somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অব্যক্ত ভালোবাসা-পর্ব-১১

১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশ হল থেকে হেটে হেটে নিয়মিত আজিমপুর কবরস্থান পার হয়ে একটু ভিতরের দিকে যায় একটা ছাত্রকে পড়ানোর উদ্দেশ্যে।মূল রাস্তার জ্যাম, শব্দ দূষন, বায়ু দূষন এড়ানোর জন্য সবুজে ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে আজিমপুর কলোনির ভিতর দিয়ে আকাশ ছাত্রের বাসায় আশা যাওয়া করে। এই আশা যাওয়া ইশরাতকে আকাশের সামনে এনে হাজির করে। অনেক দিনের কাঙ্খিত জিনিস আকাশের সামনে হাজির। অনেক সময় আরাধ্যের বস্তু সামনে আসলে মানুষ বাকরুদ্ধ হয়। তেমনি আকাশ অনেক সময় ইতস্তত হয়ে ইশরাত কে জিজ্ঞাসা করে, আরে ইশরাত তুমি এখানে? আকাশ অনেকদিন ধরেই তাকে কল্পনা করছিল, তাকে নিয়ে ভাবতেছিল, তাকে কিছু বলার জন্য খুঁজছিল, সে তার আশেপাশে থাকে এই তথ্যও তার নিকট ছিল। তারপও এমনভাবে জিজ্ঞাসা করলো যেন সে কিছুই জানে না। তাছাড়া আকাশ লাজুক স্বভাবের ছেলে। মেয়েদের সাথে কথা বলার পূর্বের কোন অভিজ্ঞাতা নেই। আকাশের এই ভাবলেশহীন কথা শুনে ইশরাত কিছুটা মুচকি হেসে জবাব দিল, ভাইয়া আমি এই পাশের কলেজে ভর্তি হয়েছি এবং কলোনির ভিতরে সাবলেট নিয়ে কয়েকজন মিলে থাকি। আকাশ বলে, বেশ ভালো। আমিতো তোমার পাশেই হলে থাকি। তাহলে মাঝে মাঝে দেখা হবে, কথা হবে। ইশরাত জানতে চায়, কি কথা? না মানে এমনি । তোমার কোন সহযোগিতা লাগলে আমাকে বলো। আজ তবে আসি বলে আকাশ হলের দিকে পা বাড়ালো। ইশরাত মুচকি হাসল (মনে মনে বলে আপনার সহযোগিতার দরকার নাই) এবং তার বান্ধবীদের সাথে নিয়ে কলোনির ভিতরের মাঠের চারিদিকে হাটতে লাগলো । আকাশ যাওয়ার পথে পিছনে ফিরে ইশরাতের গতিবিধি লক্ষ্য করলো এবং নিজেকে ধিক্কার দিলো যে একটা মেয়ে পটানোর মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না। যার জন্য নাওয়া খাওয়া ঘুম পড়া লেখা কিছুই ঠিকমতো হয় না। শয়নে স্বপনে যার কথা ভাবে আজ তাকে কাছে পেয়েও কিছু বলতে পারলো না। তাকে ইমপ্রেস করার মতো কোন অ্যাটিচুড দেখাতে পারলো না। বলতে পারলো না, অনেকদিন পড় তোমার সাথে দেখা চলো একসাথে কফি খাই বা চলো তোমাদের নিয়ে নাস্তা করি। চোর পালালে যেমন বুদ্ধি বাড়ে তেমনি ইশরাতের নিকট থেকে বিদায় নেয়ার পর আকাশের মাথায় নানান আইডিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে। ইশরাতের মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে তার নম্বরটা সেভ করে দিতে পারতো। অথবা তার বাসার ঠিকানা নিতে পারতো, নিজের হলের ঠিকানা দিতে পারতো। এসব কিছুই না করে এলোমেলো চিন্তা করতে করতে হলে ফিরে এলো।

রাতে ঠিক মতো ঘুম হলো না। আকাশের কখনোই ভালো ঘুম হয় না যাকে বলে সাউন্ড স্লিপ। দেশ ও দশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভাবনা পুরোনো অভ্যাস। দেশের ভবিষ্যত কি, দেশকে কিভাবে গঠন করা যায়, কিভাবে মায়ের মুখে হাসি ফুটানো যায়, কিভাবে পরিবারের জন্য ভালো কিছু করা যায় । এই ভাবনাগুলো মাথায় নিয়ে কারোরই সাউন্ড স্লিপ মানে ভালো ঘুম হওয়ার কথা নয়। তার শরীর অনেক হালকা/পাতলা হওয়ার কারন কি এই ঘুম না হওয়া না অন্য কোন কারন তা নিয়ে আকাশ মাথায় ঘামায়নি। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম যে স্বপ্নের সংজ্ঞা দিয়েছেন তার জন্যও আকাশের ঘুম হয় না। তিনি বলেছেন,“ আমরা ঘুমিয়ে যা দেখি তা স্বপ্ন নয়, যে ইচ্ছে পূরণের তাড়নায় ঘুম হয় না তাই স্বপ্ন”। আকাশেরও কিছু স্বপ্ন আছে মাকে নিয়ে পরিবারকে নিয়ে দেশকে নিয়ে। এতো স্বপ্ন পূরণের মধ্যে ইশরাতকে দেখার পড় তাকে নিয়ে দেখা পুরোনা স্বপ্ন মাথার ভিতর নতুন করে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে। মনের অজান্তে গেয়ে ওঠে “ আশা ছিল মনে মনে, প্রেম করিমু তোমার সনে। তোমায় নিয়া ঘর বান্ধিমু গহীন বালু চরে….”
আকাশ তার গ্রামের একজনের নিকট থেকে কৌশলে ইশরাতের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কিন্তু সরাসরি ফোন দিতে পারছে না । বিভিন্ন রকম হিসাব নিকাশ করে। কি মনে করবে, ফোন ধরবে তো, কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে, কি বলে কথা শুরু করবে? আকাশের আত্মসম্মান বোধ একটু বেশিই। যারা প্রেম করে তাদের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে হয় প্রেমিকাকে সন্তষ্ট করার জন্য। আবার নানা রকম মিথ্যা কথা/প্রশংসা করে প্রেমিকার মন জয় করতে হয়। আকাশ আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে প্রেম করতে চায় না সে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে প্রয়োজনে আরও অপেক্ষা করবে। অতপরঃ অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে ইশরাতের মন বুঝার চেষ্টা করে আকাশ। নিজের পরিচয় গোপন রেখে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু সফল হয় না। প্রথমত আকাশ বাকপটু নয় বা প্রেমের ভাষা জানে না। দ্বিতীয়ত ইশরাত আকাশের কন্ঠ চিনতে পারে যদিও এর আগে কখনো ফোনে ইশরাতের সাথে কথা হয় নি। বাস্তবেও তেমন কথা হয় নি। তারপরও আকাশের কন্ঠ চিনতে পারায় সামান্য ইতস্তত বোধ করে পরিচয় দেয় না কিন্তু ইশরাতকে আপন ভাবতে থাকে। হ্রদয়ের টান না থাকলে বা তার কথা না ভাবলে তার কণ্ঠ এতো দ্রুত চিনতে পারার কথা নয়। পাগলের সুখ মনে মনে। ফোন না করে মনে মনে ইশরাতকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে।

অনেকদিন ধরে ইশরাতের সাথে দেখাও নাই কথাও নাই কিন্তু আকাশের হ্রদয়ের মনিকোঠা থেকে তাকে সরাতে পারছে না। মেয়েদের নাকি ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বেশি কাজ করে। তবে ইশরাত কেন আকাশের মনোভাব বুঝতে পারে না। আকাশতো একেবারে অযোগ্য ছেলে নয়। পারিবারিক ঐতিহ্য ইশরাতের চেয়ে উপরেই বটে, ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় সুনাম আছে, পড়ালেখায়ও ভালো। তবে কেন ইশরাত একটু এগিয়ে আসতে পারে না। দেখা করতে পারে, ফোন দিতে পারে, বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা নিতে পারে আকাশের নিকট থেকে। প্রেম নাইবা করলো। বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক রাখতে তো পারে। ঢাকার শহরেতো আকাশ একটা সম্মানের সাথে অবস্থান করছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে আকাশের বেশ যোগাযোগ আছে, এলাকার এমপির সাথে সরাসরি সম্পর্ক, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি করার বদৌলতে সবার সাথে যোগোযোগটা অন্যদের থেকে বেশি। এর কোন কিছুই ইশরাতের চোখে না পড়ায় আকাশ মনে মনে ইশরাতের প্রতি কিছুটা অসন্তষ্ট হয় এবং তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। মনে মনে গেয়ে ওঠে, “কেন তারে আমি এতো ভালোবাসলাম, হয়তো আমারই ভুল, পোড়াতে প্রেমেরই ভুল, কাঁটাগুলি গেঁথে নিলাম।”

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×