somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফগান মাটিতে এক সপ্তাহ-প্রথম কিস্তি

২২ শে জুলাই, ২০০৮ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(গত বছর আফগানিস্তানে যাবার সুযোগ হয়েছিল। অফিসিয়াল কারণে। অনেক দিন ধরে ভাবছি আফগান ভ্রমণের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি। সে প্রয়াসে আজ প্রথম কিস্তি.....)
প্রথমা
আফগান মানবজমিন সম্পর্কে আমার প্রথম সবক সেই শৈশবে। যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। যতটুক মনে পড়ে ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনের বাংলা বইতে সৈয়দ মুজতবা আলীর আত্ম-জীবনী নির্ভর একটি লেখা পাঠ্য ছিল। ইনহাস্ত ওয়াতানাম। এই তো আমার স্বদেশ। সৈয়দ মুজতবা আলী এক সময় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। আব্দুর রহমান নামের এক আফগান যুবক তার রান্ন-বান্নার দায়িত্বে ছিল। আবদুর রহমানের সাথে তাঁর দীর্ঘ ঘনিষ্ট অভিজ্ঞাগুলোকে গভীর রসবোধের সাথে উপাস্থাপন এবং সে বর্ণনার পরতে পরতে গভীর দেশপ্রেমের অনুভূতি লেখক এতটা সুন্দরভাবে উপজীব্য আর প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন যে সে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আবদুর রহমান ও তার দেশ আফগানিস্তান অনেক দিন আমাদের স্মৃতিতে অটুট ছিল। বলা যায় এখনও আছে।
আফগানিস্তান নাম টি মনে থাকা ও মনে রাখার দ্বিতীয় কারণটি বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। সবাই জানে। এবং সে জানাটা ভয় ও আতংকের। গত শতাব্দীর আশির দশক বিশেষ করে নব্বই পরবর্তী সময় থেকে অধ্যাবধি চলমান ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলোই সারা পৃথিবীর মিডিয়াতে আফগানিস্তান এর যে ইমেজ তৈরি করেছে তাতে সব বয়সের মানুষের কাছেই আফগান নামটি বহুল পরিচিত। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অভুতপূর্ব বিকাশ এবং তাতে আমেরিকার এক চেটিয়া প্রভাবের জোরে পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক অভিধানে লাদেন-তালেবান এবং আফগানিস্তান সমর্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। এবার সে ভয়ানক ইমেজের আফগান মাটিতে বাংলাদেশ থেকে আমি যাচ্ছি। এক সপ্তাহের জন্য। ব্যাপারটি ভাবতেই সারা গায়ে যেন শিহরণের ঢেউ। আনন্দ, ভয় ও আতংকের উপস্থিতি সফর-প্রস্তুতি পর্বের ভাবনাগুলোতে টের পাচ্ছিলাম প্রতিদিন। বন্ধু-সহকর্মী এবং পরিবারের সদস্যদের বেশিরভাগই টিপ্পনী কাটছেন। কারণ, আমি, তাদের ভাষায়, লাদেন-তালেবানের দেশে যাচ্ছি। কেউ একবারও বলছে না যে, আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত লেখা 'ইনহাস্ত ওয়াতানামের' দেশে যাচ্ছি। সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত চরিত্র আব্দুর রহমানের দেশে যাচ্ছি.........
আফগান মাটিতে যাবার ব্যাপারে আমারও যে খুব আগ্রহ আছে তা নয়। এ আগ্রহ না থাকার প্রধান কারণ দু'টি। একটি হচ্ছে এখনও জীবনকে বোধ হয় খুব বেশি ভালবাসি। আরও কিছু দিন মানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাই। পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই। সুতরাং আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও সহিংসতা জনিত প্রতিদিন যে সব সংবাদ আমরা পাচ্ছিলাম তাতে আমার মতো জীবনকে ভালবাসার মানুষের আফগান মাটিতে পা রাখার ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাবার কোন কারণ নেই। আর দ্বিতীয় কারণ নিজের পার্সপোর্ট। বাজারে একটি কথা প্রচলিত আছে। পার্সপোটে নাকি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সিল থাকলে ভিসার বাজারে সে পার্সপোট মূল্য হারায়। সূত্র অনুযায়ী আমার পার্সপোর্ট ইতোপূর্বে একবার কলংকিত হয়েছে। কারণ আমার প্রথম বিদেশ সফর পাকিস্তান। সেটিও ছিল অফিসিয়াল। 'জেন্ডার ও উন্নয়ন' বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। আফগানিস্তানের যে বৈশ্বিক নেতিবাচক ইমেজ তাতে কে চাইবে তার পার্সপোর্টটি দ্বিতীয়বার একই দোষে অভিযুক্ত হোক। কিন্তু আমি নিরূপায়। অসহায়। কারণ এটিও অফিসিয়াল সফর। প্রকল্প সমন্বয়কারী হিসেবে আমার যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। অবশ্য অফিসিয়াল সফরের দেশ হিসেবে আমাদের জন্য তিনটি অপশন ছিল। পোলান্ড, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। আমার নিজের দুর্বলতা এবং আগ্রহ ছিল পোলান্ডের প্রতি। সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ। পথে রণে ভঙ্গ দিয়ে পুজিবাদের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ওখানে যেতে পারলে মানুষগুলোর সাথে আলাপ করা যাবে। তাদের অভিযোগ-অনুযোগগুলো জানা যাবে। তাদের অনুভূতি ও বস্তুগত অবস্থার একটা তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু বসের পছন্দ আফগানিস্তান। ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় সকল দেশেই তার চষে বেড়াবার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। আফগানিস্তানে গিয়েছেন এটি ফলাও করে বলতে পারবেন। সুতরাং এ মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজী নন। যথারীতি বস প্রকল্পের পার্টনার সংস্থাকে তার পছন্দ জানিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক কাগজ-পত্রে আফগান ভিজিট অবশ্য পালনীয় কার্যক্রম হিসেবে দাড়িয়েছে। ইয়েস বসের দেশে আমি নিতান্ত সেবা খাতের একজন শ্রমজীবী মানুষ। বসের ইচ্চের প্রতি গভীর ঐকমত প্রকাশ ছাড়া আমার জন্য আর কোন বিকল্প রইলো না। সুতরাং শত ভয়, শংকা, উৎকন্ঠা এবং আগ্রহ ও আনন্দের মিশেলে আফগান যাত্রার জন্যই তৈরি হতে থাকলাম................(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৫২
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×