somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তমনা ব্লগার
কেহ বিশ্বাস করে, কেহ করে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর। ধর্মান্ধতা নিপাত যাক, মুক্তচিন্তা মুক্তি পাক।

মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির ইতিহাস

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যারা স্বাধীনতার পরে, মুক্তিযুদ্ধের প্রামান্য ইতিহাস তৈরী করার চেষ্টা করে নি বহুদিন। আমরা ভারতীয়রা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানি না-এটা যদি লজ্জার হয়-তাহলে ভাবুন ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, সরকারি ভাবে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা প্রায় বন্ধ ছিল-যা চলত তাও সরকারি ভাবে বিকৃত। বাংলাদেশে যারা বড় হয়েছে ঐ সময়টাতে, তারাও জানেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। কারন সরকারি বইগুলো এমন ভাবে লেখা হত, যাতে শেখ মুজিবর রহমান, আওয়ামী লীগের ভূমিকা এবং ভারতের মিলিটারি ও ইন্দিরা ভূমিকা সম্পূর্ন অজ্ঞাত থাকে।

আমি মাস খানেক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অবদান নিয়ে একটা পোষ্ট দিই। বিষয়টা এই, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অতি সক্রিয় ছিলেন। এতটাই যে আমেরিকার নির্দেশে সৌদি আরব, জর্ডন এবং ইরান পাকিস্তানকে ফাইটার প্লেন দিয়ে সাহায্য করছিল- ইরান ত তার বিমান ঘাঁটিও ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। শুধু তাই না নিক্সন চিনকে সঙ্গে নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ানের ওপরে চাপ সৃষ্টি করেন জাতি সঙ্ঘে-তাতে কাজ না হলে ইন্দিরাকে ফোন, ফ্যাক্স হুমকি কিছুই বাকী রাখেন নি। একসময় সোভিয়েত ও ভারতে জানিয়ে দেয়, আমেরিকা ভারত আক্রমন করবে বাংলাদেশ ইস্যুতে । তবে তারাও নৌবহর পাঠাচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধী জেনারেল ম্যকেনশকে প্রশ্ন পর্যন্ত করেছিলেন আমেরিকা আক্রমন করলে কি হবে? ম্যাকেনশর উত্তর ছিল, তার আগেই বাংলাদেশ মুক্ত হবে। চীন এবং আমেরিকার সাঁড়াশি আক্রমনের মুখে নার্ভ ঠিক রেখে ইন্দিরা গান্ধী গোটা পৃথিবী চষে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের সমর্থনে। জানাচ্ছিলেন কিভাবে খুন ধর্ষন এবং জেনোসাইড চালাচ্ছে খান সেনারা। ইউ টিউবে তার অসংখ্য ইন্টারভিঊ পাওয়া যাবে কখনো বিবিসি, কখনো ফরাসী টেলিভিশনকে দেওয়া ( যা ফ্রেঞ্চেই দিয়েছিলেন ইন্দিরা) । পুরো ব্যপারটা পড়ার পরে আমার মনে হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী না থাকলে বাংলাদেশের রক্তক্ষয় হত আরো বেশী- হয়ত বাংলাদেশ স্বাধীন হত-কিন্ত রক্ত ঝড়ত আরো আরো অনেক। শেখ মুজিব যদি জাতির পিতা, ইন্দিরাকে বাংলাদেশ নামক জাতির মাতা বললে ভুল হবে না। এটা শুনে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আমাকে জানালেন, আমি নাকি ইতিহাস ফ্যাব্রিকেট করছি বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধকে ছোট করার জন্য! আসল সত্যটা হচ্ছে এই-এরা সেই ১৯৭৫-৯৬ এর বাংলাদেশের প্রোডাক্ট। যেখানে আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব, ইন্দিরা, ইন্ডিয়া সব কিছুই অস্বিকার করা হত।

১৯৮৫ সালের একটা ঘটনা বলি। তখন রাজশাহী রিলে স্টেশনের দৌলতে মুর্শিদাবাদ নদীয়াতে বাংলাদেশের সরকারি টিভি চ্যানেলের সব অনুষ্ঠান আমরা দেখতে পেতাম। ১৬ ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসে ভারতের দূরদর্শনে এমনিতেই অনেক কিছু হয়। আমাদের আশা ছিল বাংলাদেশে দূরদর্শনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারী দেখাবে। করিমপুরের মতন ভারতের এক প্রান্তিক মফঃশহরে টিভি তখন সবে এসেছে। পাড়ার বয়স্ক লোকেরা একাত্তর নিয়ে অনেক কিছু জানতেন। কারন একাত্তরের যুদ্ধে গোটা করিমপুরেই আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় চার লাখের বেশী শরনার্থী। অনেক আশা নিয়ে ১৬ ই ডিসেম্বর তারা বাংলাদেশ টিভির সামনে বসেছিলেন।

অহ-কোথায় কি। টিভিতে দেখায় শুধু জেনারেল এরশাদের কবিতা। বাংলাদেশে তখন এরশাদের ডিক্টেটরশিপ। এই এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাও নন। একাত্তরের যুদ্ধে তার পোস্টিং ছিল পাকিস্তানে। ফলে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৭৩ সালে সিমলা যুক্তির জন্য মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাকে মিলিটারীতে উচ্চ পজিশনে পুনঃবাসন দেন শেখ মুজিব নিজে।

অথচ এই এরশাদ মালটা নিজের ডিক্টেটরশিপের সময়,এই ১৬ ই আগস্ট বিজয় দিবসে টিভিতে শুধু কবিতা চালাত-সাথে যুদ্ধের ফটো ভিডিও। দেখে মনে হতে পারে জাস্ট এরশাদের শব্দের জোরে স্বাধীনতা এসেছে। ব্যাচারা কিই বা আর করবে! কারন ওই দিন ইতিহাস ঘাঁটলে গেলে দেখা যেত, এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাই না! কে আর টিভিতে নিজের প্যান্ট খোলে! না ওই সময় বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধের চর্চা প্রায় নিশিদ্ধই ছিল। শুধু তাই না। যদিও বা কখনো সখনো মুক্তযুদ্ধের সিনেমা আসত বাংলাদেশ টিভিতে- সেখানে সিনেমার চরিত্ররা যদি কখনো সখনো মুজিবের নাম মুখে আনতেন, সেখানে অডিও সাইলেন্স করা হত। এই সময়টাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস মোছার সব চেষ্টা হয়েছে যঘন্য ভাবে।

এটা এখন কিছুটা বদলেছে। শেখা হাসিনার শাসনকালে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আবার ফেরানো হয়। অনেক ব্লগার ইতিহাস রক্ষায় সচেতন হয়ে অনেক নতুন দলিল তৈরী করেছেন। ফলে এখন গুগল করলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কিছুই আমরা জানছি।

আমি অবশ্য বই এর অভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে জেনেছি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকেই। আমেরিকাতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অভিবাসন নিয়েছেন। তাদের সাথেই নানান পার্টিতে গল্প করে জেনেছি কিভাবে তারা জেলে সেজে নৌকা নিয়ে রেইড করতেন -কিভাবে থানা রেইড হত। খান সেনারা ভয়ে সেনা ছাউনির বাইরে ট্যাঙ্ক ছাড়া বেড়ত না। এত বীরত্ব এবং আত্মহুতির গল্প আমি নিজেই জানি সেগুলো লিখলে ডজন খানেক সিনেমার স্ক্রিপ্ট তৈরী। আমার ধারনা, মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাগুলো যদি সেলুলয়েডে বন্দি করার চেষ্টা হয়- অন্তত দুশো সিনেমা নেমে যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এখনো হলিউড ফি বছর তিনটে চারটে সিনেমা নামাচ্ছে। কিন্ত বাংলাদেশে কালে ভদ্রে একটা আধটা সিনেমা নামে মুক্তি যুদ্ধের ওপরে। আমার কোন সন্দেহই নেই মুক্তিযুদ্ধই বাঙালীর ইতিহাসের সব থেকে গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তযুদ্ধে ঘটনা সিনেমা বন্দী না করলে, আবার এরেকটা এরশাদ আসবে না কে বলতে পারে?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৬:১২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×