somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তমনা ব্লগার
আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

নিলয় হত্যাকাণ্ডের দুই বছর

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ, বিশেষত দেশের ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল অংশ, দুটি অত্যন্ত নৃশংস ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠন, যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা (এআইকিউএস) এবং ইসলামী রাষ্ট্র (আইএস) দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। এই উভয় সংগঠনই সুন্নি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এবং তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ধরণের কৌশল অনুসরণ করে থাকে। আইএসকে একটি মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যারা আহমদীয়া, বিদেশী নাগরিক এবং অন্যান্য অমুসলিমকে অমানবিকভাবে আক্রমণ করে এবং হত্যা করে। আল-কায়েদা অন্যদিকে নিজেদেরকে তৃণমূল আন্দোলন বলে মনে করে এবং তারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, নাস্তিকতা বা কোন প্রগতিশীল মূল্যবোধ উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ চালিয়ে থাকে। আল কায়েদা এদেশের প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে সুন্নি জনগোষ্ঠীর মানসপটে প্রভাব সৃষ্টি করতে চায় যারা তাদের পাশে থাকবে।

২০১২ সাল থেকে, আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (এআইকিউএস) বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী আন্দোলনের নেতাদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা কেবল ব্যক্তিটিকে নীরব করে নয় বরং তার প্লাটফর্মটি সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব তৈরি করেছে। এ প্রক্রিয়ায়, তারা বাংলাদেশী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন এবং তাদের কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন লাভের আশা করে।

নিলয় নীল চ্যাটার্জী যুক্তি, বিজ্ঞান ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রচারের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি নাস্তিকতা, নারীবাদ, মানবতাবাদ এবং ধর্মের বিভিন্ন প্রতিহিংসামূলক দিসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখতেন। তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ করতেন এবং ছদ্ম-বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। উপরন্তু, তিনি সহযোদ্ধাদের সাথে মিলে প্রগতিশীল চিন্তাধারা প্রসারে করতে একটি প্রকাশনা সংস্থা গঠন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশের প্রগতিশীল ধারার সদস্য ছিলেন। নিলয়ের আগে ও পরে একই আদর্শে উদ্ধুব্ধ অনেকে এর আগে প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন। – রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, জুলহজ মান্নান, মাহবুব তনয়, ফয়সাল আরেফিন দীপন, নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং আরো অনেকে।। নিলয়ও এদের কাতারে যোগ দেন যখন ৭ আগস্ট, ২০১৫ সালে নিজ বাসায় জীবনসঙ্গিনীর সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।


তাঁর মৃত্যুর আগে নিলয় পুলিশের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন, তিনি তাঁর অনুসরণকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ শুধু তার অভিযোগ নিবন্ধন করতে অস্বীকার করেই নি, একই সাথে তাকে দেশ ছাড়ারও পরামর্শ দেয়। নাস্তিক লেখক এবং ব্লগারদের হত্যার কথা উপেক্ষা করা সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কৌশল ছিল। আমাদের ধারণা ধর্মান্ধ এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ভয়ে ভীত হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র এবিষয়ে নীরবতা পালন করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ বরং হত্যাকাণ্ডের উসকানি দিয়েছে নাস্তিকদের রচনাগুলি পর্নোগ্রাফি হিসেবে তুলনা করে এবং ঘোষণা করে যে নাস্তিকরা নিজেদের উপর এই বিপদ টেনে এনেছে। নিলয় মারা গেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক একটি সংবাদ সম্মেলন করেন এবং ব্লগারকে সীমা অতিক্রম না করার জন্য বলেন।

দুর্ভাগ্যবশত, আনসার বাংলার মতো গোষ্ঠীগুলো এখন সব সীমা অতিক্রম করছে। এর পেছনে রাষ্ট্রযন্ত্রের নৈতিক সমর্থনও প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। জঙ্গিরা নিলয় নীলের মত মানুষকে একের পর এক হত্যা করে এবং প্রতিবারই বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে যে, এই লেখক ও কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের খুনের জন্য দায়ী।

আজ অবধি রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ড বাদে আর কোন হত্যাকাণ্ডেরই রায় হয়নি। নিলয় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশের গালিফতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আজ অবধি তারা আদালত থেকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ২৩ বার সময় নিয়েছে। সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আগামী ১৭ই সেপ্টেম্বর। বাকি মামলাগুলোর অনেকগুলোতে আবার আসামী ধরা পড়েনি, কিংবা সনাক্ত হয়নি। অভিজিৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী পুলিশের সাথে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। অনন্ত বিজয় মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামীদের দুজন উচ্চ-আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়, পরে তাদের পৃথক মামলায় আটক করা হয়। জুলহাজ-তনয় হত্যাকারীদের আজ অবধি সনাক্ত করা যায়নি।

ঢাকার হোলি আর্টসান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে বিগত ১ জুলাই আইএস দ্বারা পরিচালিত জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ সরকার ঘুম থেকে জেগে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিলয় হত্যাকাণ্ডে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। যদি বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে সাহস না পান, তবে আমরা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল শক্তি নিজেরাই আমাদের নিহত সহযোদ্ধাদের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে আমৃত্যু কাজ করে যাবো।

নিলয় মারা গেছে, কিন্তু হাজারো নিলয় এখনো বেঁচে আছে । বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিজের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও মানবিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য একদিন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে রয়েছি যেখানে ধর্মান্ধতার কোপানলে অনেক তাজা প্রাণ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জ্ঞান ও যুক্তির আলোকে আমরা আবারো বিজয় ছিনিয়ে আনব। হাজারো চাপাতির আঘাতেও নিলয়ের উচ্চারিত একটি শব্দকেও স্তব্ধ করা যাবে না
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:২৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×