হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “আমি মনে করি ভয়ঙ্কর সব অপরাধে সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। এবং তা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের পথচলা শুরু হলো। এখন আর আমাদের গ্লানি, অপমান নিয়ে এগোতে হবে না।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে একাত্তরে সাঈদীকে পিরোজপুরের মানুষ চিনত ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে। যে ২০টি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে জানানো হয়।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, “যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়ে দেশের মানুষের মধ্যে যে হতাশা, ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, তাতে আমার মতো অনেকের মনেই শঙ্কা ছিল তাদের (জামায়াত-শিবিরের) তাণ্ডবের কারণে সাঈদীর রায়টা দেয়া যাচ্ছে না।
“তবে তরুণ প্রজন্ম গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে সারা দেশকে উজ্জীবিত করেছে। রায় পেয়েছে পুরো বাংলাদেশ। এখন আর রায় নিয়ে কারো মধ্যে বিন্দু মাত্র দ্বিধা থাকার কথা নয়।”
সাঈদীর বিরুদ্ধে ভয়ংকর সব অভিযোগের কথা তুলে ধরে এই শহীদ সন্তান বলেন, “সাঈদীর অপরাধের ব্যপ্তি চরমমাত্রায় ভয়ঙ্কর ছিল, যার নজির সারা বিশ্বেও নেই। নতুন প্রজন্ম ৭১ দেখেনি। আমরা দেখেছি। আমাদের চোখ দিয়ে তারা উপলব্ধি করেছে কী ভয়ঙ্কর ছিল এইসব রাকাজারদের কর্মকাণ্ড।”
একাত্তরে হত্যা করা হয়েছিল জাফর ইকবালের বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদকে।
সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা পাঁচ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পিরোজপুরের তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। এটা জানার পর তাকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয় সাঈদী। সাঈদী ও তাঁর সহযোগী শান্তিকমিটির সদস্য মন্নাফ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাসদস্যকে নিয়ে ৫ মে দুপুরে সামরিক যানে করে পিরোজপুর হাসপাতাল যান, যেখানে মিজানুর রহমান লুকিয়ে ছিলেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সাঈদীর দলে একজন চিনিয়ে দিয়ে তাকে বলেশ্বর নদের তীরে নিয়ে যান। একই দিনে পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ (লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের বাবা) এবং ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাককেও কর্মস্থল থেকে ধরে সেখানে নিয়ে আসা হয়। খুনে বাহিনীর একজন সদস্য হিসাবে সাঈদীর উপস্থিতিতে এ তিন বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাকে গুলি করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেওয়া হয়।
সাঈদী সরাসরি এই তিন ব্যক্তির অপহরণ, হত্যায় অংশ নিয়েছিল বলে অভিযোগ আনা হলেও তা প্রমাণিত হয়নি।
এ বিষয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, “আমি মনে করি বিচারক আবেগের বশবর্তী হয়ে রায় দেননি। সেই সময় দেইল্লা রাজাকার এতোটা পরিচিত ছিলেন না, এখন যতোটা।আমিও তাকে চিনতাম না।”
২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর যুদ্ধাপরাধের মামলার তৃতীয় রায় ছিল সাঈদীর ফাঁসি।
এর আগে প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়।
আর একই ট্রাইব্যুনালে ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে তার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চলছে সারা দেশে।
Click This Link
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।