবদারের এখানেই শেষ না, ওয়ার্ড ৫ তালায় আর CT scan নিচতলায়। CT scan তার জন্য ৫ তালায় আনা যাবে না কেন ইত্যাদি।
বেড দিতে অপারগতা জানানোয় স্যালাইন স্ট্যান্ড দিয়ে ভাইয়ার মাথায় আঘাত করা শুরু করে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে রেজিস্টার ডাঃ এনাম, ইন্টার্ন ডাঃ ফরহাদ, ডাঃ মিনহাজ সহ আটজন ভাইয়া আপু আহত হন। রানা ভাইয়ার মাথায় ১২টা সেলাই লেগেছে, তাত্ক্ষনিক CT scan report বলছে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মেডিকেলে ১১ টা সাবজেক্টের সাথে কমান্ডো ট্রেনিংটা থাকা উচিত কি বলেন ?


প্রথম আলোর খবরটাও পড়ুন –

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চিকিৎসকদের ওপর রোগীর স্বজনদের হামলা, আহত ৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা | তারিখ: ২৮-০৪-২০১২

« আগের সংবাদ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনের চিকিৎসা করাতে এসে চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনায় হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক শাহ আনিসুর রহমানসহ কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা মো. শাহজালাল ভূঁইয়া কাছ থেকে পাওয় তথ্য, মামলার এজাহার ও সরজমিনে জানা গেছে, আজ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা শহরের উত্তর চর্থা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল ইসলাম ওরফে বাবর তাঁর ভাই নাদের ইসলামকে (৪২) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। ওই সময়ে কর্তব্যরত ইন্টার্নি চিকিৎসক শাহ আনিসুর রহমান রোগী নাদের ইসলামকে হাসপাতালের পঞ্চম তলার মেডিসিন বিভাগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান। চিকিৎসক ওই সময়ে রোগীর সিটি স্ক্যান করতে হবে বলে তাঁর স্বজনদের জানান। ওবায়দুল সিটি স্ক্যান মেশিন হাসপাতালের নিচতলা থেকে উপরে নিয়ে আসার দাবি জানান। চিকিৎসক এতে অপারগতা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্যালাইনের স্ট্যান্ড, লোহার পাইপ ও মশারির স্ট্যান্ড দিয়ে চিকিৎসক শাহ আনিসুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এ সময় রোগীর অন্য স্বজনেরাও তাতে যোগ দেন। এতে আটজন আহত হন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসা প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় ঝামেলা হয়েছে।’
এই ঘটনার প্রতিবাদে ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নূর মোহাম্মদের কক্ষে পুলিশ প্রশাসন, বিএমএ, ইন্টার্নি চিকিত্সক ও অন্যান্য চিকিৎসকের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ, বিএমএ কুমিল্লা জেলার সভাপতি মো. শহীদউল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিনুজ্জামান চৌধুরী, ইন্টার্নি চিকিৎসক নাদিয়া আফরোজ ও মিনহাজ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার পরও ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা ওই ঘটনার বিচার দাবি করে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, কাল রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ এবং বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ও কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। আসামিদের বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ডাঃ রানা ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র । তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় । ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত নিরীহ, ভদ্র ও কোন সাতে পাঁচে না থাকা মানুষ ।
ঘটনার পর তাঁর বাস্তব উপলব্ধি হলো-
‘সন্ধায় দেখা করতে গিয়েছিলাম, কথা বলতে পারছিলেন, প্রচন্ড জ্বর। আস্তে আস্তে বললেন "বুঝলাম যে রোগীর আত্নীয়দের সাথে ভাল আচরণ করে কোন লাভ নাই বুঝলা, বরং খারাপ আচরণ করলে তুমিও বাঁচবা রোগীও বাঁচাতে পারবা"


সিটিস্ক্যান মেশিন উপরে তুলে আনতে হবে রোগীর জন্য !! এবং সেটা করতে হবে ডাক্তারকে !! আমাদের দেশে এখনো এমন বেকুব, গাধা, মুর্খ লোক আছে ! শুধু মুর্খ হলেও মানা যেত । কিন্তু এত হিংস্র হায়েনার দল । নরপশু । তারা আটজনকে পিটিয়ে আহত করলো !

এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন ডাক্তারদের ধর্মঘট চলছে । এই ধর্মঘটে আমাদের পুর্ন সমর্থন থাকবে । এটা চলতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক ও কঠিন শাস্তি নিশ্চিত না হয় । অনেকে হয়তো বলবেন এতে সাধারণ জনগনের কষ্ট হচ্ছে, তাঁদের কী দোষ ? তাঁদের জন্য বলছি, ডাক্তারদের চেয়ে সাধারণ জনগনের কাছাকাছি কেউ নেই, জনগনের দুঃখ কষ্ট ডাক্তাররা হৃদয়ে উপলব্ধি করে । কিন্তু এই যদি হয় ‘জনগনের’ কাণ্ডজ্ঞান এবং কর্ম তাহলে নিরাপত্তার দাবিতে এই মিনিমাম প্রতিবাদ টুকু না করে উপায় নেই । এখন জনগনেরই দায়িত্ব ওই কুলাঙ্গার গুলোকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া । অন্যথায় ‘জনগন’ এর দুঃখ-কষ্টের জিগির তোলার অধিকার আপনার নেই ।
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×