মার্কিন কংগ্রেসে দ্বিতীয় মুসলিম কংগ্রেসম্যান আন্দ্রে কারসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতান্ত্রিক দেশ। এদেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং রাজনীতি বিমুখ না হয়ে মুসলিম আমেরিকান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে। কংগ্রেস, সিনেট থেকে শুরু করে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মুসলিম প্রতিনিধি নির্বাচনে তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মুসলমান বাস করলেও বিশাল এই শহরে কোনো পর্যায়েই কোনো মুসলিম প্রতিনিধি নেই। এটা দুঃখজনক। কিন্তু এর কারণ আমরা নিজেরাই, আমরা নিজেদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখি।
রোববার রাতে নিউ ইয়র্ক’র লাগর্ডিয়ায় এক রেস্টুরেন্টে অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকান বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড প্রফেশনালস’র পক্ষ থেকে ইন্ডিয়ানা রাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান কারসনের সম্মানে আয়োজিত এক নৈশভোজে বক্তব্য দানকালে তিনি একথা কলেন।
কংগ্রেসম্যান কারসন বলেন, “৯/১১ এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই ঘটনার পর অনেকদিন পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য প্রকাশ্যে সালাম উচ্চারণ করাও কঠিন ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও এদেশে এখনো মুসলমানরা গোয়েন্দাদের সন্দেহের বাইরে নয়। তারা এখনো মসজিদে তল্লাশি চালায়।”
অ্যান্ড্রু কারসন আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনগোষ্ঠী ইতিবাচক অবদান রাখছে সব ক্ষেত্রে। তাদের এই স্বীকৃতি শুধুমাত্র এদেশে ভালোভাবে জীবন কাটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। রাজনীতির মূলধারায় তাদের অবশ্যই তৎপর হতে হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রে যারা ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টি করছে, তাদের অপপ্রচার চলতেই থাকবে। পাশাপাশি মুসলিম জনগোষ্ঠী যে কোনো দেশেরই হোক না কেন তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রজাতন্ত্র. রাজতন্ত্র নয়। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এদেশের নাগরিক সব মুসলিমকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অধিক হারে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করি যে আগামী ডেমোক্রেটিক কনভেনশনে আরো বেশি সংখ্যক মুসলিম প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এর পাশাপাশি মুসলিম পেশাজীবীরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এদেশের শিক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করা উচিত।
কংগ্রেসম্যান বলেন, “মুসলমরা যুক্তরাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের যেকোনো অংশ থেকেই তারা এসে থাকুক না কেন, এ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে তারা যে অবদান রাখছে তা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্রে অসংখ্য মুসলিম ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী এমনকি বিচারক পর্যন্ত রয়েছেন। সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। কাজেই তাদের বাদ দিয়ে বা তাদের অনুকূলে নয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। মুসলমানরা এখন নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক হয়ে উঠেছে। এ জন্য প্রয়োজন তাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়াও তৎপর হয়ে ওঠা।
তিনি বলেন, “আমরা আরব স্প্রিংয়ে দেখছি কিভাবে মিশর, ইয়েমেন, লিবিয়া, সিরিয়ার মানুষ অপশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে। কিন্তু আমরা এখন আমেরিকান স্প্রিংয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করছি ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’র আদলে। যুক্তরাষ্ট্রও জেগে উঠছে। ধনবাদের বিরুদ্ধে এ আন্দোলনকে এখন আবেগের প্রকাশ বলে মনে করা হলেও এটি ছড়িয়ে পড়বে তৃণমূল পর্যায়ে এবং সুফল অবশ্যই পাওয়া যাবে।
অ্যান্ড্রু কারসন আশাবাদ জানিয়ে বলেন, “২০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। এখন কংগ্রেসে আমরা মাত্র দু’জন মুসলিম আছি। আমরা মুসলিম হিসেবে যে কংগ্রেসে সার্ভ করছি, এজন্য আমরা গর্বিত। বিশ বছর পর সে সংখ্যা আরো বাড়বে। মুসলিম সিনেটর থাকবেন, মুসলিম মেয়র থাকবেন, মুসলিম সিটি কাউন্সিলম্যান থাকবেন। এই লক্ষে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। মুসলিম ইস্যুগুলো যাতে অবশ্যই ইসলামী আদলে হয় এবং সবাই সেভাবে বুঝতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্মই ওবামা, হিলারি হিসেবে এই জাতির নেতৃত্বে আসবেন, এটি দুরাশা নয়।”
লিঙ্ক

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




